শাহজালাল বিমানবন্দর: নতুন টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেন উপদেষ্টা

Bangla Post Desk
ইউএনবি
প্রকাশিত:০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩২ এএম
শাহজালাল বিমানবন্দর: নতুন টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেন উপদেষ্টা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) নতুন টার্মিনালে যাত্রীসেবার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। শিগগিরই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) উপদেষ্টা বশির ইউএনবি জানান, সেবার মান নিশ্চিত করতে সরকার নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালে বিমানের পাশাপাশি আরেকটি আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারকে অনুমোদন দিতে পারে।

তিনি বলেন, 'গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং শিগগিরই তা প্রকাশ করব।' আগামী সপ্তাহেই এ ঘোষণা আসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, 'আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সেবা উন্নত করা। আমরা সমন্বিত একটি পদ্ধতি চাই।'

বিমান প্রতিযোগিতাহীন হয়ে যাক সেটি না চাইলেও যাত্রীসেবাও যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেও জোর দিয়েছেন উপদেষ্টা। 

উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ হয়তো এখনই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারবে না, কিন্তু নতুন টার্মিনালে অন্তত মর্যাদাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য মানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাই তারা প্রতিযোগিতা আনার পরিকল্পনা করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, নতুন নির্মিত তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা নিয়ে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি) এবং একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে তিনদিনব্যাপী আলোচনার চূড়ান্ত পর্ব বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে।

প্রথম দুটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছেন সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, আর উপদেষ্টা বশির শেষ দিনের আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন। লেনদেন উপদেষ্টা হিসেবে আন্তর্জাতিক অর্থ করপোরেশন (আইএফসি) সহ সব স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

সিএএবি সূত্র জানায়, বিমানের জন্য দুই বছরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দায়িত্ব দেওয়ার নীতি সিদ্ধান্ত জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। তারা আরও বিস্তৃত পরিচালন ও রাজস্ব ভাগাভাগির অধিকার চাইছে।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থায় বিমানের সাথে টার্মিনাল পরিচালনাকারী বেসরকারি অংশীদারের মধ্যে একটি সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) স্বাক্ষরিত হবে।

পিপিপির ভাষ্যে, যদি বিমান দুই বছরের মধ্যে কর্মদক্ষতার মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে অপারেটর বিমানের পাশাপাশি একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানিকে নিয়োগ দিতে পারবে।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত বিষয়। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারও বিমানের সেবার মান নিয়ে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর উদ্বেগের পর একটি জাপানি কোম্পানিকে আনার ইঙ্গিত দিয়েছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশে সব বিমানবন্দরে একমাত্র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কাজ করছে। প্রায় ৪০টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের জন্য সেবা দিয়ে বছরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আয় করছে।

কর্মকর্তাদের দাবি, নতুন সরঞ্জাম ও জনবল যুক্ত হওয়ায় সেবার মান উন্নত হয়েছে। তবে যাত্রী ও এয়ারলাইনগুলো এখনও দেরি, অদক্ষতা এবং মাঝেমধ্যে চুরির অভিযোগ তোলে।

কিছু বিদেশি এয়ারলাইন্স বিমানের ফি দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের কর্মী নিয়োগ করে সেবার মান বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

তবে বিমানের কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী। তাদের দাবি, ২০২৩ সালে তারা ৫৭ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে এবং গত এক বছরে ৩ হাজার ৬০০ নতুন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট কেনায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আরও ক্রয় ও জনবল নিয়োগ চলছে।

বিমানের এক মুখপাত্র বলেন, বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্টে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র যুক্ত হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৭০ প্রকার নতুন সরঞ্জাম যুক্ত হবে।

তবে আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছেড়ে দিলে 'রাষ্ট্রীয় রাজস্বে বড় ক্ষতি' হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) বড় অঙ্কের অর্থায়নে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এইচএসআইএ-এর তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা ২ কোটি ৪০ লাখে উন্নীত হবে এবং কার্গো পরিবহন ক্ষমতা দাঁড়াবে ১২ লাখ টনে।

২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ টার্মিনালে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি প্রস্থান ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৩টি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক।