এবার ‘বালিশ কাণ্ডে’ উত্তপ্ত নেপাল
বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বালিশের অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে যে ‘বালিশ কাণ্ড’ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল, এবার প্রায় একই ধরনের বিশাল আর্থিক অনিয়মের ঘটনা সামনে এসেছে প্রতিবেশী দেশ নেপালে।
নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের খবর অনুযায়ী, নেপালের দুর্নীতি দমন কমিশন (সিআইএএ) রোববার (৭ ডিসেম্বর) পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে বিশেষ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। এই প্রকল্পটিতে চীনা অর্থায়ন ছিল।
নগদ অর্থের হিসাবে এটি নেপালের বিশেষ আদালতে দাখিল করা সবচেয়ে বড় দুর্নীতি মামলা। এই মামলায় মোট ৫৫ জন ব্যক্তি এবং একটি কোম্পানিকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন: পাঁচজন সাবেক মন্ত্রী, দশজন সাবেক সচিব ও অন্যান্য শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির দুই শীর্ষ কর্মকর্তা।
কমিশনের তদন্তে দেখা গেছে, অভিযুক্তরা এই প্রকল্পের জন্য কৃত্রিমভাবে ব্যয় বাড়িয়ে অবৈধ আর্থিক লেনদেন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযুক্ত ৫৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮৩৬ কোটি নেপালি রুপি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে।
সিআইএএ-এর অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য অনুমোদিত ব্যয় ‘ক্ষতিকর অভিপ্রায়’ নিয়ে সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে প্রায় ৭ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার (২০১৮ সালের ১০ আগস্টের বিনিময় হার অনুযায়ী, যা ৮৩৬ কোটি নেপালি রুপির সমান) অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পটি বহু বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অস্বচ্ছ দরপত্র এবং নানা বিতর্কের শিকার ছিল। ১৯৭৫ সালে জমি অধিগ্রহণের পর বহুবার পরিকল্পনা সংশোধন ও স্থবিরতার মধ্য দিয়ে এটি এগিয়েছে।
কমিশন চীনা কোম্পানি চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি শুরু থেকেই ‘খারাপ উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ প্রকল্পটি দখলের চেষ্টা করেছে।
২০১১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বার্ষা মান পুন গোপনে সিএএমসি-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন, যা পরে সংসদীয় কমিটিতে ফাঁস হলে প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়।
২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দরপত্র, ব্যয় নির্ধারণ ও পরামর্শক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ঘটে। দরপত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানের ‘বিশেষ সুবিধা’ নিশ্চিত করা হয়।
সিএএমসি প্রথমে প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার প্রস্তাব করেছিল, যেখানে নেপাল সরকারের নিজস্ব প্রাক্কলন ছিল মাত্র ১৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত ২১ কোটি ৫৯ লাখ ডলারে অনুমোদন পায়।
কমিশনের দাবি, প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রযুক্তিগত সমীক্ষা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এই ‘ভুল প্রতিবেদন’-এর সঙ্গে কয়েকজন বিশেষজ্ঞও জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে নেপালের সাবেক পর্যটনমন্ত্রী পোস্ত বাহাদুর বোগাটি, ভীম প্রসাদ আচার্য, রাম কুমার শ্রেষ্ঠ, দীপক চন্দ্র আমাত্য এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী রাম শরণ মহাত-সহ অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। এছাড়া, চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান ওয়াং বো এবং আঞ্চলিক জেনারেল ম্যানেজার লিউ শেংচেং-কেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিপি/এনএ
