‘শাপলা’ প্রতীকে এনসিপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে: সারজিস আলম


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আপনারা (নির্বাচন কমিশন) খালি এনসিপিকে শাপলা না দেওয়ার পেছনে না ছুটে, আপনারা নিজেদের নীতিমালাগুলো একটু সংশোধন করেন। যে নীতিমালাগুলো আপনাদের একটা স্ট্যান্ডার্ড নির্বাচন কমিশন হিসেবে দেশের সামনে তুলে ধরবে। আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের জায়গা থেকে শাপলাই প্রতীক হিসেবে পাবো, আমরা সেটা বিশ্বাস করি। সেই প্রতীকে এনসিপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা মনে করি।’
সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর অলোকার মোড়ের রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির হলরুমে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির রাজশাহী জেলা ও মহানগর সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘এনসিপির শাপলা প্রতীক পেতে আইনি কোনও বাধা নেই। আমরা সব ধরনের বাধা, আইন-কানুন বিবেচনা করে একটা টিম আমাদের এটার ওপরে দীর্ঘ সময় কাজ করার পরে জেনে শুনে যারা আইনজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ আছেন নির্বাচনকেন্দ্রিক, প্রতীককেন্দ্রিক, তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা শাপলাটাকে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে আইনি কোনও বাধা নেই। যদি নির্বাচন কমিশন স্বেচ্ছাচারিতা করে, নির্বাচন কমিশন কারও চাপে তারা কিছুটা ভীত হয়ে আমাদের এটা (শাপলা) না দিতে চায়। আমরা মনে করবো তারা স্বাধীন-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের চরিত্রটা হারিয়ে ফেলেছে। এটা যদি হয়- আমাদের ওই আস্থাটা আর থাকবে না নির্বাচনকে নিয়ে। এখানে আইনি কোন বাধা নেই। আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের জায়গা থেকে শাপলাই প্রতীক হিসেবে পাবো, আমরা সেটা বিশ্বাস করি। সেই প্রতীকে এনসিপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা মনে করি।’
নির্বাচন কমিশনের আরেকটি বিষয় বলতে চাই উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘বিগত বছরের পর বছর ধরে নির্বাচন কমিশন যেভাবে ফাংশন করেছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এসেও যদি একইভাবে ফাংশন করার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের জন্য অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় লজ্জার। এনসিপির সঙ্গে আরেক দলের নাম নেওয়া হয়- জাতীয় লীগ। যেখানে আমরা এই শর্তগুলো দল হিসেবে পূরণ করতে দেশের ২২টি জেলা, ১০০টি উপজেলায় ডিড করাসহ অফিস লাগবে এনসিপির নামে। প্রত্যেক ইউনিটে ২০০ জন সদস্যের সমর্থকের এনআইডি দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। এটা করতে গিয়ে যখন আমার নেতাকর্মীদের ঘাম ছুটে যায়- আরেকজন জাস্ট ক্যামেরা দেখিয়ে টয়লেটের পাশে দুই ফিট বাই-দেড় ফিটের পিভিসি দিয়ে তারা নিজেদেরকে দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর তাদের দল হিসেবে যোগ্য বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি বলেন, ‘কী এমন শর্তগুলো তাদের আগে ছিল, যেগুলো অপ্রাসঙ্গিক। এক নাম বা দলকে প্রাসঙ্গিক করে তুললো, এটা আসলে আমাদের নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন। এটাও প্রশ্ন, যদি এরকম নামসর্বস্ব একটা রাজনৈতিক দল তাদের কোনও আগের একটা শর্ত আজ থেকে ২০-৩০-৪০ বছর আগে পূরণ করে এইভাবে পেয়ে যায়। যারা এত কষ্ট করেছে। তারা তাদের কষ্টের ওই মূল্যটা হারিয়ে ফেলবে। এটা হওয়া উচিত না। তাদের এই নীতিমালায় সংশোধন আসা উচিত। বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে প্লাস-মাইনাস ৪৫টা। এই ৪৫টা দল বাদ দিলাম, ১৫টা দল। বাংলাদেশে তাদের মুখে আপনি ১৫টা দলের নাম জানতে পারবেন? তাদের দলের নেতৃত্বে কারা আছে, সেটা জানাতে পারবেন।’
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে যারা এত কষ্ট করছে, তাদের সঙ্গে আপনি যখন জাতীয় লীগ নামের কাউকে নিয়ে এসে তুলনা করেন, আমাদের যে এত পরিশ্রম, এই পরিশ্রমের মূল্য থাকে না। আমরা নির্বাচন কমিশনকে আমাদের জায়গা থেকে অনুরোধ করবো, আপনারা খালি এনসিপিকে শাপলা না দেওয়ার পেছনে ছুটে, আপনারা নিজেদের নীতিমালাগুলো একটু সংশোধন করেন। যে নীতিমালাগুলো আপনাদের একটা স্ট্যান্ডার্ড নির্বাচন কমিশন হিসেবে দেশের সামনে তুলে ধরবে ‘
সারজিস বলেন, ‘যারা প্রকৃতপক্ষে জনগণের জন্য রাজনীতি করছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করছে- তাদেরকে সামনের ফাইটে, বাংলাদেশের যে রাজনীতিক ফাইট তাদেরকে প্রাসঙ্গিক রাখেন। নাহলে কেউ কেউ বলছে, আমার সঙ্গে ২০ দল আছে, আমার সঙ্গে ২৫ দল আছে, ৩০ দল আছে। অথচ না জানে মানুষজন দলের নাম; না জানে দলের নেতৃত্বে কে আছে। এই সমীকরণ থেকে বের হয়ে আসা উচিত। আমরা মনে করবো নির্বাচন কমিশন এই ক্ষেত্রে ভালো একটা ভূমিকা রাখবে।’
সমন্বয় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন। অনুষ্ঠানে এনসিপি রাজশাহী মহানগরের প্রধান সমন্বয়ক মোবাশ্বের আলীসহ জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।