ভূমিকম্পে ঢাকার বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের করণীয়
ঢাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এ শহরে ৫ থেকে ৭ তলার অ্যাপার্টমেন্টগুলো শহরের বাসিন্দাদের প্রধান আবাসন। গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ৫.৭ মাত্রার এক ভূমিকম্প কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে ঢাকার বহতল ভবনগুলোতে থাকা প্রতিটি মানুষের মনে।
সেই ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই ফের ৩.৩ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে বড় রকমের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ।
শুক্রবারের (২১ নভেম্বর) সেই ভূমিকম্প সকলের মনেই একটাই ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে, কী হবে যদি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢাকা পরিণত হয় ধংসস্তুপে? কীভাবে বা ক্ষয়ক্ষতির হার কমিয়ে জীবন বাঁচাতে পারবেন ঢাকার বহুতল ভবনের বাসিন্দারা?
ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার পূর্বাভাস কোনোভাবেই দেয়া সম্ভব না। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
যদি বহুতল ভবনের কোনো বাসিন্দা নিচতলা, দ্বিতীয় তলা কিংবা তৃতীয় তলায় থাকেন, তাহলে ধরে নিন আপনি সবচেয়ে ভাগ্যবান।
কম্পন শুরু হলেই দরজা খুলে রাখুন (দরজা জ্যাম হলে বের হতে পারবেন না) ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় চলে আসুন। রাস্তায় এসে বিল্ডিং-এর গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না – ১০০ ফুট দূরে সরে যান। ভবন ছেড়ে খোলা মাঠে গিয়ে অবস্থান নিবেন।
৪র্থ তলায় থাকেন, তাহলে এখনা এপনাকে অবলম্বন করতে হবে সতর্কতা। কম্পন শুরু হলে দৌড়াদৌড়ি না করে টেবিল বা বিছানার নিচে ঢুকে যাবেন।
তবে সবচেয়ে বিপদে থাকেন উপরের তলার (৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম) বাসিন্দারা। প্রায়ই ভূমিকম্পের সময় সিঁড়ি ধরে নেমে আসার চেষ্টা করে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো নিচের তলা ভেঙে উপরের তলা পড়তে পারে। কম্পন শুরু হলে সিঁড়ি বা বারান্দায় যাওয়া বিপজ্জনক। বের হওয়ার চেষ্টা করবেন না। সিঁড়িতে লোকের ভীড়, ধাক্কাধাক্কি, অন্ধকার – ৯০% মানুষ সিঁড়িতেই মারা যায় বা আহত হয়।
সেক্ষেত্রে ছাদের কাছাকাছি বাসা না হলে আপনি এখনই নিন বাড়তি কিছু পদক্ষেপ। কম্পন শুরু হলে ঘাবড়ে যাবেন না। বেডরুমে থাকলে খাটের নিচে, ড্রয়িং বা ডাইনিং-এ থাকলে মজবুত টেবিলের নিচে, কোনো আশ্রয় না পেলে দেয়ালের কোণে বসে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
বাথরুম নিরাপদ হতে পারে; বালতি উল্টো করে মাথার ওপর দিয়ে বসে থাকলে অনেকে বেঁচেছে। হেলমেট, বালতি, ঝুড়ি, ব্যাগ—যা খুঁজে পাবেন মাথার ওপর রাখুন।
আজ থেকেই যা করবেন: বিছানার পাশে জুতা রাখুন, বেডের পাশে হেলমেট ও হুইসেল রাখুন, ভারী আলমারি, টিভি বা ফ্রিজের অবস্থান এমন রাখুন যাতে পড়ে গেলে আঘাত না হয়,গ্যাস সিলিন্ডার চেইন দিয়ে বেঁধে রাখুন, দরজা কখনো অটো-লক হবে না, চাবি কাছে রাখুন।
মনে রাখার চেষ্টা করবেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে গেলে চিৎকার করবেন না—ধুলো ঢুকে গলা শুকিয়ে যাবে চিৎকার করলে। সাথে হুইসেল থাকলে বাজান, না থাকলে দেয়ালে বা পাইপে ৩ বার টোকা দিন (আন্তর্জাতিক রেসকিউ সিগন্যাল), মোবাইল টর্চ অন রাখুন, কথা বলবেন না—ব্যাটারি বাঁচান, মুখে কাপড় চেপে ধরুন, ধুলো ঢোকা কমবে।
