‘লাশ পাশের ঘরে রেখে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন দুজন’

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৫ পিএম
‘লাশ পাশের ঘরে রেখে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন দুজন’
দুই আসামি জরেজুল ইসলাম ও শামিমা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

সময় গড়াতেই বেরিয়ে আসছে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। মূলত ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায়ের লোভে পড়ে আশরাফুলকে হত্যা করেন জরেজুল ইসলাম ও শামিমা আক্তার।এ দুজন সম্পর্কে প্রেমিক-প্রেমিকা বলে জানা গেছে।

র‍্যাব জানায়, হত্যার পর লাশ ২৬ খণ্ড করার আগে প্রচুর ইয়াবা সেবন করেন জরেজ। এরপর হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাতে বন্ধু আশরাফুলকে হত্যা করেন তিনি। এমনকি লাশ পাশের ঘরে রেখেই অন্য ঘরে রাত কাটান জরেজ ও শামিমা এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা শামিমা আক্তার ওরফে কোহিনুরকে (৩৩) আলামতসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

তার দেওয়া প্রাথমিক স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

তিনি জানান, ১৪ নভেম্বর সকালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে শামিমাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইলিং এবং লাশ গুমের পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন।

লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, গত ১১ নভেম্বর রাতে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। তিনি প্রতিবেশী বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ব্যবসায়িক পাওনা আদায়ের জন্য ঢাকায় আসেন। তবে ১২ নভেম্বর সকাল থেকে তার পরিবার তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।

১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকার পানির পাম্প সংলগ্ন স্থানে দুটি নীল রঙের ড্রাম থেকে এক ব্যক্তির ২৬ টুকরো করা লাশ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণে লাশের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ।

এদিকে গ্রেফতার শামিমা আক্তারের মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি জরেজের সঙ্গে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। জরেজ তাকে জানায়—তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব। এর মধ্যে ৭ লাখ নেবেন জরেজ, ৩ লাখ পাবেন শামীমা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার এক মাস আগে থেকেই শামিমা আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করেন। নিয়মিত অডিও-ভিডিও কলে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তাদের ঘনিষ্ঠতাও বাড়ে।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় আসার পর জরেজ ও আশরাফুলের সঙ্গে ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন শামিমা। সেখানে ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশে আশরাফুলকে মাল্টার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তিনি অচেতন হওয়ার পর জরেজ বাইরে থেকে শামিমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করেন।

শামিমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর দুপুরে এসব ঘটনা ঘটে। ওই সময় আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন এবং মুখে কসটেপ লাগান। এরপর ইয়াবা সেবনের উত্তেজনায় জরেজ হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। পরে লাশ পাশের ঘরে রেখেই দুজন রাত কাটান এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন।

র‌্যাব জানায়, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় আছে কি না—তা প্রধান আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পরিষ্কার হবে।

পাশাপাশি, শামিমা আক্তারকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।