‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অগ্রগতি হচ্ছে, এটা জাতির জন্য ভালো খবর’

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম
‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অগ্রগতি হচ্ছে, এটা জাতির জন্য ভালো খবর’
ছবি : সংগৃহীত

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে অগ্রগতি হচ্ছে, এটাই জাতির জন্য ভালো খবর এবং সুখের খবর বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে নিজের অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে শিশির মনির বলেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে অগ্রগতি হচ্ছে, এটাই জাতির জন্য ভালো খবর এবং সুখের খবর। সবাই চেয়েছে জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হোক এবং এরই ভিত্তিতে আগামীতে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করুক। এরই প্রেক্ষিতে রবিবারের (৫ অক্টোবর) আলোচনায় বাস্তবায়নের (জুলাই সনদ) ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। সবাই মোটামুটি একটি কাছাকাছি চলে এসেছেন— একটি গণভোটের প্রয়োজন এবং এই গণভোটের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে কী কী করা যায়— সে বিষয়ে অনেকে কাছাকাছি চলে এসেছে। এটি সবার জন্যই আশাব্যঞ্জক। সবার মধ্যেই এক ধরনের আশার সঞ্চার করবে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট গতিপথ পেতে যাচ্ছে— যার মাধ্যমে জুলাই আন্দোলন সম্মানিত হবে একইভাবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পার্লামেন্ট, সরকার এবং বিচার ব্যবস্থায় একটি গুণগত স্ট্রাকচারাল পরিবর্তন আসবে বলে আমাদের  ধারণা।

গণভোট কবে, কখন হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরেকটি বৈঠক আছে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকাল আড়াইটায়। আজকেও মিটিং আছে। অনেক ইনফরমাল আলোচনা হচ্ছে, হবে— যেন এই বিষয়টি আরও পরিপক্ক হয়। অর্থাং যা কিছু আমরা করবো তা যেন ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়। তবে কখন হবে সে আলোচনাটি এখনও ম্যাচিওর হয়নি। আশা করা যায়, আগামী ৮ অক্টোবর এটি আলোচনার বিষয়বস্তু হবে।

এইজন্য আমার মনে হয়, মূল বিষয়টিতে যেহেতু আমরা একমত হচ্ছি যে, বাস্তবায়ন রুটটা কিভাবে হবে, সে বিষয়ে যেহেতু একমত পোষনণ হচ্ছে, সেহেতু এটা কখন হবে, তা বড় ধরনের কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। এটাও হয়তো আলাপ-আলোচনার সাপেক্ষে সমাধান হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, আমরা বাংলাদেশের সাংবিধানিক যত মামলা আছে, এগুলো বিশ্লেষণ করেছি। সাংবিধানিক মূলনীতি ভিত্তিগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে, বাংলাদেশ এবং ভারতের সাংবিধানিক মূলনীতি ভিত্তিগুলো কিভাবে ডেভেলপ করেছিল, সংসদকে কিভাবে কাজ করলে পরে ভবিষ্যতের আদালত এবং সব ক্ষেত্রেই আইনগত যুক্তি গ্রহণযোগ্য হবে। এজন্যই আমরা বলেছি, আগামী সংসদে দুটি ক্ষমতা থাকবে। একটি ক্ষমতা থাকবে রেগুলার পার্লামেন্ট এবং আরেকটি থাকবে গঠনিক বা কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার। যে পাওয়ারের মধ্যে সংবিধানের মধ্যে যে ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হবে, বা আনা হবে— এগুলোও পরবর্তিকালে আদালতে টেকশই হবে বলে আমরা আমাদের বিচার-বিশ্রেষণে মনে করেছি। সেইজন্য আগামীতে যে সংসদ অনুষ্ঠিত হবে, তার দুটো ক্যারেক্টারের কথা বলা হচ্ছে— সেটি হবে জেনারেল ও গাঠনিক ক্ষমতাসম্পন্ন পার্লামেন্ট।

গণভোটের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতের অন্যতম এই আইনজীবী জানান,  আমাদের দেশে এ পর্যন্ত তিনটি ওয়াইড গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটা ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে। এখানে প্রশ্ন ছিল— যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অমুক কর্তৃক গৃহীত সব নীতি ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আপনি একমত কিনা। তখন মানুষ উত্তর দিয়েছিল ‘হ্যাঁ’। একই কাজ করেছিলেন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। ১৯৯১ সালে যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১২তম সংশোধনী পাস করেছিলেন। ওই যে ১৯৯১ সালের নির্বাচন হয়েছিল— সেটি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার নির্বাচন। কিন্তু যখন সংসদ গঠিত হয়, তখন সিদ্ধান্ত হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার, অর্থাৎ পার্লামেন্টারি গভর্নন্টে রূপান্তরিত করা হবে। কিন্তু নির্বাচনটি পার্লামেন্টারি ফরমেটে হয়নি। নির্বাচন হয়েছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ব্যবস্থায়, এজন্য ১৯৯১ সালে ১২তম সংশোধনী এনে এটিকে গণভোটে পাঠানো হয়েছিল। গণভোট অনুমোদন করার পর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বেড়ে যায়। সেটি তখন মন্ত্রিপরিষদ শাসিত কিংবা পার্লামেন্টারি ফরম অব গভর্নমেন্টে রূপান্তর করা হয়। এটি ছিল তৃতীয় গণভোট।

গণভোটের বিধান বাতিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৫ তম সংশোধনীতে সেটিকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এজন্য আমরা বলছি, গণভোটের মাধ্যমে যে ব্যাপক পরিবর্তন হবে এবং প্রশ্ন এমন হবে যে— জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত যেসব বিষয় সংবিধানের সঙ্গে সংবিধানের মৌলিক বিধানের পরিবর্তন করবে— এই ব্যাপারে আপনি একমত কিনা? এই সনদটি জনসাধারণের কাছে চলে যাবে, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হবে, ওয়েবসাইটে যাবে, সবাই সেটা পড়তে পারবে। তার আলোকে জনগণের মতামত চাওয়া হবে যে, ‘হ্যাঁ’ বলুন বা ‘না’ বলুন। অতীতেও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলেও অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু উত্তর চাওয়া হয়েছিল ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’। এই যে প্রক্রিয়া, আমার ধারণা এখানেই কার্যকর হবে।     

এ বিষয়ে আরও কোনও ক্রিয়েটিভ চিন্তা যদি আসে, আমার মনে হয়—ঐকমত্য কমিশনের সে বিষয়টি যুক্ত করতে দ্বিমত করার কোনও কথা নয়। কারণ রবিবার সভায় আমি দেখেছি, সবাই ইতিবাচক। সবাই এটাকে বড় সমস্যা মনে করছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় মেকানিজম ও কনস্টিটিউশনাল জুরিসপ্রুডেন্সে এটি দুষ্কর ঘটনা। এটাকে যত পূর্ণভাবে খোঁজা হবে, ততই এটা বাংলাদেশের পক্ষে যাবে।