বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান সরকারি চাকরি ফিরে পেতে যাচ্ছেন। সব প্রক্রিয়া শেষে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে আদেশ জারি করবে সরকার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৩ সালে দেশে ফিরে নিজ কর্মস্থলে যোগদান না করায় বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস অনুযায়ী চাকরির অবসান হয় ডা. জোবাইদার।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডা. জোবাইদা রহমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতক (এমবিবিএস) সম্পন্ন করে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) ডিগ্রি নেন। পরে বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে চলে যান তিনি। এরপর ছুটি বিধিমালা অনুযায়ী দেশে ফেরত আসতে না পারায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইউএনবিকে জানান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের নির্দেশে এ বিষয়ে শৃঙ্খলা শাখায় তার ফাইল চেক করে দেখা হচ্ছে। কেন তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা যাচাইবাছাই করে দেখা হচ্ছে।
কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতিবাচকভাবে এগোনো হচ্ছে। কারন তখনকার সরকার চাইলে তাকে চাকরিতে বহাল রাখতে পারত। এরকম অতীত নজিরও আছে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে আরও জানা যায়, ডা. জোবাইদা রহমানকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তার ছুটি বাতিলের আদেশ যথাসময়ে জারি না হওয়া এবং তা যথাযথভাবে তাকে জানানো হয়নি।
এ ছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তৎকালীন সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে তিনি দেশে ফিরে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেননি। তাই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তৎকালীন সরকার তার প্রতি অন্যায় করেছে। এসব কারণ তুলে ধরে তাকে চিকিৎসক পদে পুনর্বহালের প্রক্রিয়ায় কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে চলে যান ডা. জুবাইদা রহমান। তার পরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অপতৎপরতার কারণে তার আর দেশে ফেরা হয়নি। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে গত ৬ মে সকালে তিনি শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরে আসেন।
তার ছুটি সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে জানা যায়, ওয়ান-ইলেভেনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ স্বামীকে সুস্থ করার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ছুটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের চলে যান ২০০৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর।
পরে শিক্ষা ছুটির আবেদন করলে সরকার তাকে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করে। এরপর কয়েক দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলেও ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্তই তার ছুটি বহাল রাখে সরকার। ফলে সরকারের অনুমোদন ছাড়া একনাগাড়ে ৫ বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরবর্তী সময়ে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।