কেমন সংবাদপত্র চাই


আমরা আজ এমন একটা সময়ে বসবাস করছি যেখানে সত্যটাকে খুব সহজে জানা যায় না। চারিদিকে শুধু মিথ্যা, প্রোপাগান্ডা, ফেইক আর বস্তুনিষ্ঠহীন সংবাদের দাপাদাপি। আর তাই আজকের পৃথিবীতে সত্যিকারের সংবাদ মাধ্যমর গুরুত্ব অপরিসীম। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম কেবল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যম নয়—এগুলো সমাজ, রাজনীতি এবং জনমতের ওপর সরাসরি ও গভীর প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব কখনো ইতিবাচক হয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলে, আবার কখনো নেতিবাচক হয়ে সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি ও মত-বিভেদ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমানে অনেক সংবাদমাধ্যমই বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক চাপ, কর্পোরেট স্বার্থ এবং বৈশ্বিক মতাদর্শিক প্রভাবের কাছে নতিস্বীকার করে তারা সত্য প্রকাশের পরিবর্তে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণায় জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ তথ্যের বদলে প্রোপাগান্ডা আর অসত্য সংবাদের মুখোমুখি হচ্ছে। আর সংবাদ হয়ে উঠছে এক-পাক্ষিক বয়ানের বাহন। এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রয়োজন এমন একটি সংবাদপত্র, যেখানে সত্য থাকবে বিকৃতি-হীন, থাকবে সততা ও সাহসের সম্মিলন। আজকের সংবাদমাধ্যম কেবল ঘটনা জানানোর মাধ্যম নয়—এটি মতামত গঠনের উৎস, চিন্তার দিকনির্দেশক এবং জনসচেতনতা তৈরির শক্তিশালী উপাদান। কিন্তু যদি এই শক্তিকে সৎ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে ব্যবহার না করা হয়, তাহলে সংবাদ হয়ে ওঠে সমাজ ভাঙনের হাতিয়ার। কারণ, প্রোপাগান্ডা কখনোই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে না—বরং সত্যের জায়গা দখল করে বিভ্রান্তিকে প্রতিষ্ঠিত করে।
এই পটভূমিতে আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: আমরা কি ধরনের সংবাদপত্র চাই?
বিশ্ব-মাধ্যমে এই একতরফা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রচারের সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো প্রায় এককভাবে ইউক্রেইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়ার কার্যকারণ বা তাদের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ নিয়ে কোনও গভীর বিশ্লেষণ নেই। বরং রাশিয়াকে ‘খলনায়ক’ হিসেবে চিত্রায়িত করে জনমতকে একমুখী-ভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে। যুদ্ধের রাজনৈতিক বাস্তবতা, ইতিহাস বা ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সরলীকৃত হয়ে গেছে। আবার দেখা যায়, যখন ফিলিস্তিন-ইজরায়েল সংঘাত ঘটে, তখন অনেক মিডিয়া ইজরায়েলের পক্ষ নিয়ে শুধুমাত্র হামাস বা ফিলিস্তিনিদের সহিংসতা তুলে ধরে। অথচ বছরের পর বছর ধরে চলা দখলদারিত্ব, বঞ্চনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র উপেক্ষিত থেকে যায়। এই একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মধ্যে সহানুভূতি ও মানবতা বিকাশের বদলে পক্ষপাতমূলক মনোভাব গড়ে তোলে। এই ধরনের সংকীর্ণতা শুধু আন্তর্জাতিক সংবাদেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের উপমহাদেশেও সংবাদমাধ্যম একধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে—কে কত দ্রুত ‘ব্রেকিং নিউজ’ দিতে পারে, তাতে তথ্য কতটা সত্য বা অসম্পূর্ণ তা বড় বিষয় নয়। ভারত-পাকিস্তান বা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ভারত-বিরোধী মনোভাবকে প্রাধান্য দিয়ে খবর উপস্থাপন করা হয়, যা বাস্তবতার পুরো চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়। পাকিস্তান বা অন্য পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গিকে তখন তুলনামূলকভাবে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়, যদিও উভয় পক্ষের ভূমিকাই সমালোচনার দাবিদার হতে পারে। এর ফলে পাঠক একটি পক্ষের প্রতি অতিমাত্রিক অনুকূলতা কিংবা বিরূপ ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে—যা তথ্যভিত্তিক মতামত গঠনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা হওয়া উচিত সবপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি ন্যায্যভাবে তুলে ধরা, যেন পাঠক নিজের বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
গত দু দশক ধরে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম একদিকে যেমন পরিমাণগতভাবে বিস্তার লাভ করেছে, তেমনি গুণগত মান ও নৈতিকতার দিক থেকে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বারবার বলা হলেও, বাস্তবচিত্র বলছে ভিন্ন কথা। রাজনৈতিক মেরুকরণ, কর্পোরেট স্বার্থের প্রভাব এবং অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতা—এই তিনটি বড় প্রতিবন্ধকতার কারণে সাংবাদিকতা তার মৌলিক আদর্শ অর্থাৎ সত্যনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা এবং জনস্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে একই ঘটনা একেক সংবাদপত্রে একেকভাবে উপস্থাপিত হয়, যার মধ্যে সত্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। একদিকে দেখা যায় কোনো সংবাদপত্র প্রকাশ করছে অতিরঞ্জিত পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন, অপরদিকে অন্য কেউ হয়তো বিষয়টি নিয়েই সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করছে। এই দুই চরম অবস্থানের মাঝে প্রকৃত তথ্য হারিয়ে যায়, পাঠক বিভ্রান্ত হন এবং সংবাদপত্রের উপর আস্থা দুর্বল হতে থাকে। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রায় নিঃসন্দেহে পশ্চিমা মিডিয়ার ভাষ্য অনুবাদ করে ইউক্রেইনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে, যা এক অর্থে স্বাভাবিক হলেও একতরফা। রাশিয়ার পক্ষ থেকে তুলে ধরা যুক্তি, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বা পূর্ববর্তী ইতিহাসের প্রেক্ষাপট প্রায় অনুপস্থিত। পাঠকদের সামনে যখন কেবল একটি দৃষ্টিভঙ্গি বারবার উপস্থাপন করা হয়, তখন তারা বিকল্প ব্যাখ্যা বা বৃহত্তর বাস্তবতা জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। অথচ একটি দায়িত্বশীল সংবাদপত্রের দায়িত্ব হচ্ছে—সব পক্ষের বক্তব্য ও প্রেক্ষাপট সামনে তুলে ধরা, যাতে পাঠক নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিচারবোধ কাজে লাগিয়ে নিজের মত গঠন করতে পারেন।
দেশীয় প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা যে বড় এক সংকটে পড়েছে, তার অন্যতম দিক হচ্ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্রমাগত হ্রাস। অতীতে বাংলাদেশে কিছু সাহসী সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি—যেখানে পাহাড় কাটার ভয়াবহতা, নদী দখল, শহরের ভিতরে অবৈধ আবাসিক প্রকল্প, হাসপাতালের ভিতরে দুর্নীতির জাল, কিংবা সরকারি প্রকল্পে ব্যয়-অপচয় নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল। এমনকি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানব-পাচার, স্থানীয় প্রশাসনের দুর্ব্যবস্থা, গার্মেন্টস খাতে নারী শ্রমিকদের নিপীড়ন—এসব ক্ষেত্রেও কিছু উদ্যমী সাংবাদিক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সেই মনোযোগ ও দায়িত্ববোধ আর দেখা যায় না। এর পরিবর্তে অনেক সংবাদপত্র এখন নিরাপদ, জনপ্রিয়, ক্লিক-নির্ভর বিষয়বস্তুর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কার পোশাকে বিতর্ক, কোন তারকার প্রেম বা বিয়ের গুঞ্জন, কিংবা কে কি বলল সামাজিক মাধ্যমে—এসব নিয়েই যেন সংবাদজগৎ সরগরম।
এর পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যমের নীরবতা আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, জাতীয় অগ্রাধিকারের প্রশ্নেও তারা স্পষ্ট ও জোরালো অবস্থান নেয় না। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা, যা একটি জাতির ভবিষ্যতের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত, সে বিষয়ে কোনো বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন বা অনুসন্ধান আমরা খুব কমই দেখি। শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান, শিক্ষক সংকট, পাঠ্যবই বিতরণের ব্যর্থতা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যিকীকরণ বা কারিগরি শিক্ষার অবমূল্যায়ন—এসব জ্বলন্ত বিষয়গুলো পত্রিকার প্রান্তিক পাতায়ও জায়গা পায় না। অথচ এদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তরুণ প্রজন্ম কতটা দক্ষ, মানবিক ও সচেতন হয়ে উঠছে তার ওপর। ঠিক তেমনি, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কেও সংবাদমাধ্যমে যে আলোচনা হওয়া উচিত, তা প্রায় অনুপস্থিত। জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন, নগরায়ণের চাপে কৃষিজমি বিলুপ্তি, প্লাস্টিক দূষণ বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতামূলক প্রতিবেদন আমরা খুব কমই দেখি। মিডিয়া চাইলেই এসব বিষয়ে সামাজিক সংলাপ তৈরি করতে পারত, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারত সচেতন হওয়ার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এসব দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর বদলে সাময়িক উত্তেজনামূলক ও বিনোদননির্ভর খবরই যেন হয়ে উঠেছে মূলধারা। এই নীরবতা কেবল সাংবাদিকতার দায়িত্বহীনতা নয়, বরং জাতীয় অগ্রগতির পথে এক বড় বাধা। একটি দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম শুধু ঘটনা নয়—সমস্যার গভীরতা তুলে ধরে, প্রশ্ন তোলে, এবং সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করে। যখন তা না হয়, তখন গণমাধ্যম আর সমাজের আয়না হয়ে থাকতে পারে না—বরং হয়ে ওঠে শুধু বাজারের প্রতিচ্ছবি।
অন্যদিকে, সংবাদপত্রের জন্য আরেকটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ফেইক নিউজ’ বা যাচাইবিহীন গুজব-ভিত্তিক সংবাদ। আজকের ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনও খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে, এবং অনেক সময় সেই অপ্রমাণিত তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমেও জায়গা পেয়ে যায়। ফলস্বরূপ, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সহিংসতার কারণও হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা, রাজনৈতিক উত্তেজনা বা ব্যক্তিগত চরিত্রহননের মতো ইস্যুতে এমন ভুল তথ্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এ অবস্থায় সংবাদপত্রের দায়িত্ব দ্বিগুণ—তথ্য যাচাই করেই তা প্রকাশ করা, এবং প্রয়োজনে সংশোধনী প্রকাশ করে পাঠকের আস্থা ধরে রাখা। বর্তমান সময়ে সংবাদ পরিবেশনের নীতিতে জনস্বার্থ ও মানবিকতা জায়গা পাচ্ছে না, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধা প্রাধান্য পাচ্ছে। এমন সংবাদপত্র তখন আর জনগণের নয়—বরং ক্ষমতার হাতিয়ার হয়ে ওঠে। অথচ একটি সত্যিকারের ভালো সংবাদপত্র হতে হবে সহজবোধ্য, পাঠক বান্ধব ও পরিশীলিত ভাষার বাহক—যেখানে জটিল রাজনৈতিক বিশ্লেষণের বদলে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবে কী ঘটছে, কেন ঘটছে, এবং তা তাদের জীবনে কী প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের সাংবাদিকতাই পারে সমাজে শিক্ষা ও সচেতনতার ভিত্তি গড়ে তুলতে। আজ আমরা এমন একটি সংবাদপত্র চাই, যেখানে থাকবে তথ্যের সততা, বিশ্লেষণের ভারসাম্য এবং জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গি। সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা। একটি ভালো সংবাদমাধ্যম জনগণের পক্ষে কথা বলে, ক্ষমতার প্রতিচ্ছবি নয়। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে, নীরবতার অংশ হয় না, সে মতামত গঠন করে, গুজব ছড়ায় না। সত্য, ন্যায় এবং বিবেকের পক্ষে অবস্থান নেওয়াই সাংবাদিকতার মূল চেতনা।
তাই সময় এসেছে, গণমাধ্যমকে নতুন করে ভাবার, তার নৈতিক ভিত্তিকে পুনর্গঠনের। সংবাদপত্রকে হতে হবে সাহসিকতার প্রতীক, সত্য প্রকাশে নির্ভীক এবং সমাজ গঠনে সক্রিয় এক শক্তি। এটি হবে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শহরের রাজনীতি যেমন গুরুত্ব পাবে, তেমনি মফস্বলের স্কুল শিক্ষকের সংগ্রাম বা গ্রামীণ নারীর ক্ষুদ্র উদ্যোগও জায়গা পাবে সমান মর্যাদায়। যে পত্রিকা শিক্ষাকে জাতীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় এনে প্রশ্ন তুলবে, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে জনসচেতনতা গড়বে, এবং পাঠককে শুধু জানাবে না—ভাবতেও শেখাবে। এই দায়িত্ব কেবল সাংবাদিক বা সম্পাদকদের একার নয়। এটি আমাদের সবার—পাঠক, শিক্ষক, নাগরিক সমাজ, এমনকি তরুণ প্রজন্মেরও। কারণ গণমাধ্যম যেমন সমাজকে গঠন করে, সমাজও তেমনি গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করে। একটি গণতান্ত্রিক ও সুবিবেচক জাতি তখনই গড়ে উঠতে পারে, যখন তার সংবাদপত্র থাকবে বিবেকবান, পক্ষপাতহীন ও সত্যনিষ্ঠ। আজ, যখন তথ্যের জগত দ্রুত গতিতে বদলে যাচ্ছে, তখন আমাদের প্রয়োজন আরও বেশি মননশীল, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সংবাদমাধ্যম।
সত্যকে আলোতে আনতে হলে, সাহসী কণ্ঠ দরকার—এবং সেই কণ্ঠ হতে হবে আমাদেরই। একটি সংবাদপত্র যখন জনগণের আয়না হয়ে উঠে, তখন তা কেবল সংবাদ নয়, এক ধরনের জাতিগত আত্মপরিচয়েরও বাহক হয়ে দাঁড়ায়। এই উপলব্ধি থেকেই আজ সময় এসেছে, আমরা সবাই মিলে দাবি তুলি—একটি সাহসী, বস্তুনিষ্ঠ, জনমুখী সংবাদপত্রের, যা শুধুই সংবাদ পরিবেশন করবে না, বরং সমাজের বিবেক হয়ে কথা বলবে।