বাংলাদেশের আইনে পথ কুকুর-বিড়াল হত্যার শাস্তি কী?
পথে থাকা কুকুর বিড়ালদের প্রতি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের নৃশংসতা বাড়ছে দিনকে দিন। গেল মাসে একাধীক পথ বিড়ালের চোখ উপরে ফেলা, চলতি মাসের শুরুতেও বগুড়াতেও একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যা ও পোড়ানোর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবারে সামনে এলো আরও এক নৃশংস ঘটনা।
পাবনার ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে মেরে ফেলার ঘটনা আলোরণ তুলেছে দেশজুড়ে। এমন পাশবিক ও অমানবিক আচরণে হতবাক সবাই।
একসাথে ৮ সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় এক মায়ের আর্তনাদ ও দিকবেদিক ছোটাছুটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলেছে সমালোচনার ঝড়।
ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত নারী নিশি বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। মামলার প্রেক্ষিতে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে তাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বেওয়ারিশ কুকুর বিড়াল হত্যার সাজা কী? মালিকবিহীন এসব পথ কুকুর বা বিড়ালকে হত্যা, নির্যাতন বা আঘাত করলে দেশের আইনে আদৌ শাস্তির বিধান আছে কি না? পথ কুকুরের নিরাপত্তা বা আইনি প্রতিকার সাধারণ ব্যক্তি নিজে চাইতে পারবে কি না? না কি পুলিশই নিজে থেকে ব্যবস্থা নিতে পারবে?
বাংলাদেশের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মামলা গ্রহণ করবে না। অর্থাৎ, চাইলেই যে কোনো ব্যক্তি এই ধরনের অপরাধের জন্য আইনি প্রতিকার বা মামলা করতে পারবেন না।
এই আইনের প্রয়োগ সাধারণ মানুষদের জন্য নয়। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের কোনো ভেটেরিনারি সার্জন অর্থাৎ অধিদপ্তরের লোক (কর্তৃপক্ষ) ছাড়া মামলা করার আইন বাংলাদেশে নেই।
(পেনাল কোড) ৪২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি প্রাণি হত্যা করে বা ক্ষতি করে এবং যে কোনো প্রাণির মূল্য যদি ৫০ টাকা বা তার বেশি হয় তাহলে ওই ব্যক্তির পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
মালিকবিহীন কোনো প্রাণীকে কেউ যদি হত্যা করে তবে সেটা হবে অপরাধ, এই অপরাধে শাস্তির বিধানও আছে।
আইনের ছয় ও সাত নম্বর ধারায় স্পষ্ট করে বলা রয়েছে প্রাণির প্রতি কী কী আচরণ নিষ্ঠুর হিসেবে বিবেচনা করা হবে। অঙ্গহানি করা এবং বিষ প্রয়োগে প্রাণি হত্যাকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
যদি কেউ এ সমস্ত ঘটনা ঘটায় তবে তার জন্য প্রথমবার ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা জরিমানা। আর যদি দ্বিতীয়বার করে তাহলে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে আইনে।
বিপি/এনএ
