1. হোম
  2. মতামত

ভূমি মন্ত্রাণালয়ের অব্যবস্থাপনায় নাগরিকের দুর্ভোগ

Bangla Post Desk
কাজী ইব্রাহিম সেলিম
প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১০ পিএম
ভূমি মন্ত্রাণালয়ের অব্যবস্থাপনায় নাগরিকের দুর্ভোগ
ছবি: সংগৃহীত

ভূমি মন্ত্রাণালয়ের অব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের দুর্ভোগ চরমে, যা মূলত দুর্নীতি, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, ডিজিটাল সেবার ত্রুটি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে হচ্ছে; এর ফলে নামজারি, খতিয়ান সংশোধন, জমি কেনাবেচা ও খাজনা পরিশোধে সাধারণ মানুষ পদে পদে হয়রানি, বিলম্ব এবং অর্থ অপচয়ের শিকার হচ্ছেন, যা জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে রাষ্ট্রের সেবামুখী ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।

ভূমির নামজারীর সার্ভারে (১) ওয়ারিশ সূত্রে, (২) খরিদা সূত্রে, (৩) আদালত সূত্রে, (৪) অন্যান্য সূত্রে, (৫) ওয়ারিশ ও আদালত সূত্রে, (৬) খরিদা ও আদালত সূত্রে, এসব অপশন গুলো থাকা দরকার। কিন্তু দরকারি অপশনগুলো সফটওয়্যারে না রেখে ভূমি মন্ত্রাণালয় শুধু ওয়ারিশ সূত্রে ও ক্রয় সূত্রে অপশন রেখে খামখেয়লিপনায় ভূমির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য নাগরিকদের দুর্ভোগ বাড়ছে, সেবাকর্মে বিঘ্নিত ঘঠছে, আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া অসংখ্য সেবাপ্রার্থীর নামজারী আটকা পড়েছে। ভূমির মালিকানায় দেশের প্রতিটি নাগরিকের নাম জড়িয়ে রয়েছে। কেউ ওয়ারিশ সূত্রে, কেউ খরিদা সূত্রে কবলামূলে ভূমির স্বত্ববান হয়ে থাকেন। এটিকে আরও পাকাপোক্ত করে তুলতে নাগরিকরা নামজারীর জন্য ভূমি অফিসে গিয়ে থাকেন। সরকারি কর-খাজানা দেওয়ার লক্ষ্যে নামজারী খতিয়ান করতে গেলে কোনো কোনো সেবাপ্রার্থীকে জজ কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ঘুরপাক করে আসতে হয়।

জানা যায়, বৈধ জায়গার নামজারী করতে ২০১০ ইং ভূমি অফিসে গেলে একজন সেবাপ্রার্থীকে দলিলপত্র ঠিকঠাক করে আনতে চট্টগ্রাম আদালতে যেতে বলা হয়। ওই সেবাপ্রার্থী বাদী হয়ে মামলা করলে আদালত ১২ বছরে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। নিষ্পত্তি হওয়া সে রায় নিয়ে নামজারী করতে ভূমি অফিসে গেলে তাকে ওই রায় এর সংবাদ আনতে ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টে পাঠান। সুপ্রিম কোর্টেও নানা অজুহাতে তিন বছর ধরে হয়রানি করা হলে ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি (তৎকালীন রেজিস্টার জেনারেল) আজিজ আহমদ ভূঁইয়া বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। সেজন্য, ওই কর্মকর্তা অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য ক্ষমা চান এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রায়ের সংবাদটি ভুক্তভোগীর হাতে দেন।

এভাবে ১৬ বছরেও নামজারী সম্পন্ন হয়নি, ফাইলটি ঝুলছে ভূমি অফিসে বিষয়টি ভুক্তভোগী চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনারকে বুঝিয়ে বললে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্লাবন কুমার বিশ্বাস অত্যন্ত ভালো মানুষ বিধায়, মানুষের কষ্ট দূর করতে সমস্যাটি সমাধানে একজন কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে ভুক্তভোগীর দলিলপত্র গুলো দ্রুত তদন্ত করার নির্দেশ দেন। ওই কর্মকর্তাও ভাল মানুষ বিধায় খতিয়ানগুলো দেখেন, ১৬-০২-১৯৬৮ ইং তারিখের কবলা থেকে ০৪-১১-১৯৭৩ ইং, ১৪-০২-১৯৭৬ ইং, ০১-০১-১৯৭৯ ইং, ১৪-১০-১৯৯৭ ইং তারিখের কবলায়, এভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় করে আসার পর ১০-৫-২০০০ ইং তারিখের রেজিস্ট্রিকৃত সাফ কবলা দলিলমূলে খরিদা সূত্রে সেবাপ্রার্থী স্বত্ববান হইয়াছে সেই দলিলসহ বায়য়া দলিলগুলো সহকারী কমিশনার বরাবর জমা করা হয়।

অপর আপীল মামলায় জেলা জজ আদালত, চট্টগ্রাম। এর আদেশনামায় উল্লেখ থাকে যে, সেবাপ্রার্থীর নামের কবলাতে নালিশী আর.এস. দাগের সামিল বি.এস দাগের উল্লেখ পরিলক্ষিত। একটি কবলার দলিলে খতিয়ান নম্বর উল্লেখ না থাকলে ও দাগ নম্বর উল্লেখ থাকলে তা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বিজ্ঞ নিম্ন

আদালত তা অনুধাবন করিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর.এস. দাগ এবং বি.এস দাগের সামিল উল্লেখ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে নিম্ন আদালত যে রায় প্রদান করেছেন তা হস্তক্ষেপ যোগ্য। উক্ত কারণে আপীল মঞ্জুর যোগ্য। ২১-০৯-২০১৭ খ্রি: প্রচরিত রায় রদ ও রহিত করা হলো। এভাবে ০৫-০৬-২০২২ ইং তারিখে উচ্চ আদালতের আদেশনামায় ৮ পৃষ্টায় লিপিবদ্ধকৃত, বিবেচ্য বিষয়টি বাদী আপীলকারীর অনুকূলে নিষ্পত্তি করা হইল। সে আদেশনামাও সহকারী কমিশনারের নিকট উপস্থাপন করা হয়। একটা জায়গার নামজারীর জন্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ও আদালতের আদেশ সব ঠিকঠাক মতো আছে তা দেখে ভূমি অফিস নামজারীর কাজটা সম্পন্ন করতে চাইলেও, আদালত সূত্রে অপশনটি না রাখার কারণে নামজারী আটকা পড়েছে। অথচ বাংলাদেশের নাগরিকগণের অধিকাংশ ভূমির সমস্যা আদালত থেকে সমাধান করে থাকেন।

কারণ, দেশের প্রতিটি ভূমির বৈধ মালিক রয়েছে সেজন্য, কোনো ভূমির দলিলপত্রে সমস্যা থাকার কথা নয়, কিন্তু কিছু অসৎ ও অযোগ্য ব্যক্তির মেধাহীনতার কারণে অব্যবস্থাপনায় ভূমির মধ্যে নানা জটিলতা ও সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। সে সমস্যার সমাধানে মানুষকে বছরের পর বছর ধরে আদালতে ঘুরপাক করতে হয়। আদালতে ১২ বছরে নিষ্পত্তি হওয়ার পর নাগরিকের সেবাকর্মে বিঘ্ন ঘটলে নাগরিকগণ ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দোষারোপ করে থাকেন। কিন্তু সেবাপ্রার্থীর দুর্ভোগ লাঘব হওয়ার মতো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ভূমি মন্ত্রাণালয় গ্রহণ না করে থাকলে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈধভাবে কিছুই করার থাকেনা। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাই সব সময় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে মানুষের মুক্তির উপায় বের করে থাকেন।

কিন্তু খরিদা ও আদালত সূত্রে অপশনটি না রাখার কারণে নামজারীটা সম্পন্ন হতে আরও ১৬ বছর সময় লাগবে নাকি তা ভুক্তভোগী জানতে চাইলে, সহকারী কমিশনার জানান, ‘এতোদিন ধৈর্য ধরে এসেছেন আর একটু ধৈর্য ধরুন, সমাধান তো একদিন হবেই।’ গুরুত্বপূর্ণ অপশনটি না রাখায় অসংখ্য সেবাপ্রার্থী পড়েছে দুর্দাশায়। তারা অফিসে অফিসে ঘুরপাক করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেজন্য, যেসব অব্যবস্থাপনা সেবাকর্মে বিঘ্ন ও জটিলতা সৃষ্টি করে, মানুষকে আরও দুর্ভোগে নিক্ষিপ্ত করে, সেসব অব্যবস্থাপনা ছুঁড়ে ফেলুন। যাদের অব্যবস্থাপনায় নাগরিকগণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সেসব দায়ী ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তির দ্বারা সেবাকর্ম পরিচালনা করুন। চট্টগ্রামের মামলার রায়ের সংবাদ চট্টগ্রাম আদালত থেকে ইন্টারনেটের সাহায্যে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রাখুন। কাজ অসম্পন্ন রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হলে নাগরিকের সেবাকর্মে ব্যাঘাত ঘটে সেজন্য, যার হাতে কাজ শুরু করা হয় সেই অসম্পন্ন কাজগুলো তার হাতেই সম্পন্ন করে নেওয়ার পর, বদলি করার দরকার পড়লে বদলি করুন।

খরিদা ও আদালত সূত্রে, ও অন্যান্য সূত্রে অপশনগুলো সহ ভূমির নামজারীর সার্ভারে চালু করার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও মঙ্গলজনক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে সেবাপ্রার্থীরা নির্বিঘ্নে সেবা পাওয়ার ও নামজারীর খতিয়ান হাতে পাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকার-সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং ভূমি মন্ত্রাণালয়ের নিকট অনুরোধ করছি।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটি।