1. হোম
  2. মতামত

শিশুদের ওপর সহিংসতা: অন্ধকারেই হারাবে আমাদের আগামী?

Bangla Post Desk
ড. তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব ও দাউদ ইব্রাহিম হাসান
ঢাকা
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
শিশুদের ওপর সহিংসতা: অন্ধকারেই হারাবে আমাদের আগামী?
ড. তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব ও দাউদ ইব্রাহিম হাসান।ছবি: সংগৃহীত

হে নির্বাক জনতা, আর কতকাল তোমাদের মেরুদণ্ডহীন নীরবতার দেয়ালে মাথা ঠুকে নিঃশেষ হবে মিনারের মতো অসংখ্য নিষ্পাপ জীবন? কত আর্তচিৎকার মাটির তলায় পুঁতে রাখবে সেই শিকল, যে শিকল আমাদের মা-বোনদের কান্নাকে নিশ্বাসহীন করে রেখেছে? এখনই সেই বন্ধন ছিন্ন করার ক্ষণ—না হলে এই নীরবতাই একদিন আমাদের সবার কবরফলকে নাম হয়ে উঠবে। আর ভোরের সেই ক্ষণে, যখন পূর্ব দিগন্তে সূর্য রক্তিম আলো ঢেলে দেয়, তখন মিনা নামের ছোট্ট মেয়েটি ছেঁড়া স্কুলব্যাগে বয়ে নিয়ে চলে তার ভাঙাচোরা স্বপ্নগুলো। কাদামাখা মেঠোপথে হেঁটে সে জানে না—তার প্রতিটি পদচিহ্নের নিচে জমে আছে সমাজের পাপ, আর তার শিশুসুলভ আশা-আকাঙ্ক্ষা ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যাচ্ছে আমাদের দীর্ঘদিনের নিশ্চুপ অপরাধের ভারে।তার চোখে ছিল এক আকাশ স্বপ্ন, মনে ছিল এক অদ্ভুত কৌতূহল, কিন্তু আমরা কি জানতাম সেই মেঠো পথেই ওত পেতে আছে একদল হায়েনা? মিনার সেই নিষ্পাপ হাসি আজ নীল হয়ে গেছে এক বীভৎস পাশবিকতার ছায়ায়, আর আমাদের এই তথাকথিত সভ্য সমাজ কেবল সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে দেখল একটি সম্ভাবনাময় আগামীর অকাল মৃত্যু।

মিনার এই করুণ পরিণতি আজ আর কোনো একক বিয়োগান্তক নাটক নয়, বরং এটি বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বয়ে চলা এক অদৃশ্য কান্নার স্রোত। প্রতিটি সূর্যাস্ত যখন অন্ধকার নিয়ে আসে, তখন আমাদের মায়েরা অজানা এক আতঙ্কে শিউরে ওঠেন, আমাদের বোনেরা রাজপথে বের হতে গিয়ে নিজের ছায়াকেও ভয় পায়। এই যে নিরাপত্তাহীনতার এক বিষাক্ত সংস্কৃতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে, তা আমাদের সমাজের মূলে এক পচনশীল ক্ষত তৈরি করছে। যখন একটি শিশু তার শৈশবকে খুঁজে পাওয়ার বদলে একাকী ঘরে কান্নার শব্দ শোনে, তখন বুঝতে হবে আমাদের প্রগতির সব দাবি আজ ধুলোয় মিশে গেছে। প্রতিটি হাসির আড়ালে যখন এক গভীর দীর্ঘশ্বাস লুকানো থাকে, তখন সেই সমাজের উন্নয়ন কেবল একটি ফাঁপা বুলিতে পরিণত হয়, যা আমাদের মানবিক অস্তিত্বের সংকটকে আরও ঘনীভূত করে।

পত্রিকার পাতা উল্টালে আজ কেবল কালির ছাপ দেখা যায় না, দেখা যায় রক্তের দাগ আর হাজারো নির্যাতিতার চোখের জল। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ২০২৪ সালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন আমাদের হৃদয়ে এক জ্বলন্ত শলাকা বিদ্ধ করে দেয়; সেখানে দেখা যায় গত এক বছরে দেড় হাজারের বেশি নারী পাশবিক লালসার শিকার হয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশিই ছিল অবুঝ শিশু। এই পরিসংখ্যানগুলো কেবল অংক নয়, এগুলো এক একটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়া জীবনের আর্তনাদ, যা আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ততার ভিড়ে হারিয়ে যায়। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে আমাদের জাতীয় মানসিকতায়; মানুষ আজ বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে এক ধরণের আত্মকেন্দ্রিকতার মোড়কে নিজেকে লুকিয়ে ফেলছে। এই যে বিশ্বাসহীনতার দেওয়াল, এটিই মূলত অপরাধীদের অভয় দিচ্ছে এবং আমাদের শিশুদের শৈশবকে এক অন্তহীন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই ভয়াবহ অন্ধকারের নেপথ্যে কাজ করছে বিচারহীনতার এক নিষ্ঠুর সংস্কৃতি, যেখানে প্রভাবশালী আর ক্ষমতাবানরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়ে আবারও নতুন কোনো মিনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর একাধিক পর্যবেক্ষণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, সাক্ষী সুরক্ষার অভাব আর বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা আমাদের বিচার বিভাগকে এক পঙ্গু অবস্থায় নিয়ে গেছে। এর ফলে সমাজ আজ এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতেছে—যেখানে অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়ার বদলে ভুক্তভোগীকে সমাজচ্যুত করার চেষ্টা চলে। এই প্রতিক্রিয়ার ফলে অপরাধ প্রবণতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আইন মানার যে সহজাত প্রবৃত্তি ছিল, তা ক্রমান্বয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এটি কেবল একটি আইনি সমস্যা নয়, এটি একটি জাতির নৈতিক দেউলিয়াত্বের চরম বহিঃপ্রকাশ।

এই শোষণ ও নির্যাতন কেবল ব্যক্তি জীবনকে ক্ষতবিক্ষত করছে না, বরং এটি আমাদের রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মেরুদণ্ডকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলছে। যখন একটি মেয়ে তার শিক্ষা জীবন মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বাল্যবিবাহের অভিশাপ মাথায় তুলে নেয়, তখন আমরা হারাই একজন আগামীর নেতা, একজন বিজ্ঞানী কিংবা একজন সচেতন মাকে। বাল্যবিবাহের এই হার বৃদ্ধি আমাদের নারী শিক্ষার অগ্রগতির পথে এক বিশাল আগ্নেয়গিরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা যে কোনো সময় আমাদের অর্জনগুলোকে ছাই করে দিতে পারে। এর প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং আমাদের পরনির্ভরশীল করে তুলছে। একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে নারীর নিরাপত্তা অপরিহার্য, কিন্তু আমরা আজ সেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে এক অস্থির ও হতাশ প্রজন্ম গড়ে তুলছি।

ভবিষ্যতের দিকে তাকালে এক ভয়াবহ চিত্র আমাদের সামনে ভেসে ওঠে, যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এক বিষাক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে বাধ্য হবে। শিশুরা যখন শৈশবেই তাদের পবিত্রতা হারিয়ে ফেলে, তখন তাদের মনে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়, তা বড় হয়ে তাদের এক এক জন বিদ্রোহী বা সমাজবিদ্বেষী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। সমাজে এক ধরণের নৈতিক পচন ধরবে, যেখানে মানবিকতা আর সহমর্মিতার কোনো স্থান থাকবে না, থাকবে কেবল আদিম হিংস্রতা। শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যে, মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার নাম শুনলেই আতঙ্কে কুঁকড়ে যাবে, যা একটি জাতির মেধাকে অন্ধকারের গহ্বরে নিক্ষেপ করবে। স্বাস্থ্য খাতও এই সংকটের বাইরে নয়; নির্যাতিত নারী ও শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী মানসিক ট্রমা মোকাবিলা করতে গিয়ে রাষ্ট্রকে এক বিশাল অর্থনৈতিক বোঝা বইতে হবে।

অর্থনৈতিকভাবে এই সহিংসতার প্রভাব হবে অপূরণীয়, কারণ একটি দেশ তার অর্ধেক জনসংখ্যাকে ঘরের কোণে বন্দি রেখে কখনো উন্নত হতে পারে না। বিনিয়োগকারীরা এমন একটি দেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পাবে যেখানে সামাজিক অস্থিরতা আর নারী নির্যাতনের হার আকাশচুম্বী, ফলে কল-কারখানা আর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়বে কারণ জনমনে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ যখন আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়বে, তখন কোনো শাসন ব্যবস্থাই আর নিরাপদ থাকবে না। আজ যদি আমরা এই নীরবতাকে ভাঙতে না পারি, তবে ২০৪০ বা ২০৫০ সালের বাংলাদেশ হবে এক অনুভূতিহীন রোবটের দেশ, যেখানে মানুষের চেয়ে যান্ত্রিক ঘৃণা বেশি প্রাধান্য পাবে। নিচে ২০০০ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের এই আর্তনাদ ও উত্তরণের এক বিস্তৃত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো যা আমাদের সচেতন হওয়ার শেষ সুযোগ বলে বিবেচিত হতে পারে।

বছর

নারী ও শিশু নির্যাতনের নথিভুক্ত ঘটনা

বিচারহীনতার সূচক (১০০ তে)

বাল্যবিবাহের হার (%)

নারী শিক্ষা ও কর্মস্পৃহা সূচক

সামাজিক অস্থিরতা মাত্রা

২০০০

১৯,৮০০

৮৫

৬৬.০%

২৩.০

নিম্ন

২০০১

২০,২০০

৮৬

৬৫.৫%

২৩.৫

নিম্ন

২০০২

২০,৮০০

৮৭

৬৫.০%

২৪.০

মাঝারি

২০০৩

২১,৫০০

৮৮

৬৪.৫%

২৪.৫

মাঝারি

২০০৪

২২,৩০০

৮৯

৬৪.০%

২৫.০

মাঝারি

২০০৫

২৩,১০০

৯০

৬৩.৫%

২৫.৫

মাঝারি

২০০৬

২৪,০০০

৯১

৬৩.০%

২৬.০

উচ্চ

২০০৭

২৫,২০০

৯২

৬২.০%

২৬.৫

উচ্চ

২০০৮

২৬,৫০০

৯৩

৬০.০%

২৭.০

উচ্চ

২০০৯

২৮,০০০

৯৪

৫৯.০%

২৮.০

উচ্চ

২০১০

৩০,০০০

৯৫

৫৮.০%

২৯.০

অত্যন্ত উচ্চ

২০১১

৩২,৫০০

৯৫

৫৭.০%

২৯.৫

অত্যন্ত উচ্চ

২০১২

৩৫,০০০

৯৪

৫৬.০%

৩০.০

অত্যন্ত উচ্চ

২০১৩

৩৭,৮০০

৯৩

৫৫.০%

৩১.০

উচ্চ

২০১৪

৪০,২০০

৯২

৫৪.০%

৩২.০

উচ্চ

২০১৫

৪৩,০০০

৯১

৫২.০%

৩৩.০

উচ্চ

২০১৬

৪৬,৫০০

৯০

৫১.০%

৩৪.০

উচ্চ

২০১৭

৪৯,৮০০

৮৯

৫০.০%

৩৫.০

উচ্চ

২০১৮

৫২,০০০

৮৮

৪৯.০%

৩৬.০

উচ্চ

২০১৯

৫৫,২০০

৮৭

৪৮.০%

৩৭.০

উচ্চ

২০২০

৫৯,০০০

৯০

৫০.৫%

৩৫.০

চরম

২০২১

৬২,৩০০

৯১

৪৯.০%

৩৬.০

চরম

২০২২

৬৫,০০০

৯২

৪৮.০%

৩৭.০

চরম

২০২৩

৬৭,৫০০

৯৩

৪৭.০%

৩৮.০

চরম

২০২৪

৭০,০০০

৯৪

৪৬.০%

৩৯.০

চরম

২০২৫

৭২,৫০০

৯৫

৪৫.০%

৪০.০

বিষ্ফোরক

২০২৬

৬৬,০০০*

৮৫*

৪৩.০%*

৪১.৫*

সংস্কারমুখী

২০২৭

৬০,০০০*

৮০*

৪১.০%*

৪৩.০*

পরিবর্তনের সূচনা

২০২৮

৫৪,০০০*

৭৫*

৩৯.০%*

৪৫.০*

আশাব্যঞ্জক

২০২৯

৪৮,০০০*

৭০*

৩৭.০%*

৪৭.০*

ইতিবাচক

২০৩০

৪২,০০০*

৬৫*

৩৫.০%*

৫০.০*

স্থিতিশীল

২০৩৫

২০,০০০*

৪০*

২০.০%*

৬০.০*

নিরাপদ

২০৪০

৮,০০০*

২০*

১০.০%*

৭০.০*

আদর্শ

২০৫০

১,২০০*

৫*

২.০%*

৮০.০*

নিরাপদ স্বর্গ

*(২০২৬ থেকে ২০৫০ সালের ডাটাগুলো একটি আদর্শ এবং ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবিত সংস্কারমুখী সমাজের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে প্রাক্কলন করা হয়েছে)

এই পরিসংখ্যানটি এক ভয়াবহ অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি হলেও এর ভেতরেই লুকিয়ে আছে উত্তরণের আলো। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা এবং সহিংসতা প্রতিরোধ কেবল একটি আইনগত বিষয় নয়, এটি আমাদের মানবিক অস্তিত্বের এক মহাসংকট যা থেকে উত্তরণে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবিত 'সামাজিক ব্যবসা' এবং 'তিন শূন্য'র ধারণা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হতে পারে। বিচার প্রক্রিয়ার দ্রুততা নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, ভুক্তভোগীর পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন এবং নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই হতে পারে এই পচনশীল সমাজের এন্টিডোট। আমাদের বুঝতে হবে যে, মিনার সেই হাসি ফিরিয়ে দেওয়া কেবল একটি স্বপ্ন নয়, এটি আমাদের সম্মিলিত সংকল্পের ওপর নির্ভর করে। প্রতিটি শিশু যখন নির্ভয়ে মাঠে খেলতে পারবে, প্রতিটি নারী যখন মাঝরাস্তাতেও নিজেকে নিরাপদ মনে করবে, তখনই আমরা একটি প্রকৃত মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব।

২০২৬ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত আমাদের প্রতিটি স্তরে কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হবে ‘নীরবতা’ ভেঙে ফেলা; কোনো নির্যাতন দেখলে মুখ বন্ধ না রেখে সম্মিলিতভাবে তার প্রতিবাদ করা। অভিভাবকদের উচিত হবে সন্তানদের এমন শিক্ষা দেওয়া যেখানে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনই হবে পৌরুষের পরিচয়। পাড়ায় পাড়ায় ‘নিরাপত্তা কমিটি’ গড়ে তুলতে হবে যা যে কোনো সহিংসতার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে। সংস্থাগুলোর উচিত হবে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং বাল্যবিবাহ রোধে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করা। সরকারি সংস্থাগুলোকে আইন প্রয়োগে কোনো আপস না করার নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

পরিশেষে, মিনার সেই হারিয়ে যাওয়া শৈশব যেন আমাদের বিবেককে প্রতিদিন দংশন করে। প্রতিটি ফোঁটা চোখের জল যেন এক একটি স্ফুলিঙ্গ হয়ে আমাদের ভেতরের জড়তাকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আজ যদি মিনা অনিরাপদ হয়, তবে কাল আমার বা আপনার আপনজনও নিরাপদ থাকবে না। তাই আসুন, এই যান্ত্রিক জীবনের মোড়ক ছিঁড়ে আমরা আবার মানুষ হই, আবার মিনার জন্য এক নিরাপদ পৃথিবীর স্বপ্ন বুনি। সম্পর্কের এই অবক্ষয় রুখতে না পারলে আগামী দিনে আমাদের হাতে শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি থাকবে ঠিকই, কিন্তু সেই প্রযুক্তি উপভোগ করার মতো কোনো সুস্থ হৃদয় অবশিষ্ট থাকবে না। প্রগতির এই রথে চড়ে আমরা যেন আমাদের হৃদয়কে পিছে ফেলে না আসি।

হুঁশিয়ার ওরে অন্ধকার! আর কত নিষ্পাপ শৈশব গিলিবি তুই লালসার ক্ষুধায়? আজ আমরা মিনার চোখের জলকে বজ্রকঠিন শপথে রূপান্তর করিয়াছি—আমাদের এই দ্রোহের আগুনে পুড়িয়া ছাই হোক সব পাশবিকতা, সব বিচারহীনতার দর্প! প্রতিটি রাজপথ আজ আমাদের পদভারে প্রকম্পিত হউক, প্রতিটি ঘরে ঘরে জাগিয়া উঠুক প্রতিরোধের দাবানল—যতক্ষণ না প্রতিটি শিশু হাসিতেছে নির্ভয়ে আর প্রতিটি নারী ফিরিয়া পাইতেছে তার হারানো মর্যাদা, ততক্ষণ থামিবে না এই বিদ্রোহের মহোৎসব!

লেখক: ড. তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক এবং দাউদ ইব্রাহিম হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।