নির্বাচনে ধানের শীষ বিজয়ী হলে দেশ রক্ষা পাবে: তারেক রহমান
জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ বিজয়ী হলে দেশ রক্ষা পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ধানের শীষকে জিতাতে হবে, এর কোনো বিকল্প নাই। ধানের শীষকে জিতানোর মাধ্যমে জনগণের যে পরিকল্পনা, জনগণের পক্ষের যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ এবং সবার আগে বাংলাদেশ। নো কমপ্রমাইজ।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে বিএনপির আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি এই আহ্বান জানান। রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান হয়। এতে যুবদল ও কৃষক দলের নেতারা যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে তারেক বলেন, আপনার দল আপনার সামনে যে স্ট্রেইট কাট প্ল্যান উপস্থাপন করলো, দেখান তো আর কোনো রাজনৈতিক বাংলাদেশে আছে এরকম প্ল্যানিং দিয়েছে। হ্যাঁ, কোনো রাজনৈতিক দল এ রকম প্ল্যান দিতে পারেনি। দেশের মানুষকে কোনো পরিকল্পনা দিতে পারেনি যে, দেশকে আমরা কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। একমাত্র বিএনপি এই প্ল্যান দিয়েছে। কাজেই এখন বসে থাকার সময় নেই। আপনাকে যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে। যুদ্ধ কি? মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে। এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে আমাদের।
তিনি বলেন, দেশ গড়তে শুধু পরিকল্পনার মধ্যে রাখলে হবে না। বাংলাদেশে বহু পরিকল্পনা হয়েছে যা পরিকল্পনাতেই রয়ে গেছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে চাই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যেমন আন্দোলন করেছি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই প্ল্যানিং বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা এই কাজটা শুরু করব, পরবর্তী জেনারেল সেটা কন্টিনিউ করবে। এটার শেষ নেই।
দলের পরিকল্পনা ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে—এমন নির্দেশনা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দলের পরিকল্পনা মানুষের সামনে নিয়ে যেতে হবে। জনগণকে কনভিন্স করতে হবে। জনগণকে বুঝাতে হবে, এই কঠিন কাজটি করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় এই দেশ এবং জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা যদি সজাগ না হই, যদি এই যুদ্ধে মাঠে নেমে না পড়ি, এই দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, দেশকে প্রত্যেকবার বিএনপি রক্ষা করেছে। ইতিহাস ঘাঁটুন, তাহলে দেখবেন প্রত্যেকবার রক্ষা করছেন শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া। যতবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, তার আগে দেশের কী অবস্থা হয়েছে?
তিনি বলেন, এখন শহীদ জিয়া এবং খালেদা জিয়ার দায়িত্ব আপনাদের (নেতাকর্মীদের) কাঁধে এসে পড়েছে। এই দেশকে আপনাদের রক্ষা করতে হবে। প্রত্যেককে উঠে দাঁড়াতে হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে, দোরগোড়ায় যেতে হবে। তাহলেই আমাদের পক্ষে সম্ভব। আসুন, এই যুদ্ধ আমরা শুরু করি।
ফ্যামিলি কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, ফার্মাস কার্ড, পরিবেশ রক্ষা, বেকার সমস্যার সমাধান, শিক্ষার উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে দলের অগ্রাধিকার পরিকল্পনাগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার রূপরেখা যুবদল ও কৃষক দলের নেতাদের সামনে তুলে ধরেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। নারী, কৃষি ও শিক্ষা পরিকল্পনা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, নারী সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করতে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের নারী সমাজকে সাবলম্বী করতে চাই। এতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভীত তৈরি হবে। কৃষি রপ্তানি বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন ইংরেজির পাশাপাশি তৃতীয় একটি ভাষায়ও দক্ষ হতে পারে—এমন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা কোনো মেগা প্রকল্পে যাব না, এতে দুর্নীতি হয়। আমরা টাকা খরচ করব শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে, যাদের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই হবে নারী। দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এখনই কাজ শুরু করতে পারলে আগামী ১০ বছর পর দেশ সুফল পাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। খেলাধুলা ও নগর পরিকল্পনা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষা–স্বাস্থ্য–ক্রীড়া—এই তিন মন্ত্রণালয় সারাবছর একসঙ্গে কাজ করবে। দমবন্ধ করা শহরে খেলার মাঠ নেই। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে বাজারদরে জায়গা কিনে আমরা খেলার মাঠ তৈরি করে দেব।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস. এম. জিলানী প্রমুখ।
বিপি/আইএইচ
