প্রাণী হত্যার বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
ইসলামে পশু-পাখিরও অধিকার রয়েছে এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। অন্যায়ভাবে প্রাণী হত্যা, নির্যাতন বা তাদের ক্ষতি করা ইসলামে হারাম এবং নিন্দনীয় কাজ হিসেবে গণ্য হয়। তাই কুকুরসহ কোনো প্রাণীকে অযথা হত্যা করা বা নির্যাতন করা মানবিক ও ধর্মীয় উভয় দিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য।
পরস্পরের প্রতি দয়া দেখানো সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا أَهْلَ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ
‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ ৪৯৪১)
এটি মানুষসহ সব প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শনে নবিজী (সা.)-এর নির্দেশ। এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে তিনি দুনিয়ার সব জীবের প্রতি দয়া দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কোনোভাইকে মানুষসহ কোনো জীবের অধিকারকে খাটো করে দেখেননি।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা পশুদের নামে একটি সুরা নাজিল করেছেন।
সে সুরায় জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি জীব তথা প্রাণীকে এক একটি জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا طٰٓئِرٍ یَّطِیۡرُ بِجَنَاحَیۡهِ اِلَّاۤ اُمَمٌ اَمۡثَالُكُمۡ ؕ مَا فَرَّطۡنَا فِی الۡكِتٰبِ مِنۡ شَیۡءٍ ثُمَّ اِلٰی رَبِّهِمۡ یُحۡشَرُوۡنَ
‘ভূ-পৃষ্ঠে চলাচলকারী প্রতিটি জীব এবং বায়ুমন্ডলে ডানার সাহায্যে উড়ন্ত প্রতিটি পাখীই তোমাদের মতো এক একটি জাতি, আমি কিতাবে কোনো বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে বাদ রাখিনি। অতঃপর তাদের সবাইকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে।’ (সুরা আনআম: আয়াত ৩৮)
এই আয়াত থেকে প্রমাণিত যদিও মানুষ ও জ্বিন ছাড়া অন্য প্রাণীদের পরকাল নেই, তবুও কেয়ামতের দিন সব পশুপাখিদেরও পুনঃজীবিত করা হবে। সেদিন শোনা হবে তাদের অভিযোগ ও ফরিয়াদ। অর্থাৎ, কেউ যদি দুনিয়ায় তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তাদের কষ্ট দেয়, হত্যা করে, তারা তাদের প্রতি খারাপ আচরণের বিপরীতে ন্যায়বিচার পাবে পক্ষান্তরে কেউ যদি তাদের প্রতি মায়া দেখায়, খাবার দেয় বা যত্ন করে, তার প্রতিদানও পরকালে পাবে।
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে কুকুরকে পানি খাওয়ানো নিয়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যা অনেকেরই জানা। কুকুরসহ প্রাণীর প্রতি দয়া দেখানোয় এ ঘটনাটি হতে পারে আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হাদিসে পাকে এসেছে—
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন—
غُفِرَ لِامْرَأَةٍ مُومِسَةٍ مَرَّتْ بِكَلْبٍ عَلَى رَأْسِ رَكِيٍّ يَلْهَثُ قَالَ كَادَ يَقْتُلُهُ الْعَطَشُ فَنَزَعَتْ خُفَّهَا فَأَوْثَقَتْهُ بِخِمَارِهَا فَنَزَعَتْ لَهُ مِنْ الْمَاءِ فَغُفِرَ لَهَا بِذَلِكَ
‘‘এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। রাবী বলেন, পানির পিপাসা তাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে তার উড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল) এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।’ (বুখারি ৩৩২১)
অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টি এক প্রাণী কুকুরের প্রতি দয়া দেখানোর কারণে ওই নারীর সারা জীবনের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন ও তাকে জান্নাত দান করেছেন।
অন্য এক হাদিসে প্রাণীকে (বিড়াল) কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলার জন্য এক নারী জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করানো হয়েছে মর্মে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন—
عُذِّبَتْ امْرَأَةٌ فِيْ هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيْهَا النَّارَ لَا هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَلَا سَقَتْهَا إِذْ حَبَسَتْهَا وَلَا هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ
‘এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ওই কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খানা-পিনা কিছুই করায়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত।’ (বুখারি ৩৪৮২)
এই হাদিস থেকে উল্লেখিত কোনো কুকুর বা প্রাণীকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ এবং পরকালে জাহান্নামের যাওয়ার কারণ। সুতরাং কোরআন হাদিসের আলোকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, ইসলামে প্রাণীদের অধিকার কোনোভাবেই মানুষের অধিকার থেকে খাটো করে দেখা হয়নি। যদি কেউ কোনো পশু-পাখির প্রতি দয়া দেখান, শেষ বিচারের দিন আল্লাহও তার প্রতি দয়া দেখাবেন। আর যদি কেউ পশু-পাখির সঙ্গে নির্মম আচরণ করেন কিংবা মেরে ফেলেন, তবে আল্লাহও তার সঠিক বিচার করবেন।
