মস্কোয় গাড়িবোমা বিস্ফোরণ; রুশ জেনারেল নিহত
মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং ডিরেক্টরেটের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ প্রাণ হারিয়েছেন।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে দক্ষিণ মস্কোর ইয়াসেনেভায়া স্ট্রিটের একটি পার্কিং এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে জেনারেল সারভারভ তাঁর সাদা রঙের গাড়িতে ওঠার পরপরই নিচে পেতে রাখা একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গাড়িটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় জেনারেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘টাস’ জানিয়েছে, এই ঘটনায় ১০৫ নম্বর অনুচ্ছেদ (বিপজ্জনক পদ্ধতিতে হত্যাকাণ্ড) ও ২২২.১ অনুচ্ছেদ (অবৈধ বিস্ফোরক পাচার) অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির মুখপাত্র স্বেতলানা পেত্রেঙ্কো জানিয়েছেন, এই হামলার পেছনে ইউক্রেনীয় বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৯৬৯ সালে জন্ম নেওয়া ফানিল সারভারভ ছিলেন রুশ সামরিক বাহিনীর একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ জেনারেল। তিনি চেচেন যুদ্ধ এবং ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাতে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন।
বিশেষ করে ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কৌশলগত পরিকল্পনায় তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি রাশিয়ার জেনারেল স্টাফের অপারেশনাল ট্রেনিং ডিরেক্টরেটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে এটি প্রথম কোনো বড় মাপের হত্যাকাণ্ড নয়। এর আগেও একাধিক হাই-প্রোফাইল রুশ কর্মকর্তা হামলার শিকার হয়েছেন।
ডিসেম্বর ২০২৪: পারমাণবিক ও রাসায়নিক সুরক্ষা বাহিনীর প্রধান জেনারেল ইগর কিরিলভ স্কুটারে রাখা বোমায় নিহত হন।
নভেম্বর ২০২৪: নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ভ্যালেরি ট্রাঙ্কোভস্কি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন।
জুলাই ২০২৩: সাবমেরিন কমান্ডার স্তানিস্লাভ রঝিৎস্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২০২২: আলোচিত চিন্তাবিদ আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়ি বোমা হামলায় প্রাণ হারান।
মস্কোর মতো সুরক্ষিত স্থানে একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার এভাবে নিহত হওয়া রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার তদন্তে ইউক্রেনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে চলমান যুদ্ধ আরও জটিল ও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।