লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি লাখো মানুষ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৭ পিএম
লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি লাখো মানুষ

টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উত্তরের দুই জেলা— লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এর ফলে ওই অঞ্চলের নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজারো ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।

লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে

তিন দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন, রাত জেগে কাটছে তাদের নির্ঘুম সময়।

রোববার (৫ অক্টোবর) রাতে ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাটির লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে প্লাবিত হয় শত শত ঘরবাড়ি। আজ সোমবার সকাল ৯টায়ও পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তীব্র স্রোতের কারণে এখনো পানি দ্রুত গতিতে লোকালয়ের ভেতর প্রবেশ করছে। তবে দুপুর ১২টার পর থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।

‎‎এদিকে, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার আদিতমারী, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, পাটগ্রাম ও সদর উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে বুকসমান পানি উঠেছে। অনেকে গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে স্পার বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।‎‎

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পানি প্রবেশ করে চরাঞ্চল ও তীরবর্তী এলাকার কাঁচা-পাকা সড়কগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে; যেকোনো সময় সড়ক ও বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।‎‎

মহিষখোচা গোবর্ধন এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মতি মিয়া বলেন, ‘রাত থেকেই পানি রাস্তার ওপর দিয়ে বইছে। এই সড়ক দিয়েই নদী এলাকার মানুষ চলাচল করে। এখন সব যানবাহন বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে গেলে পুরো এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।’

‎‎তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা আমির আলী বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে। রাতেই বাড়িতে বুকসমান পানি উঠে যায়। কোনো রকমে গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, ‘রাত ১২টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯ টায় তা বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। এখন থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।’

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তীরবর্তী এলাকার মানুষদের আগেই সতর্ক করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

‎‎প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলো বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রশাসন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে।’

কুড়িগ্রামে নিমজ্জিত হয়েছে ফসলি জমি

টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ধরলা, বারোমাসিয়া ও নীলকমল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত পড়েছে। অবশ্য পানি বাড়লেও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে।

আজ (সোমবার) বিকেলে ধরলা, বারোমাসিয়া ও নীলকমল নদীর দুই তীরের অববাহিকায় গিয়ে দেখা গেছে, রোপা আমন, শাক-সবজি, বাদামসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন খাল, ডোবা ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

ধরলা ও বারোমাসিয়া নদী পাড়ের বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, অসময়ে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানিতে আমাদের রোপা আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। যদি বৃষ্টি ও উজানের পানি আসা অব্যাহত থাকে তাহলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, এ পর্যন্ত উপজেলায় মোট ২০০ হেক্টর রোপা আমনের খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। অন্যদিকে শাক-সবজির খেত নিমজ্জিত হয়েছে আরও অন্তত ৫ হেক্টর।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, সেক্ষেত্রে এ বছর রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।