১১ লাখ দক্ষ কর্মী ও স্থায়ী বাসিন্দা নেবে কানাডা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
১১ লাখ দক্ষ কর্মী ও স্থায়ী বাসিন্দা নেবে কানাডা

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির প্রেক্ষাপটে দক্ষ কর্মী ও স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ দিচ্ছে কানাডা। দেশটির সরকার এখন মার্কিন এইচ-ওয়ান বি (H-1B) ভিসাধারী ও আন্তর্জাতিক দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণ করতে বিশেষ কর্ম পরিকল্পনা নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম বাজেটে আন্তর্জাতিক প্রতিভা টানতে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১০৬ কোটি টাকা) বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১,০০০এর বেশি উচ্চ দক্ষ পেশাজীবী নিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজেট নথিতে বলা হয়েছে, ‘এই গবেষক ও দক্ষ কর্মীদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কানাডার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে এগিয়ে নেবে এবং ভবিষ্যতের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’

এক্সিলারেটেড পাথওয়ে’ পরিকল্পনা

কানাডা সরকার শিগগিরই মার্কিন H-1B ভিসাধারীদের জন্য একটি দ্রুতগতির অভিবাসন পদ্ধতি (Accelerated Pathway) চালু করতে যাচ্ছে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শীর্ষ প্রতিভাধর কর্মীরা কানাডায় আসতে পারবেন।

কানাডার এই পরিকল্পনা এসেছে এমন এক সময়ে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প H-1B ভিসার ফি ১,০০,০০০ ডলারে উন্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা অনেক দক্ষ বিদেশি পেশাজীবীকে মার্কিন মুলুকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।

বিদেশি শিক্ষার্থী ও অস্থায়ী অভিবাসন হ্রাস

একই সঙ্গে কানাডা সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী বছর থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫৩২ শতাংশ কমানো হবে। এর ফলে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে।

পাশাপাশি দেশটি ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৩,৮০,০০০ জন স্থায়ী বাসিন্দা গ্রহণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

তবে অস্থায়ী বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমানো হবে। যেমন- ২০২৬ সালে ৩,৮৫,০০০ জন এবং ২০২৭২০২৮ সালে ৩,৭০,০০০ জন।

(বর্তমান বছরের তুলনায় এটি প্রায় ৪০% কম)।

একই সঙ্গে শিক্ষা অনুমতি বা স্টাডি পারমিটও কমানো হবে। যেমন-

২০২৬ সালে কমানোর লক্ষ্য ১,৫৫,০০০ জন এবং ২০২৭ ও ২০২৮ সালে ১,৫০,০০০ জন।

যা ট্রুডো সরকারের নির্ধারিত বার্ষিক লক্ষ্যের তুলনায় প্রায় অর্ধেক (৩,০৫,৯০০ জন)।

বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া

ইউনিভার্সিটিজ কানাডা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা সরকারের ‘টেকসই অভিবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা’কে স্বাগত জানালেও ‘এটি যেন প্রতিভা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।’

অন্যদিকে কানাডিয়ান আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডেসজার্ডিনসএর এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসন কমালে শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং বেতন বৃদ্ধিতে স্বল্পমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তবে এটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ করবে এবং বাসাভাড়ার বাজারে চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য

কানাডা সরকার ২০২৭ সালের শেষে দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে অস্থায়ী বাসিন্দার হার ৫ শতাংশের নিচে নামাতে চায়। যা বর্তমানে ৭.৩%।

এই পরিকল্পনা একদিকে কানাডার অভিবাসন কাঠামোকে ভারসাম্যপূর্ণ করবে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসন নীতির ফলে সৃষ্ট ‘ব্রেইন ড্রেইন’ পরিস্থিতি থেকে দক্ষ কর্মীদের ‘ট্যালেন্টপুল’ হিসেবে টেনে আনার সুযোগ তৈরি করবে বলে মত বিশ্লেষকদের। সূত্র: ব্লুমবার্গ