‘ডেথ সেলে’ ইমরান খানের ওপর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ছেলেদের
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে কারাগারের ‘ডেথ সেল’-এ রেখে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তার দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলায়মান ইসা খান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড উইথ ইয়ালদা হাকিম’ অনুষ্ঠানে তারা জানান, কয়েক মাস ধরে তারা বাবার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি।
ইমরান খানের ছোট ছেলে কাসিম খান বলেন, তার বাবাকে গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে একাকী বন্দিত্বে (সলিটারি কনফাইনমেন্ট) রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে নোংরা পানি পান করতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী বন্দিদের আশপাশে রাখা হয়েছে। কাসিমের ভাষায়, পরিস্থিতি চরম অমানবিক ও নোংরা। বাবাকে মানবিক যোগাযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইমরান খানের ওপর পরিকল্পিতভাবে ‘মানসিক নির্যাতনের কৌশল’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি কারারক্ষীদেরও তার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই।
কাসিম খান বলেন, এখন আর বেরিয়ে আসার কোনো পথ দেখছি না। আমরা আশা ধরে রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, হয়তো আর কখনো বাবাকে দেখতে পাব না।
বড় ছেলে সুলায়মান ইসা খান জানান, ইমরান খানকে প্রতিদিন প্রায় ২৩ ঘণ্টা একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। তিনি ওই কক্ষকে ‘ডেথ সেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সুলায়মান খান দাবি করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে ইমরান খান এখন আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ একাকী বন্দিত্বে রয়েছেন। তাকে এমন নিম্নমানের পরিবেশে রাখা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো বন্দির ক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, কাসিম খান ও সুলায়মান ইসা খান ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী, ব্রিটিশ টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জেমাইমা গোল্ডস্মিথের সন্তান। তাদের অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এর আগেও ইমরান খানের বোনেরা আদিয়ালা কারাগারে তার সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।
গত সপ্তাহে ইমরান খানের বোন আলীমা খান বলেন, আমার ভাইকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং বেআইনিভাবে একাকী বন্দিত্বে রাখা হয়েছে। এই নির্যাতন বন্ধ হওয়া উচিত।
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দি রয়েছেন ইমরান খান। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগসহ একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের নির্যাতনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক পাকিস্তান সরকারকে ইমরান খানের ‘অমানবিক ও মর্যাদাহীন’ আটক পরিস্থিতি নিয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডস বলেন, আমি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন ইমরান খানের আটক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মান ও বিধির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে স্থানান্তরের পর থেকে ইমরান খানকে অতিরিক্ত সময় একাকী বন্দিত্বে রাখা হচ্ছে। তাকে দিনে ২৩ ঘণ্টা কক্ষে আটকে রাখা হয়, বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ অত্যন্ত সীমিত এবং তার কক্ষ সার্বক্ষণিক ক্যামেরা নজরদারির আওতায় রয়েছে।
বিপি/আইএইচ
