এবার পশ্চিম তীরে হামলা বাড়ালো ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতি চললেও গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থামেনি। বরং পশ্চিম তীরে নিপীড়নের মাত্রা আরও বেড়েছে। নিয়মিত অভিযান, গুলিবর্ষণ ও উচ্ছেদের ঘটনায় সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
গাজা সিটির তথাকথিত “হলুদ রেখা” সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ভবনগুলো লক্ষ্য করে বোমা ও গোলাবর্ষণ চালানো হয়েছে। একই সময় দক্ষিণ গাজা ও মধ্যাঞ্চলের বুরেইজ শরণার্থী শিবিরেও গুলি ছোড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলার কারণে শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল বারবার উস্কানিমূলক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে গাজায় আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্দশা আরও গভীর হয়েছে। এর ওপর তীব্র শীত পড়ায় পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। পর্যাপ্ত আশ্রয়, খাবার ও উষ্ণ পোশাকের অভাবে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে।
পশ্চিম তীরে দুই কিশোর নিহত
গত মঙ্গলবার পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে পৃথক দুই ঘটনায় দুজন তরুণ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হেবরন শহরে ১৭ বছর বয়সী মুহান্নাদ তারিক মুহাম্মদ আল-জুগাইরকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। আইডিএফের দাবি, সে এক সেনার ওপর হামলার চেষ্টা করেছিল। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আহত অবস্থায় তাকে একটি গাড়ির ভেতরে গুলি করা হয়।
অন্যদিকে, রামাল্লাহ এলাকায় ১৮ বছর বয়সী রাসলান আসমারকে প্রথমে আটক করা হয়। এরপর তাকে মাটিতে ফেলে গুলি করে চলে যায় সেনারা। স্থানীয়রা বলছে, কোনো ধরনের তাৎক্ষণিক হুমকি ছিল না।
সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম তীরজুড়ে তল্লাশি, ধরপাকড় এবং অভিযান জোরদার হয়েছে। এমনকি আত্মসমর্পণ করেও বহু ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে।
দুই বছরে গ্রেপ্তার ২১ হাজার ফিলিস্তিনি
ফিলিস্তিন প্রিজনার্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ২১ হাজার ফিলিস্তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
যদিও কিছু বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছে, তবুও নতুন করে আটক করার হার অনেক বেশি। বন্দিদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, বন্দিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
ইসরায়েলের ভেতরেও সরকারবিরোধী অসন্তোষ বাড়ছে। দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিচার দাবি করে জেরুজালেমে বিক্ষোভ হয়েছে। তার বাসভবনের সামনে সমবেত হয়ে প্রতিবাদকারীরা জানান, কোনোভাবেই তাকে দায়মুক্তি দেওয়া যাবে না।
এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগকে চিঠি দিয়ে নেতানিয়াহুকে সম্পূর্ণ ক্ষমা দেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে এই প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েলের সমাজে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বর্তমানে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
বিপি/এনএ
