যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব বিস্তার করে ইসরায়েল, চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

Bangla Post Desk
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত:০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৭ পিএম
যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব বিস্তার করে ইসরায়েল, চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
ইসরায়েলি-আমেরিকান অভিনেত্রী নোয়া টিশবি। ছবি: প্রেস টিভি

সাবেক ইসরায়েলি সেনাপ্রধান গাবি আশকেনাজির ইমেইল হ্যাকের মাধ্যমে পাওয়া নথি থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে ইসরায়েলপন্থি বিবরণ তৈরি করতে একটি গোপন প্রভাব প্রচার বহু বছর ধরেই চলছিল।

রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হানদালা হ্যাকিং গ্রুপের ফাঁস করা ইমেইল দেখায় যে, ইসরায়েলি-আমেরিকান অভিনেত্রী নোয়া টিশবি প্রতিষ্ঠিত ‘অ্যাক্ট অব ইসরায়েল’ নামক একটি বিলুপ্ত অ্যাডভোকেসি গ্রুপ—ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করত। তাদের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যমগুলোতে কর্মকর্তাদের সফর, উচ্চপ্রোফাইল সাক্ষাৎকার এবং প্রো-ইসরায়েল বার্তা প্রচারের সমন্বয় করা হতো।

ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, ২০১১ সালের মার্চে নিউইয়র্কে ইসরায়েলি কনস্যুলেট যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলি সৈন্যদের জন্য সাক্ষাৎকার জোগাড়ে সহায়তা চাওয়ার পর ‘অ্যাক্ট অব ইসরায়েল’ এগিয়ে আসে।

গ্রুপটি সাতটি হাইপ্রোফাইল মিডিয়া উপস্থিতির ব্যবস্থা করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্লগ ও রেডিওতে ‘ইসরায়েলের বয়ান’ তুলে ধরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রচারের তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ্যে নিবন্ধন করার কথা ছিল।

কুইন্সি ইনস্টিটিউটের বেন ফ্রিম্যান এই ফাঁস হওয়া তথ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট (FARA) অনুযায়ী বাধ্যতামূলক নিবন্ধনযোগ্য কার্যকলাপের ‘স্পষ্ট উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইমেইলগুলোতে দেখা যায়, ‘অ্যাক্ট অব ইসরায়েল’ ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গভীর সমন্বয়ে কাজ করত এবং পুরোপুরি অর্থায়িত মিডিয়া সফরের আয়োজন করত। এসব সফরে অংশ নেওয়াদের সফর শেষে নির্দিষ্ট সংখ্যক সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হতো।

২০১১ সালের ওই সফরে ইরানসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ইস্যুতে ব্রিফিং, সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং এমন বহু অংশগ্রহণকারী ছিলেন যাদের অনেকে পরবর্তীতে মার্কিন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন।

ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, গ্রুপটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রো-ইসরায়েল দাতাদের কাছ থেকে সক্রিয় সমর্থন চাইত এবং নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক ইসরায়েলবিরোধী প্রচারের বিরুদ্ধে ‘দ্রুত প্রতিক্রিয়ার’ সংগঠন হিসেবে উপস্থাপিত করত।

এর মধ্যে ছিল গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে পাঠানো আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্যবাহী নৌবহরের বিরুদ্ধে প্রচার।

২০১১ সালের একটি চিঠিতে তৎকালীন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ সংগঠনটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, এটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান ‘ডি-লিজিটিমাইজেশনের নতুন রূপ’ মোকাবিলায় সহায়তা করছে।

যদিও ‘অ্যাক্ট অব ইসরায়েল’ বহু আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। তবে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন সাবেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এখনো যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েল-সংক্রান্ত গণআলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব খাটান।

নোয়া টিশবি—যিনি কিছুদিন ইসরায়েলের অ্যান্টি-সেমিটিজম বিষয়ক বিশেষ দূত ছিলেন—এখনো মিডিয়ায় সক্রিয়। তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ইওয়াভ ডেভিস সম্প্রতি ইসরায়েলের হয়ে বিদেশি এজেন্ট হিসেবে নিবন্ধন করেছেন। যা ইসরায়েলের গোপন প্রভাব নেটওয়ার্ক এখনো আংশিক সক্রিয় থাকার স্বাক্ষর বহন করে।

এফএআরএ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাঁস হওয়া এই নথিগুলো মার্কিন আইনের অধীনে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এখনো বিদেশি এজেন্ট হিসেবে নিবন্ধন প্রয়োজন কিনা—এ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

বেন ফ্রিম্যান বলেন, ‘যারা এসব কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন, তাদের উচিত এখনই ভাবা—তাদের নিবন্ধন করা প্রয়োজন কিনা। আর যদি না করে থাকেন, তাহলে বিচার বিভাগ হয়তো আরও গভীরভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।’ সূত্র: প্রেস টিভি