এরপর কোথায় যাবেন রেজা কিবরিয়া? বেঁচে উঠুন বেগম জিয়া!
রেজা কিবরিয়ার মতো লোক নিজেই একটি দল গঠন করতে পারতেন! তার বাবা ছিলেন শাহ এম এস কিবরিয়া। মনে পড়ে? তিনি ছিলেন চরম এক প্রভাবশালী, কূটনীতিক, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ, অর্থমন্ত্রী। এ দেশের রাজনীতির রঙ কখনোই আপনি চিনতে পারবেন না। তারচেয়ে বড় কথা রাজনীতিবিদরা অনেকটা রঙধনুর মতো। এদেরকে দেখলে সাত রঙ দেখতে পাওয়া যাবে।
কিন্তু দিন পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের গায়ে একমাত্র কালো ছাড়া আর কোন রঙয়ের অস্তিত্ব পাবেন না। অথচ বিজ্ঞান বলে কালো কোনো রঙ-ই না। যেখানে কোনো রঙ নেই সেটা যেমন সাদা। তেমন সব রঙয়ের মিশ্রণ হলো কালো। অর্থাৎ কালোর মৌলিকতা নেই। যেমন এ দেশের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদের মৌলিকতা নেই। এরা প্রয়োজনে যখন যা ইচ্ছা রঙ ধারণ করেন। স্বার্থের জন্য চুরি করেন, আবার সাধু সাজতে হজ্জও করেন। একই সঙ্গে তারা এতিমখানায় ডোনেট করেন, আবার এতিমখানা থেকে ঘাতকও তৈরি করেন।
এই যেমন রেজা কিবরিয়ার বাবা ছিলেন আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ সালের অর্থমন্ত্রী। আর রেজা কিবরিয়া সারাজীবন করেছেন বিশ্বব্যাংকের চাকরি।
এরপর রেজা কিবরিয়া যখন রাজনীতিতে আসলেন, তখন শুরুতে আওয়ামী লীগ। সেখান থেকে গণফোরাম, তারপর ভিপি নুরের গণঅধিকার পরিষদ, এরপর গণঅধিকারের একাংশ। অবেশেষ বিএনপিতে। আগামীতে কী হয়! সেটাও দেখার বিষয়। ভবিষ্যতে তিনি জামায়াত কিংবা জাতীয় পার্টিতে জয়েন করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন। এ নিয়েও অনেকেই গুজব ছড়াচ্ছেন। অবশ্য এটা খুবই স্বাভাবিক যে, আমরা সাংবাদিকরাও এর আগে শক্তিমান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানকে মরার আগেই অন্তত ছয়বার মেরে ফেলেছিলাম।
একবার তো নিজের মৃত্যুর (গুজব) খরব ছড়ালে সেই নিউজ দেখার পরে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম অফিসে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আমি মরি নাই-আমি জীবিত আছি’।
আর এখন তো ফেসবুকের রাজত্ব। সর্বত্রই ফেসবুক। এমনকি এই ফেসবুক নির্ভরতায় কিছু পত্রিকা-অনলাইনও গড়ে উঠেছে ব্যাঙয়ের ছাতার মতো। যেগুলোর প্রধান কাজই হলো অপতথ্য কিংবা গুজব ছড়ানো।
বেগন খালেদা জিয়ার বেঁচে ওঠা খুবই জরুরি। দেশের এই সংকটকালে একজন নেত্রী স্বৈরশাসকের তকমা নিয়ে ১৪০০ মানুষকে মেরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বংশধরসহ। আরেক স্বৈরশাসক পটল তোলা এরশাদের দলের কর্ণধাররা তো সেই শেখ হাসিনারই অনুসারী।
বাকি থাকলেন বেগম খালেদা জিয়া। গত প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি বৈরি রাজনৈতিক পরিবেশ, জেল, জুলুম আর শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে লড়াই করছেন। এরইমধ্যে এক ছেলেকেও হারিয়েছেন। আরেক ছেলে নির্বাসনে বহু বছর। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও তারেক রহমান ফেরেননি, বা ফিরতে পারেননি। তার ফেরা না ফেরা নিয়ে কঠিন এক ধুম্রজাল পাকাচ্ছে দেশের রাজনীতিতে।
এর বাইরে থাকলে জামায়াতে ইসলামী। এই দলটিও নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে জেগে উঠেছে। অবশ্য কথায় বলে-জামায়াত নাকি প্রতিকূল পরিবেশেই ভালো রাজনীতি করতে পারে। কারণ তারা অত্যন্ত সহনশীল। জামায়াতের আমির তো এক রকম ঘোষণাই দিয়েছেন- যে তার দল ক্ষমতায় গেলে তারা কোনো প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের রাজনীতি করবেন না। এতে করে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হয়তো কাছে টানতে চেয়েছেন।
এদিকে ড. ইউনূস বার বার বললেও মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে এক রকম সন্দেহ, সংশয় রয়েছে। এই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে অনুপস্থিত থাকলে সেই সন্দেহ, সংশয় আরও বাড়বে। তৈরি হবে চরম এক অনিশ্চয়তা।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার করেছিলাম। সেখানে অর্থনীতির চেয়ে রাজনৈতিক প্রশ্ন ও কথাবার্তাই ছিল বেশি। সেদিন তিনি বলেছিলেন, আমরা রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দিয়েছি এটা ঠিক। কিন্তু এগুলো প্রয়োজনীয়। তবে এগুলো আমরা টিকেয়ে রাখব। কখনোই বন্ধ হতে দেব না। তার সেই বক্তব্য বেশ বড় করেও ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিদিনে।
আজকে ব্যাংক খাতের যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে- তাতে আওয়ামী লীগ যদি আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতো তাহলে হয়তো এস আলমের থাবায় ডুবতে বসা ১৭টা ব্যাংকের সবগুলোকেই বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়োজন হতো। এখন তো পাঁচটা মিলে একটা হচ্ছে। তাও রাষ্ট্রীয়করণ।
পৃথিবীর সব দেশে প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমাতে বা চুরি বন্ধে সেসব প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারিকরণ করা হয়। আর আমরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয়করণ করছি। তাও আবার পাঁচটাকে মিলে একটা করছি। যদিও অতীতে অসংখ্য পাাটকলকে বিরাষ্ট্রীকরণ করা হয়েছিল লোকসান কমাতে। সেগুলোর মধু অবশ্য বেসরকারি খাতই খাচ্ছে। রাষ্ট্রের খুব একটা লাভ হয়নি বললেই চলে।
এছাড়া রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক সোনালী, জনতা, রুপালীর সেবার মান দেখলেই অনুমান করা যায়- আগামীতে এই সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অবস্থা কি হতে পারে? আর চুরি বন্ধ হবে কিনা! সেটাও বোঝা যাবে সময় মতোই।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট।
