দুর্নীতির অভিযোগ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যবস্থা নিতে পারে ইউজিসি


দেশের ২০ থেকে ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির (বিওটি) বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও তহবিল তছরুপের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটি ভেঙে প্রশাসক বসানো হতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির বিরুদ্ধে যদি গুরুতর অভিযোগ থাকলে তাদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনে প্রশাসক বসানো হবে। প্রশাসক বসানো ছাড়াও যদি আরও বেশি কিছু করা যায় বা সরকারের আরও বেটার বা ইনোভেটিভ আইডিয়া থাকে, প্রয়োজনে সেটিও করা হবে।’
তবে যায় করা হোক না কেন, তা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করা হবে বলে জানান তিনি।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিওটির বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ অর্থ পাচার। এছাড়া তহবিল তছরুপসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।’
বিওটির এসব অনিয়ম নিয়ে কীভাবে তথ্য পেলেন?—উত্তরে এই ইউজিসি সদস্য বলেন, ‘দুদক, আমাদের নিজস্ব তদন্ত, সংবাদপত্রসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্নভাবে তথ্য এসেছে আমাদের কাছে। এসব বিষয়গুলো আমলে নিয়ে (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে) একটি সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার বিষয়ে কাজ হচ্ছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়মের মধ্যে আনার জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই করা হবে।’
কতগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির (বিওটি) বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০ থেকে ৩০টির মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম তদন্তে কমিটিও করে দিয়েছি; সেটি সাধীন ভাবে কাজ করছে। কাজ শেষ করে রিপোর্ট দিলে সিদ্ধান্তের জন্য তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট চলেও এসেছে। যেমন: সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি; তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে প্রশাসক নিয়োগের জন্য আমার সুপারিশ করে প্রতিবেদনটি সরকারকে পাঠিয়েছি, সরকার সিদ্ধান্ত দিলেই প্রশাসক বসানো হবে।’
তদন্ত কমিটিতে কারা কারা আছে, এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অধিকাংশ কমিটির কনভেনার (আহ্বায়ক) বাইরে থেকে নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইউজিসি থেকে সদস্য নেওয়া হয়েছে আবার বাইরে থেকেও নেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিটি কমিটিতে আমাদের সংশ্লিষ্ট শাখার ডিলিং অফিসারকে (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) রাখা হয়েছে, যিনি সেই ভার্সিটির দায়িত্ব পালন করছেন।’
তদন্ত কমিটির কনভেনার হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক বিচারকদের রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইউজিসি সুত্রে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। প্রতি বছর শিক্ষার্থী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের সঙ্গে দুর্নীতিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও হিসাব-নিকাশ ঠিকঠাক নেই। আইনের তোয়াক্কা না করে নানা কৌশলে বিপুল অর্থ লুটছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের (বিওটি) সদস্যরা।
নাম না প্রকাশের শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিওটি গঠন করা হয়। তারা ব্যবসা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিক। তবে তারা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পূর্ণ কমিশনের সভায় অভিযোগ ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’