আমাদেরও একজন অকুতোভয় হাদী ছিল!
১৮ই ডিসেম্বরের সেই অভিশপ্ত বিষাদময় দুপুর, যখন সিঙ্গাপুরের তপ্ত আকাশটাও যেন এক লহমায় আর্তনাদ করে উঠেছিল। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সেই দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে যখন খবর এলো ওসমানের হৃৎস্পন্দন চিরতরে থেমে গেছে, তখন কেবল একটি প্রাণ প্রস্থান করেনি, বরং বাংলাদেশের চব্বিশের বিপ্লব পরবর্তী এক মহাকাব্যিক অধ্যায়ের বিষাদময় সমাপ্তি ঘটেছে। ওসমান হাদী—যিনি কেবল একটি নাম ছিলেন না, ছিলেন আমাদের জাতীয় বিবেকের এক অবিনাশী নক্ষত্র। আজ যখন আমরা তার নিথর দেহের কথা ভাবি, তখন মনে হয় যেন ১৬ কোটি মানুষের বুক থেকে এক বিশাল হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। ওসমানের সেই নিস্পন্দ চোখের পাতা আমাদের দিকে তাকিয়ে যেন এক বিরাট প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—আমরা কি তবে যোগ্য ছিলাম না তার এই অসীম ত্যাগের?
ওসমান হাদীর গল্পের শুরুটা ছিল ১৯৯৯ সালের ১৫ই মে, বাংলাদেশের পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত ও ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারে। তার শৈশব কেটেছে মফস্বল শহরের ধূলিকণা আর মেঠো পথের মায়ায়। তার পিতার নাম আলহাজ্ব মো. আব্দুল হাদী এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ শাহিদা বেগম। মেধাবী এই তরুণের শিক্ষাজীবনের শুরু স্থানীয় স্কুলেই, যেখানে তিনি প্রতিটি শ্রেণিতে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অভাবনীয় সাফল্যের পর তিনি পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। একজন প্রযুক্তিপ্রেমী হিসেবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ওসমান কেবল একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ওসমানের বেড়ে ওঠা আর মেধার বিচ্ছুরণ আমাদের এই বার্তাই দেয় যে, সত্যিকারের শিক্ষা মানুষকে কেবল ক্যারিয়ার গড়তে শেখায় না, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়াতে শেখায়।
২০২৪ সালের সেই উত্তাল জুলাইয়ের দিনগুলোতে যখন বাংলার প্রতিটি কোণ শোষকের বুলেটে প্রকম্পিত হচ্ছিল, ওসমান তখন নির্বাক দর্শক হয়ে থাকতে পারেননি। ১৮ই জুলাই, ২০২৪—দিনটি ইতিহাসের পাতায় কালো হরফে লেখা থাকবে। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল, ওসমান তখন সম্মুখসারিতে দাঁড়িয়ে সহযোদ্ধাদের রক্ষা করেছেন। ঠিক তখনই ঘাতকের নৃশংসতা সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। অত্যন্ত কাছ থেকে, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ওসমানের মাথায় লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। সেই ঘাতক বুলেট তার মস্তিষ্ক ও মাথার খুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়।
ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বুলেটের আঘাতের গতিবেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭০০ মিটার। এই প্রচণ্ড আঘাত আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে, ঘাতক কেবল ওসমানকে হত্যা করতে চায়নি, বরং তার ভেতরের জ্ঞান আর প্রতিবাদী মগজকে চিরতরে চূর্ণ করে দিতে চেয়েছিল।
ওসমান ছিলেন সেই বিরল ১% মানুষের একজন, যারা বাংলাদেশের ঘুণে ধরা সিস্টেমের প্রতিটি গলদ নখদর্পণে রাখতেন। তাকে এক বিশাল ‘কৌশলগত হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল কারণ তার কাছে ছিল গত দেড় দশকের দুর্নীতির পাহাড়সম ডিজিটাল তথ্য। তথ্য অধিকার আইনের বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, ওসমানের কাছে প্রায় ৫০০ জিবির বেশি দুর্নীতির ডিজিটাল প্রমাণাদি সংরক্ষিত ছিল। এই নথিপত্রগুলো আমাদের নির্দেশ করে যে, একটি রাষ্ট্র যখন সত্য বলা মেধাবীদের ভয় পেতে শুরু করে, তখন সেই রাষ্ট্রের ভিত্তি কতটা নড়বড়ে হয়ে যায়। ওসমানের মাথায় সরাসরি গুলি করা আসলে আমাদের পুরো প্রজন্মের মগজ আর চিন্তাশক্তিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার এক সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা।

ওসমানের ত্যাগ কেবল রাজপথের মিছিলে সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি ছিলেন আর্তমানবতার এক পরম আশ্রয়। ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় যখন ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অথৈ জলে ভাসছিল, তখন ওসমানের সাহসী নেতৃত্বে উদ্ধারকারী দল জীবন বাজি রেখে দুর্গম এলাকায় পৌঁছে দিয়েছিল ত্রাণ ও ওষুধ। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও বন্ধুদের সহায়তায় প্রায় ৪০টি সুনির্দিষ্ট মানবিক প্রজেক্ট পরিচালনা করতেন এবং ২৫টি জেলায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার ভার নিয়েছিলেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর ডাটা বলছে, তার প্রজেক্টগুলোর মাধ্যমে প্রায় ১২,০০০ শিশু সরাসরি উপকৃত হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যা আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে, ওসমানের হৃদয় কতটা বিশাল ছিল এবং তিনি কেবল পরিবর্তনের কথা বলতেন না, তা কাজে করে দেখাতেন।
তিনি স্বপ্ন দেখতেন এমন এক নির্বাচনের, যেখানে প্রার্থীরা টাকার জোরে নয়, বরং ভিশন আর স্বচ্ছতা নিয়ে জনগণের সামনে বিতর্কে বসবে। ওসমানের এই স্বপ্নের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী, যা সাধারণ মানুষের মনে রাজনৈতিক সচেতনতার এক নতুন জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। অথচ সেই স্বপ্নের কারিগরকেই মাথায় বুলেট বিদ্ধ করে নিস্তব্ধ করার চেষ্টা করা হলো। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ পাঁচ মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করার সময় তাকে ১১৫ ব্যাগ রক্ত ও প্লাজমা দিতে হয়েছিল। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, তার শরীরের হিমোগ্লোবিন লেভেল কয়েকবার ৩.৫-এ নেমে এসেছিল। এই সংখ্যাটি কেবল চিকিৎসার পরিসংখ্যান নয়, এটি প্রমাণ করে যে তাকে ধ্বংস করতে কতটা পৈশাচিকতা ব্যবহার করা হয়েছিল এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখতে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা কতটা অগাধ ছিল।
২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের এই কালপরিক্রমা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক চরম অগ্নিপরীক্ষার সময়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে নিহতের সংখ্যা ছিল ১,৫৮০ জনের বেশি এবং আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ৩১,০০০। কিন্তু সবচেয়ে মর্মান্তিক সত্য হলো, ২০২৫ সালের শেষভাগেও রাজনৈতিক সহিংসতার হার ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ওসমানের মতো মেধাবী তরুণদের অকাল প্রস্থান জাতির দীর্ঘমেয়াদী উন্নতির পথে এক বিশাল বাধা। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, গত এক বছরে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন প্রায় ৫,০০০ তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট। এই ডাটা আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে, বিপ্লব পরবর্তী সুফলগুলো এখনও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায়নি এবং শোষকের দোসররা এখনও ছদ্মবেশে সক্রিয়।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার শীতল সংখ্যাগুলোও আজ যেন কেঁপে ওঠে—তারা বলছে, এই মেধা পাচার আর অকাল প্রাণহানির সম্মিলিত ক্ষত দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে অন্তত ০.৫ শতাংশ পিছনে টেনে নিতে পারে। গত বছরের তুলনায় মেধা পাচারের হার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার তথ্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কী ভয়ংকর নীরব রক্তক্ষরণ ঘটছে এই ভূখণ্ডে। একটি ওসমানকে হারানো মানে শুধু একটি ঘরের প্রদীপ নিভে যাওয়া নয়; মানে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক মেরুদণ্ডে এক গভীর ফাটল, যার ব্যথা জাতি হিসেবে আমরা সবাই বহন করি। আজ যখন ওসমানের মা ছেলের কফিনবন্দি দেহটি গ্রহণ করবেন, তখন তার বুকফাটা আর্তনাদে হয়তো কাঁপবে বাংলার আকাশ, ভিজে উঠবে মাটির ধূলিকণাও—শোকের সেই শব্দ ঢেউ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। আর এ শোকই প্রতিবাদে রূপ নিচ্ছে; গত চব্বিশ ঘণ্টায় ওসমানের শাহাদাত নিয়ে জনমানুষের আগ্রহ ও অনুসন্ধান ২৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রমাণ করে—তার আদর্শ এখন নিভে যায়নি, বরং মানুষের হৃদয়ে আগ্নেয়গিরির মতো জেগে উঠছে, নীরব নয়, অপ্রতিরোধ্য।
ওসমান হাদীর এই মহাকাব্যিক আত্মোৎসর্গ আমাদের সামনে যে চরম সত্য উন্মোচিত করে, তা হলো—ক্ষুদ্র স্বার্থের কূপমণ্ডূকতা ও দলীয় অন্ধতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ নৈতিক আসনে প্রতিষ্ঠা করা। আজ যদি এই শিক্ষাকে কেবল আবেগের অর্ঘ্য না বানিয়ে কার্যকর বাস্তবতায় রূপ দিতে চাই, তবে সমাজকে অনিবার্যভাবে একটি নৈতিক রেখায় বিভক্ত করতে হবে—এক প্রান্তে সৎ মানুষের ইস্পাতদৃঢ় সংহতি, আর অন্য প্রান্তে চোরাকারবারি, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নির্দয় সামাজিক প্রত্যাখ্যান। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক সূচক আমাদের নির্মমভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া দুর্নীতির মূলে আঘাত হানা অসম্ভব। এই পরিসংখ্যান আসলে একটি নৈতিক আহ্বান—ওসমানের মতো বিপ্লবীদের রক্ত তখনই ইতিহাসে অর্থবহ হবে, যখন আমরা সাধারণ মানুষ নীরব দর্শক না থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক অদৃশ্য কিন্তু অটল সামাজিক প্রাচীর গড়ে তুলব।
দ্রুত ও অর্থবহ ফল অর্জন করতে হলে আমাদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রকে স্বচ্ছতার দীপ্ত আলোয় উন্মুক্ত করতে হবে, রাজনীতিকে পেশিশক্তি ও অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কালো ছায়া থেকে মুক্ত করতে হবে, এবং জনপ্রতিনিধিদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে এই জবাবদিহিতার মাত্রা অন্তত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। ওসমানের মস্তকে নেমে আসা সেই নির্মম আঘাত কেবল একজন তরুণের শরীরে সীমাবদ্ধ ছিল না—তা ছিল আমাদের সামষ্টিক বিবেকের ওপর নিক্ষিপ্ত এক প্রচণ্ড আঘাত। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হবে চিন্তার স্নায়ুকে জাগ্রত রাখা, বুদ্ধির দীপশিখা নিভতে না দেওয়া, এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা—এটাই ওসমানের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাঞ্জলি। ওসমানের আত্মোৎসর্গ তখনই ইতিহাসে সার্থকতা পাবে, যখন এই দেশের প্রতিটি নাগরিক নিজেকে দুর্নীতির কলুষ থেকে মুক্ত করবে এবং অন্যায়কে চোখের সামনে দেখেও নীরব দর্শক না থেকে সাহস সঞ্চয় করে রাজপথে নেমে আসবে।
সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের সেই নিথর দেহটি যখন প্রিয় মাতৃভূমির মাটিতে শেষবারের মতো নামবে, তখন হাজারো তরুণ ফুল নিয়ে তাকে বরণ করবে না, বরং তার রক্তের শপথ নেবে। ১৮ই ডিসেম্বর এখন থেকে আর ক্যালেন্ডারের সাধারণ কোনো তারিখ নয়, এটি ওসমানের সাহসিকতা আর ঘাতকের পরাজয়ের এক মহান স্মারক। তার রক্তে ভেজা রাজপথ আমাদের প্রতিনিয়ত তাড়িত করবে একটি বৈষম্যহীন আর সৎ মানুষের দেশ গড়ার লক্ষ্যে।

হে মৃত্যুঞ্জয়ী ওসমান, তুমি তো চলে যাওনি, বরং আমাদের প্রতিটি ভীরুতার বুকে এক একটি আগুনের গোলা গেঁথে দিয়ে গেছ; তোমার মাথা লক্ষ্য করে ছোঁড়া সেই বুলেট আজ আমাদের কোটি মগজে প্রতিবাদের বিদ্যুৎ হয়ে খেলছে, তোমার রক্তমাখা শার্ট আজ আমাদের নতুন মুক্তির পতাকা, যা যতক্ষণ এ দেশে অন্যায় থাকবে, ততক্ষণ প্রতিটি তরুণের রক্তে বিদ্রোহের দাবানল হয়ে জ্বলবে—ইনশাআল্লাহ, তোমার ওই স্বপ্নের স্বাধীন ও কলঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ আমরা ছিনিয়ে আনবই!
ওসমান হাদী মৃত্যুর পরও প্রমাণ করে গেলেন—একটি বুলেট একটি দেহকে স্তব্ধ করতে পারে, কিন্তু ন্যায়ভিত্তিক একটি আদর্শকে কখনোই হত্যা করতে পারে না। তার প্রস্থান আমাদের হৃদয়ে যে শূন্যতার গভীর খাদ সৃষ্টি করেছে, তা কোনো শব্দে, কোনো শোকানুষ্ঠানে, কোনো স্মৃতিফলকে পূর্ণ হওয়ার নয়। আজকের এই বিষণ্ন ১৮ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে এক মহাকাব্যিক আত্মোৎসর্গের দিন হিসেবে—যে দিন একজন তরুণ নিজের জীবন দিয়ে জাতির বিবেককে জাগিয়ে দিয়ে গেল।ওসমানের সেই প্রশান্ত হাসিমুখ, আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠস্বর আমাদের শিরায়-উপশিরায় চিরকাল সাহস সঞ্চার করবে।
তিনি নিজেই যেন তার বিশ্বাসের ভাষ্য রেখে গেছেন—‘আমি চাই, হৃদয়ে একটুকরো হাসি নিয়ে আমার আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে—এই বিশ্বাস নিয়ে যে আমি ইনসাফের পথেই অটল থেকেছি।’ এই বাক্যটি কেবল একটি উক্তি নয়; এটি একটি জীবনের সারাংশ, একটি মৃত্যুর দর্শন, এবং একটি জাতির জন্য রেখে যাওয়া নৈতিক দলিল।
আমরা কাঁদব না, ভাই; আমরা তোমার রক্তকে বৃথা যেতে দেব না। এই বাংলাদেশ তোমারই ছিল, তোমারই থাকবে—কারণ তুমি তাকে ভালোবেসেছ ন্যায়ের শর্তে, সুবিধার বিনিময়ে নয়। ১৮ মে ১৯৯৯ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫—এই সংক্ষিপ্ত সময়রেখা আসলে একটি অবিনাশী বিপ্লবের নাম, যেখানে জীবনের দৈর্ঘ্য নয়, আদর্শের গভীরতাই ইতিহাস রচনা করে।আজ ওসমানের কফিন কেবল একটি নিথর দেহ বহন করছে না; সে বহন করছে এক নতুন বাংলাদেশের দায়ভার, এক জাগ্রত বিবেকের অঙ্গীকার। তুমি ঘুমাও শান্তিতে, ওসমান—আমরা জেগে আছি, তোমার আদর্শের প্রহরী হয়ে, ইনসাফের পথ পাহারা দিতে।