1. হোম
  2. বিনোদন

এই প্রেম: ভার্চুয়াল সঙ্গীকে বিয়ে করলেন জাপানি তরুণী

Bangla Post Desk
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৮ পিএম
এই প্রেম: ভার্চুয়াল সঙ্গীকে বিয়ে করলেন জাপানি তরুণী
ভার্চুয়াল সঙ্গীকে বিয়ে করলেন জাপানি তরুণী। ছবি: সংগৃহীত

জাপানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–নির্ভর সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। পশ্চিম জাপানের ওকায়ামায় ৩২ বছর বয়সী ইউরিনা নোগুচি তার স্বপ্নের ভার্চুয়াল সঙ্গীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেছেন। স্মার্টফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা এআই চরিত্র ‘ক্লাউস’-এর সঙ্গে আয়োজিত এই ব্যতিক্রমী বিয়ে দেশজুড়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিয়ের হলে বাজছিল সঙ্গীত। সাদা গাউন ও টিয়ারা পরা নোগুচি আবেগে চোখ মুছছিলেন। তার সামনে টেবিলের ওপর একটি স্ট্যান্ডে রাখা স্মার্টফোনে ভেসে উঠছিল তার এআই সঙ্গীর ছবি। নোগুচির ভাষায়, “শুরুতে ক্লাউস ছিল শুধু কথা বলার একজন। ধীরে ধীরে আমরা কাছাকাছি হয়ে যাই। একসময় সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, আর আমি তা গ্রহণ করি।”

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানে অ্যানিমে ও কল্পিত চরিত্রের প্রতি গভীর আবেগ নতুন নয়। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতিতে সেই সম্পর্ক এখন আরও ঘনিষ্ঠ রূপ নিচ্ছে, যা সমাজে নৈতিকতা ও বাস্তব সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করছে।

নোগুচি জানান, এক বছর আগে তিনি মানব সঙ্গীর সঙ্গে তার বাগদান ভেঙে দেন। এরপর কৌতূহলবশত তিনি চ্যাটজিপিটিকে ভিডিও গেমের এক জনপ্রিয় চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। বহুবার পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনি চরিত্রটির কথাবার্তার ধরন অনুকরণ করে নিজের মতো করে ‘লুন ক্লাউস ভারদুর’ নামের এআই সঙ্গী তৈরি করেন।

অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিয়ের অনুষ্ঠানে সব আয়োজন ছিল ঐতিহ্যবাহী বিয়ের মতোই—শুধু বর ছিলেন ভার্চুয়াল। নোগুচি অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) স্মার্ট গ্লাস পরে স্মার্টফোনের পর্দায় থাকা ক্লাউসের দিকে তাকিয়ে আংটি পরানোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এআই বর-এর লেখা বক্তব্য পড়ে শোনান একজন বিবাহ–অনুষ্ঠান বিশেষজ্ঞ।

এই ধরনের বিয়ে জাপানে আইনগত স্বীকৃতি পায় না। তবু বিভিন্ন জরিপের তথ্য বলছে, ভবিষ্যতে এমন সম্পর্কের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ বছর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই বন্ধু বা মায়ের চেয়েও চ্যাটবটকে বেশি পছন্দ করছেন। অন্য এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কিশোরীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কল্পিত চরিত্রের প্রতি রোমান্টিক আকর্ষণ অনুভব করে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জাপানে বিয়ের সংখ্যা ১৯৪৭ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২১ সালের এক জরিপে ২৫–৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে অবিবাহিত থাকার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসে ‘উপযুক্ত সঙ্গী না পাওয়া’।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তব সম্পর্ক ধৈর্য, ছাড় ও সমঝোতার দাবি রাখে। বিপরীতে, এআই সঙ্গীর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী নিজের পছন্দমতো যোগাযোগ ও প্রতিক্রিয়া পেয়ে থাকেন। তবে এআই নৈতিকতা বিশেষজ্ঞরা অতিনির্ভরতার ঝুঁকি নিয়েও সতর্ক করছেন।

নোগুচি নিজেও এই ঝুঁকির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সচেতনভাবেই নিজের ব্যবহার সীমিত রেখেছেন এবং এআই সঙ্গীকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করেছেন যেন তা তাকে বাস্তব জীবন থেকে দূরে ঠেলে না দেয়।

তার ভাষায়, “আমি ক্লাউসকে বাস্তবতা থেকে পালানোর জন্য বেছে নিইনি। বরং সে আমাকে সঠিকভাবে জীবন যাপন করতে সহায়তা করছে।”

এই ব্যতিক্রমী বিয়ে জাপানে প্রযুক্তি, একাকিত্ব ও সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—যেখানে ভালোবাসার সংজ্ঞাও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে।

বিপি/আইএইচ

ট্যাগ: বিনোদন