পুরাতনের বিদায় আর নতুনের বরিয়া লও


জীবন এক যেন বহতা নদী। এগিয়ে চলাই জীবনের একমাত্র কাজ। পেছনেতাকানোর কোন ফুরসৎ নেই। ভাববার সময় নেই। সময় যে সীমিত। অন্তত: মানুষপ্রজাতির জন্য। প্রতিটি নদীই কালের জীবন্ত সাক্ষী। এর নিজস্ব অনন্য যাত্রা যাইতিহাসের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে অনন্তকাল ধরে এবং চলতে থাকবে আরোবহুযুগ। প্রতিটি নদীরই রয়েছে নিজস্ব একটি গল্প যা প্রায়শই এই সুন্দর পৃথিবীরমৃত্তিকা মায়ের বুকে অপার মহিমায় হামাগুড়ি দিয়ে এঁকে বেঁকে সর্পিলাকারে চলারঅভিজ্ঞতায় পূর্ণ। কি চমৎকার সাদৃশ্য রয়েছে এই নদীদের সাথে মানুষের। শুধুউৎস পথটা একটু ভিন্ন কিন্তু চলার পথটা একই সমীকরণে বাঁধা। নদী বহতাঅনন্তকাল মিশে যায় সাগরের মোহনায়। নদী-এবং মানুষের চলার পথ কখোনইমসৃণ নয়। কখনো খরা মওসুমের মতো তাপ-দাহের অস্থিরতা, কখনো বা আষাঢ়েরঅঝর বৃষ্টিপাত, কিংবা হিমাংকের নিচে শীতের কনকনে ঠাণ্ডা আর তুষারেরভয়ংকর হাঁড়কাঁপানো আঁচড়িয়ে পরা বাতাসের তাণ্ডবটা। তারপরেও সকলপরিস্থিতিকে গ্রহণ করেই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। নদী আরমানুষের যাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতি যতটাই শক্তিশালী হোক নাকেন, চলার পথে যত বাধাই আসুক না কেন,মানুষ আর নদী সবকিছুকে অতিক্রমকরার অদম্য সাহস আর শক্তি রাখে। দুমড়ে গেলেও মানুষ আবার ধীরে ধীরে উঠেদাঁড়ায় এবং ভবিতব্যের দিকে হাত বাড়িয়ে ফের চলতে থাকে। আমাদের মনে রাখাউচিত যখনই জীবন আমাদের চলার পথে কোন বক্ররেখা ছুড়ে দেয় – হাল ছাড়তেনেই, এগিয়ে যেতে হবে, কারণ আমরা কখনই জানি না যে প্রতিটি বাঁকের চারপাশেকি আশ্চর্যজনক বিস্ময় অপেক্ষা করছে। জীবন যে এক বিস্ময়কর এবং নতুনত্বেরছোঁয়ায় আবর্তিত।
জীবন যেন উত্থান-পতনের, সুখ-দুঃখ আর হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্তপ্রকাশ। সময়ের বিবর্তনে জীবন থেকে আরেকটি বছর চলে গেল। আমরাআরেকটি নতুন বছরকে বরন করে নিচ্ছি। এই নতুন আর পুরাতনের সন্ধিক্ষণেদাঁড়িয়ে আমরা হিসেব কষি জীবনের, পাওয়া-না পাওয়ার, সাফল্য-অসাফল্যের, উচ্ছ্বাস-অলসতার, আনন্দ-বেদনার ইত্যাদি ইত্যাদি। গত কয়েক বছর ধরে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সাফল্যের চেয়ে অসাফল্যের পাল্লাটাই বেশী ভারী ছিলো। কতোকিছুই না ঘটে গেছে গত কয়েক বছরে। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্ববাসীর জন্য সৃষ্টিকরেছিলো এক দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়, এই শতাব্দীর ভয়ানক ট্র্যাজিডী। বিশ্ববাসীনির্বাক দৃষ্টিতে বুকে পাথর চাপা দিয়ে জীবনাতিপাত করেছে অব্যক্ত শব্দেরঅনুরণনে। এই ভয়ানক মহামারী সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে অভূতপূর্ব প্রভাবফেলেছে। ৩০শে জানুয়ারি ২০২০ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯-কে পাবলিকহেলথ ইমার্জেন্সি হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়নমানুষের মৃত্যু হয়। কোভিডের ভয়ানক পরিস্থিতি কাটতে না কাটতেই সাড়া বিশ্বেবেজে উঠে যুদ্ধের দামামা। পশ্চিমা রাষ্ট্রপ্রধানদের একগুঁয়েমি, আধিপত্য-বাদীপশ্চিমাদের পররাষ্ট্রনীতি আর ন্যাটোর অগ্রহণযোগ্য ও অনৈতিক পূর্ব ইউরোপেসম্প্রসারণের জের হিসেবে সৃষ্ট ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধ সংকট এবং সর্বশেষইজরাইল-গাজার যুদ্ধের ভয়ানক পরিস্থিতি বিশ্বকে টেনে নিয়ে যায় এক অমানবিকবিপর্যস্ত বিপন্ন পরিস্থিতির দ্বার প্রান্তে। কোভিড আর যুদ্ধের কারণে সাড়া বিশ্বেনেমে আসে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয়। আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, সব কিছুইগ্রাস করতে থাকে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রাকে। তাই ২০২৪ সালটা ছিলোআমাদের সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। নানা চ্যালেঞ্জ আর সমস্যায়জর্জরিত একটি সময়কাল যা বিশ্বমানবটার জন্য নিয়ে আসে মহা বিপর্যয়।বিশ্ববাসীকে গত কয়েক শতাব্দীতেও এমন একটি সময়ের সন্মূখীন হতে হয়নি।
আমরা যারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষ তাদের সকলের জন্য এই বছরটি আরোঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৫ই আগস্ট ঘটে যাওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গনজোয়ারে গত সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকেবাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সহ সার্বিক জীবন যাপনেরপরিস্থিতি। এক ভয়াবহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি দেশবাসী। তত্বাবধায়কসরকার আছে বটে, নানা সংস্কারের কার্যক্রমও চলছে কিন্তু সমাজের সর্বত্র বয়েচলছে এক অসুস্থ সহ্য-হীন বর্বরতা আর অনিয়মের ঝড়। এই ঝড় একদিন যেতাণ্ডবে পরিণত হবে তা হয়তো আমরা অনেকেই টের পাচ্ছি না। তবু বাঙালী যেনহাল ছাড়বার পাত্র নয়।
তাই আজ আমরা নতুন বছরের সূচনালগ্নে অতীতকে স্মরণ করে আগামীর জন্যস্বপ্ন আর প্রত্যাশার চাদর বুনে যাচ্ছি। শতো প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা এগিয়েচলেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে দূর্বার গতিতে। বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো।আমরা এখন ২০২৫-এর দিকে তাকিয়ে আছি, প্রত্যাশা এবং আশার অনুভূতিনিয়ে। আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েছি তা ছিলো ভয়ানক। তবেআমাদের উদ্ভাবনা, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এবং সমস্যা মোকাবেলায় মানসিকঋজুতা ছিলো তীব্র। জাতী হিসেবে বাঙালী শৌর্য ও বীর্যের। আমরা যেন লড়াকুসৈনিক। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে আমরা আবার শিরদাঁড়াকে শক্ত করেদাঁড়াতে পেড়েছি। আমাদের প্রত্যাশা এখন আগামীকে নিয়ে। আসন্ন বছরটিবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতির প্রতিশ্রুতিনিয়ে আসবে সেটাই সমগ্র জাতীর প্রত্যাশা। অতীতে, বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের মতোপ্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো অসংখ্য চ্যালেঞ্জেরমুখোমুখি হয়েছিলো। এইসব প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের জনগণ তাদেরদৃঢ়তার জন্য এগিয়ে যেতে পেরেছে। সময়ের সাথে সাথে,বাংলাদেশ সরকার শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের জীবনে লেগেছেউন্নয়নের ছোঁয়া। বেড়েছে বিনিয়োগ। সমাজের প্রতিটি স্তরে উন্নয়নের ধারাঅব্যাহত রাখার জন্য সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা আজ এক নতুন ভোরের প্রত্যাশায়। অতীতের সমস্ত চ্যালেঞ্জ, ভুল-ভ্রান্তিআর বিশ্ব পরিস্থিতি থেকে সার্বিক শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনটিকে এক নতুন প্রত্যয়আর বিনির্মাণের বাতাবরণে থরে থরে সাজাবো এটাই হোক নতুন বছরেরপ্রত্যাশা। গত বছরের সকল বাধা-বিপত্তিকে ঋজুতার সাথে অতিক্রম করে নিজস্বগতিপথ নির্ধারণে বাংলাদেশের অটল দৃঢ়তার প্রমাণ রেখেছে শুধু বাংলাদেশেরজনগণের জন্যই নয় বরং বিশ্ববাসীর কাছেও। মানব-সম্পদ রপ্তানি, পোশাক শিল্প, কৃষি, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবংপ্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলি বৃদ্ধিতে চামড়া-জাত অবদান রেখেঅর্থনৈতিকভাবে, দেশটি অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নেবিগত সরকারের মনোযোগ ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে দুর্নীতিতেও সয়লাব হয়েপড়েছিলো পুরো দেশটি। অন্যায়, রাজনৈতিক, অত্যাচার, অপহরণ, বাক-স্বাধীনতাকে পিষিয়ে মারা সহ সার্বিক পরিস্থিতি যেন দুর্বৃত্যায়নের অভয়ারন্যেপরিণত হয়েছিলো পুরো দেশটি। ছাত্র আন্দোলনর গন-জোয়ারে সরকারের পতনহয়। তবে বিগত সরকার স্মার্ট ও ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপরেখাকে সামনে রেখেপরিবহন নেটওয়ার্ক এবং জ্বালানি প্রকল্পগুলিকে সারা দেশে আধুনিকীকরণেযথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে এবং এই প্রক্রিয়াটি আগামীতেও অব্যাহত থাকা জরুরী।বাংলাদেশ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলি ছাড়াও নানা ধরনের আভ্যন্তরীণ সমস্যারওসন্মূখীন হয়েছে বার বার। দেশীয় ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, লাগাতার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক চাপ, উচ্চা মুদ্রাস্ফীতি, স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্ত্রাসী কর্মতৎপরতা, বিদেশীদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সহ নানাবিধ সমস্যায় সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশেরজনগণ। আজ নূতন তত্বাবধায়ক সরকার ও জনগণের সামনে বিরাজ করছেনতুন এক বাস্তবতা। সহজ করে বলতে গেলে বলা যায় বাংলাদেশ আজ সত্যিইভালো নেই। দুর্নীতিবাজ সরকারের পতন হয়েছে বটে কিন্তু নতুন বাস্তবতা যেন একমহাসংকট নিয়ে এসেছে। একের পর এক সমস্যা সমাধানে বর্তমানঅন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপে নানা ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতিসত্ত্বেও, দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং শ্রেণী বৈষম্যের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদেরঅন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলগুলির সংপৃক্ততাকে আরো কঠোর হস্তে প্রয়োগ করেএকটি টেকসই সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে। একটি সমৃদ্ধ, দুর্নীতিমুক্ত, অবাধন্যায্য, মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় উন্নীত করতে কয়েকটি বিষয়ে বেশজোড় দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার সহ প্রতিটি জনগণকে সম্মিলিতভাবে সমাজেরপ্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।
প্রথমত: টেকসই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমান রাজনৈতিকঅস্থিতিশীলতার অচলায়তন ভেদ করে একটি অবাধ, সুস্থ এবং জনগণেরঅংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আগামীর সরকার দৃঢ় মনোভাবের সাথেজাতীর স্বার্থে বর্তমানের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই জাতীরপ্রত্যাশা। বিগত বছরের উন্নয়নের গতিপথকে অনুসরণ করে বাংলাদেশ টেকসইউন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে এবং দুষ্টপাতগ্রস্থ রাজনীতিকেব্যবসাীয়ক এবং উন্নয়নের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতিরসাথে সাথে উন্নত বিশ্বের মডেলে গ্রিন অর্থনৈতিক প্রকল্পে উদ্যোগ নিতে হবে।বাংলাদেশ এখন সময়ের বিবর্তনে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশেপা দিচ্ছে। বাংলাদেশে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এখন এমন এক পর্যায়ে যেখানেপ্রযুক্তি অগ্রগতির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ফিন-টেক, ই-কমার্স, এবং স্মার্টগভর্নেন্সের উদ্ভাবনগুলি সমাজের সর্বত্র নাগরিকদের পরিষেবার সাথে জড়িতহওয়ার জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নিশ্চিত। একটিন্যায়পরায়ণ সমৃদ্ধ সমাজব্যবস্থার একটি মৌলিক উপাদান হলো সামাজিকঅন্তর্ভুক্তি ও সমতা। কাউকে পিছিয়ে না রাখার বাধ্যবাধকতা স্বীকার করে, সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদেরসকলের প্রত্যাশা সরকার সমাজের সর্বস্তর থেকে ধীরে ধীরে বহুমাত্রিক দুর্নীতি ওদূর্বৃত্তায়নকে কঠোর হস্তে দমন করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা এবংদারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে মনোযোগ দেবে যাতে উন্নতির সুফল সুষমভাবে বণ্টনকরা হয়।
আরেকটি ব্যাপারে সরকারের বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন সেটা হলো আঞ্চলিক ওআন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে সক্রিয়ভাবেজড়িত থাকবে এটাই জাতী হিসেবে জনগণের প্রত্যাশা। জলবায়ু পরিবর্তনমোকাবেলা, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জন্যসহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অগ্রভাগে থাকবে। তবে একটি সমৃদ্ধজাতী হিসেবে আমাদের সকলের প্রত্যাশা একটি শিক্ষা ও সংস্কৃতিভিত্তিনবজাগরণ। অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্র ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এখন একটিসাংস্কৃতিক নবজাগরণের জন্য প্রস্তুত। শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য এবং ঐতিহ্যেরবাতাবরণে বেড়ে উঠা এই জাতী আবার এক নতুন অবয়বে জেগে উঠবে। একটিসমৃদ্ধশালী সমাজের মৌলিক প্রতিষ্ঠান হলো শিক্ষা যা একটি জাতীর মেরুদণ্ড।জাতীর উন্নয়ন, প্রগতি ও নৈতিক বিকাশে শিক্ষা অপরিহার্য। সুস্থ ও গঠনমূলকশিক্ষার মাধ্যমেই মানব উন্নতির মৌলিক অধিকার বৃদ্ধি পায়। একজন ব্যক্তিরচিন্তায়, চেতনায়, মননে ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে আনে ৠদ্ধতা। শিক্ষারমাধ্যমে একজন ব্যক্তি পুরনো অজ্ঞানতা থেকে মুক্তি পায় এবং নতুন ও আধুনিকধারণার সাথে পরিচিত হয়। তবে সেই ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা হতে হবেনৈতিক, প্রায়োগিক ও সমসাময়িক। একটা বিষয় আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তুলেআর তা হলো যতোই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে, যতোই মানুষ প্রাতিষ্ঠানিকশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, এই বিশ্বায়ন আর প্রাপ্তিটার সমাজে মানুষ ততইআত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগছে এবং নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হচ্ছে। যাসত্যিকারের সুশিক্ষার পরিপন্থী। তাই শিক্ষাকে হতে হবে নৈতিক ও রাজনৈতিকপক্ষপাত মুক্ত।
জাতীয় উন্নয়নে সংস্কৃতির রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। সংস্কৃতি একটি সমৃদ্ধএবং বিস্তৃত শব্দ। সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি জাতি আত্মসম্মান ও আত্মপরিচয়অর্জন করতে পারে। আমাদের চিন্তা, চেতনায়, আচার-আচরণে, কথা-বার্তায়, চলনে-বলনে, পোশাকে-আশাকে, কর্মে-চাঞ্চল্যে, রাগে-বিরাগে সর্বত্র সরব বিচরণসংস্কৃতির যা একটি জনগণের চিন্তা, আদর্শ, মূল্য, সংস্কার, ও সামাজিক অবস্থাননির্ধারণ করে। একটি জাতীর ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃতির অংশীদার। ভাষারমাধ্যমেই একটি সমাজ বা জাতীর আদর্শ, মূল্যবোধ, ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশঘটে। আর সাহিত্যিক ও শব্দশৈলীর মাধ্যমে মানবিক এবং রূপকল্পনায় আদর্শতৈরি হয়। সংস্কৃতি মানব জীবনের মানদণ্ড এবং নীতি নির্ধারণ করতে সাহায্যকরে। একটি সমাজকে সমৃদ্ধ ও ঋজু করে। এই কারণে, সংস্কৃতি জাতীর উন্নতিরসাথে অবিভাজ্যভাবে জড়িত রয়েছে এবং এটি একটি জনগণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আরেকটি দিকেআমাদের মনোযোগ দিতে হবে তা হলো সংখ্যালঘুদের অধিকারকে পূর্ণ মর্যাদায়প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ৭১এর চেতনাকে সমুন্নত রেখে যে কোন মূল্যে জাতীয়সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ভেদা-ভেদ এবং অসমসামাজিক ও রাজনৈতিকে পরিহার করতে হবে।
নতুন বছর আমাদের প্রত্যাশাকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাক, যেখানে একটিঐক্যবদ্ধ এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আমাদের জাতির সামনেচ্যালেঞ্জ যতই কঠিন হোক, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সঠিক এবং প্রয়োজনীয়পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিটি বাধা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। তাদের দৃঢ় নেতৃত্বএবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা আমাদের জাতিকে একটি স্থিতিশীল ওঅগ্রগতির পথে পরিচালিত করবে। আমাদের সকলের দায়িত্ব যে আমরা বিভেদভুলে, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, এবং সম্প্রদায়ের সীমানা পেরিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকি। এই মাটিআমাদের সবার, এটি আমাদের শিকড়, আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। আমরাএকসঙ্গে দাঁড়াব, যেন কেউ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় প্রাচীর ভাঙতে না পারে। নতুনবছরটি কেবল একটি সময়ের সূচনা নয়, এটি আমাদের প্রতিশ্রুতির নবায়ন – আমাদের বাংলাদেশকে আরও উন্নত, ন্যায়পরায়ণ এবং মানবিক দেশ হিসেবেগড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের উদ্ভাবনী চিন্তা, আমাদেরশ্রমশক্তি, এবং আমাদের মানসিক দৃঢ়তা যে কোনো চ্যালেঞ্জকে পরাভূত করতেযথেষ্ট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহায়তায় জাতি একটি নতুন গতিপথে পাদেবে, যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি এগিয়ে নিয়ে যাবে একটিআধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ। আমরা একসাথে কাজ করব যেন সকল ধর্ম, বর্ণ, এবং সম্প্রদায়ের মানুষ এই জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। আমাদেরপ্রত্যাশা একটি এমন বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ পায় এবংশান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিটি ঘরে পৌছায়। এই জাতি আমাদের সবার – আমাদের রক্ত, আমাদের ঘাম, এবং আমাদের স্বপ্নের প্রতিফলন। একসঙ্গে আমরা একটি দুর্গগড়ে তুলব যা কোনো চ্যালেঞ্জকে ভাঙতে পারবে না। ঐক্যের শক্তিতে আলোকিতহবে আমাদের সোনার বাংলাদেশ।
ড. পল্টু দত্ত
শিক্ষক, গবেষক এবং কলামিষ্ট