ছেলের অপরাধের অভিযোগে দুই মায়ের নাকে খত, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার


ফেনীর পাটগাছিয়া উপজেলায় দুই কিশোরের মুরগি ও কবুতর চুরির অপরাধে তাদের মায়েদের নাকে খত দিতে বাধ্য করার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ মে) মধ্যরাতে ফেনী সদর উপজেলার পশ্চিম বিজয় সিংহ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার দেলোয়ার হোসেন (৫০) ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি। তিনি ফেনী সদর উপজেলার পশ্চিম বিজয় সিংহ গ্রামের বাসিন্দা।
এর আগে, বুধবার বিকেলে দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান আসামি ও ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি মাঈন উদ্দিন ওরফে জসিমকে (৪৮) আসামি করে সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪২), মো. রিসাল (২৫), মাঈন উদ্দিন (৪২), গিয়াস উদ্দিন (৪০), মাঈন উদ্দিন সোহাগ (৩৮), মো. আজাদ (৪১), অনিক (৩৫), শামছুর রহমান (৪২), ইব্রাহিম খলিল (৬২), নেজাম (৩৪), মো. সোহেল (৩২) প্রমুখ।
২ মে রাতে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে দুই কিশোরের নামে মুরগি ও কবুতর চুরির অভিযোগ এনে তাদের ময়েদের নাকে খত দিতে বাধ্য করা হয়। এর দুই দিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। ঘটনার পর ৫ মে দল থেকে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে বহিষ্কার করে জেলা বিএনপি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নেতৃত্বে থাকা স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের দাবি, চুরির ঘটনায় জনরোষ থেকে বাঁচাতে উপস্থিত কয়েকজনের দাবির প্রেক্ষিতেই দুই অভিযুক্তের মায়েদের নাকে খত দিতে বলেছিলেন তিনি।
ভুক্তভোগি পরিবারগুলো বলছে, কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই তাদের সন্তানদের ফাঁসানো হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানান যায়, প্রধান আসামি ও ২ নম্বর আসামির নেতৃত্বে উপস্থিত লোকবলের সামনে একতরফা মিথ্যা সালিস করে সন্তানের চুরির অপরাধে বাদীকে নাকে খত দিতে বলা হয়। নাকে খত দিতে অস্বীকৃতি জানালে জবরদস্তি ও শ্লীলতাহানি করে তাকে নাকে খত দিতে বাধ্য করেন দেলোয়ার হোসেন।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার প্রধান আসামি দেলোয়ার হোসেনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ফেনী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে ছেলেদের অপরাধে সালিস ডেকে মায়েদের নাকে খত দিতে বাধ্য করায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অপরাজিতা দাশের আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘটনাটি তদন্ত করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ সাইদুর রহমানকে নির্দেশ দেন। বৈঠকে উপস্থিত সাক্ষীদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দি ধারণ, ভাইরাল হওয়া সংবাদ ও ভিডিও চিত্রের সত্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।