মেসিকে আনতে কত খরচ করেছে ভারত?
লিওনেল মেসির ভারত সফর শেষ হয়েছে মিশ্র এক অনুভূতি নিয়ে। একদিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে সামনে থেকে দেখার আনন্দ, অন্যদিকে চরম বিশৃঙ্খলা আর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ। সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লণ্ডভণ্ড পরিস্থিতির জেরে আয়োজক শতদ্রু দত্তকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময়েই বেরিয়ে এসেছে এই সফরের পেছনে খরচের বিশাল অঙ্ক।
তদন্তকারীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেসিকে ভারতে আনতে মোট ব্যয় হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। আর্জেন্টাইন মহাতারকার পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা আর সরকারি কর ১১ কোটি টাকা।
আয়োজক শতদ্রু দত্ত জানান, এই বিশাল খরচের মাত্র ৩০ শতাংশ এসেছে স্পনসরদের কাছ থেকে। বাকি ৩০ শতাংশ সংস্থান হয়েছে টিকিট বিক্রি ও স্পেশাল 'মিট অ্যান্ড গ্রিট' পাস থেকে। উল্লেখ্য, মেসির সঙ্গে ছবি তোলার একটি পাসের মূল্য ছিল ২৫ লাখ টাকা।
সফরের শুরু থেকেই বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিশেষ করে যুবভারতী স্টেডিয়ামের ভাঙচুর এবং নিরাপত্তা বলয় ভেঙে পড়ার কারণে কর্মসূচি কাটছাঁট করতে হয়। তদন্তে জানা গেছে, মেসি ভক্তদের অতিরিক্ত ভিড় এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে বিব্রতবোধ করেছিলেন।
সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ক্ষমতার দাপটে নিয়ম ভেঙে আত্মীয়স্বজনদের মেসির কাছে নিয়ে যান। এমনকি মেসির অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার কোমর জড়িয়ে ধরে ছবি তোলার বিষয়টি নিয়ে ফুটবল মহলে সমালোচনা হচ্ছে। এই বিতর্কের জেরে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অরূপ বিশ্বাসকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছালে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার করা হয় আয়োজক শতদ্রু দত্তকে। তিনি মেসির ব্যক্তিগত বিমানে উঠে হায়দরাবাদ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই পুলিশ তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে শতদ্রু স্বীকার করেছেন যে, মেসি কারো গায়ে হাত দেওয়া বা জড়িয়ে ধরা পছন্দ না করলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বিশ্বসেরা ফুটবলারকে এনেও এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ভারতের ক্রীড়া কূটনীতিতে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।