বেটিংয়ে জড়িয়ে বরখাস্ত ১৪৯ রেফারি

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০১ এএম
বেটিংয়ে জড়িয়ে বরখাস্ত ১৪৯ রেফারি
ছবি : সংগৃহীত

টাকার কাছে হার মানল সততা। বেটিংয়ে যুক্ত ১৪৯ রেফারির ওপর নেমে এলো নিষেধাজ্ঞা। যে মানুষগুলো খেলার মাঠে ন্যায়বিচারের প্রতীক হয়ে থাকার কথা ছিল, তারাই কিনা নিজেদের জড়িয়েছেন ঘৃণ্য বেটিংয়ের অন্ধকার জগতে। তুরস্কের ফুটবল ময়দানে এই চাঞ্চল্যকর খবরটি যেন গোটা ক্রীড়াজগতে আলোরণ সৃষ্টি করেছে।

কয়েকদিন আগেই তুরস্ক ফুটবল ফেডারেশন (টিএফএফ) এক ভয়ংকর তথ্য ফাঁস করেছিল: দেশের ৫৭১ জন রেফারির মধ্যে ৩৭১ জনেরই বেটিং সাইটে কমপক্ষে একটি করে অ্যাকাউন্ট রয়েছে! এবার সেই সন্দেহের মেঘ আরও ঘনীভূত হলো। সরাসরি বেটিংয়ে অংশ নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগে ১৪৯ জন রেফারি ও সহকারী রেফারিকে বরখাস্ত করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিল টিএফএফ।

গতকাল (শুক্রবার) টিএফএফ ঘোষণা করেছে, পেশাদার লিগের এই ম্যাচ অফিসিয়ালদের ৮ মাস থেকে শুরু করে ১২ মাস পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার খাঁড়াতলে আনা হয়েছে। আরও তিনজনের বিরুদ্ধে চলছে নিবিড় তদন্ত।

ফুটবলের প্রতি এমন চরম বিশ্বাসঘাতকতায় মর্মাহত টিএফএফ সভাপতি ইব্রাহিম হাজিওসমানুগ্লু এক আবেগময় বিবৃতিতে বলেন, “তুর্কি সকারের খ্যাতি দাঁড়িয়ে আছে এর শুদ্ধতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সততা বজায় রাখার চেষ্টার ওপর। যেকোনো ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের মূল্যবোধ ও নীতিমালার সামান্যতম ভঙ্গ করলেও তা আস্থা লঙ্ঘনের শামিল।”

তিনি আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সাম্প্রতিক এই অনুসন্ধানে রেফারিদের যেভাবে বেটিং কার্যক্রমে জড়ানোর প্রমাণ মিলেছে, তা ফুটবল স্পিরিটের বিরোধী এবং সম্পূর্ণ বেমানান। এটি কেবল একটি সাধারণ নীতিমালা লঙ্ঘন নয়, যা আমাদের বিবেকবোধকে আহত এবং ন্যায়বিচারকে কলুষিত করেছে।”

সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান হ্যাবারতুর্কের সূত্র অনুযায়ী, এই দুর্নীতির কালো ছায়া কেবল রেফারিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন ক্লাব এবং ৩৭০০ ফুটবলারের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে!

আগে জানা গিয়েছিল, অভিযুক্তদের মধ্যে ১০ জন রেফারি ১০ হাজারেরও বেশি ম্যাচে বাজি ধরেছেন! এমনকি তাদের মধ্যে একজন মাত্র পাঁচ বছরে ১৮ হাজার ২২৭টি ম্যাচে বাজি ধরার মতো অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটিয়েছেন। বেটিং অ্যাকাউন্টে যুক্ত ছিলেন ৭ জন সর্বোচ্চ পর্যায়ের রেফারি, ১৫ জন সহকারী রেফারি এবং ক্লাসিফাইড পর্যায়ের ৯৪ জন সহকারী রেফারি।

তুর্কি ফুটবলে ঘটে যাওয়া এই নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি প্রমাণ করে দিল যে, খেলার মাঠে টাকার প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে। যারা ম্যাচের শৃঙ্খলা রক্ষা ও সততা বজায় রাখার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের এমন নৈতিক স্খলন কেবল একটি দেশের ফুটবলকেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে খেলার প্রতি দর্শকের বিশ্বাসকেও আঘাত করে।

টিএফএফ-এর এই কঠোর পদক্ষেপ এক পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে যে, ফুটবলের পবিত্রতা রক্ষায় ভবিষ্যতে এই ধরনের বিশ্বাসঘাতকতার কোনো স্থান নেই এবং এই ঘটনা হয়তো অন্যান্য ক্রীড়া সংস্থাকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে।