1. হোম
  2. রাজনীতি

‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার ৫ মন্ত্র বাতলে দিলেন মির্জা গালিব

Bangla Post Desk
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২০ এএম
‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার ৫ মন্ত্র বাতলে দিলেন মির্জা গালিব
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাওয়া নতুন বাংলাদেশকে ও আগামীর বাংলাদেশকে খুনি হাসিনার ফ্যাসিবাদী বাংলাদেশ থেকে একশ গুণ ভালো হতে হবে বলে নিজের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব। তিনি বলেন, তাইলেই ফ্যাসিবাদকে আমরা চিরদিনের জন্য পরাস্ত করতে পারব।

একই সঙ্গে, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে ৫টি উপায় বা মন্ত্র বাতলে দিয়েছেন মির্জা গালিব।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন।

মির্জা গালিব বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা নতুন প্রজন্ম উঠে আসতেছে, যারা খুব স্পষ্টভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী এবং বাংলাদেশপন্থি। আওয়ামী লীগ আর ইসলামোফোব সেকুলারদের যে মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা বেইজড ভারতপন্থি রাজনীতি ছিল- সেইটা একটু একটু করে ভেঙে পড়তেছে। সামনের দিনে আরও ভেঙে পড়বে। এই ভেঙে পড়াকে যেমন আমাদের উদযাপন করতে হবে, আবার তার পাশাপশি আমাদের নতুন করে গড়তে হবে। দিনের শেষে আমাদের সামনের দিনের বাংলাদেশকে হাসিনার ফ্যাসিবাদী বাংলাদেশ থেকে একশ গুণ ভালো হইতে হবে। তাইলেই ফ্যাসিবাদকে আমরা চিরদিনের জন্য পরাস্ত করতে পারব। এই গড়ার কাজের জন্য কিছু প্রিন্সিপল্ড পজিশনের ব্যাপারে আমাদের আপোষহীন হতে হবে। এইখানে আবেগের বশে কম্প্রোমাইজড হইলে হবে না।

এরপরই তিনি ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে ৫টি উপায় বা মূলমন্ত্র তুলে ধরেন। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সহকারী অধ্যাপক বলেন-

এক, ভাঙা-ভাঙির একটা লিমিট থাকতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সময় গণভবন ভাঙা, শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভাঙা ঠিক ছিল। হাসিনার অফেন্সিভ বক্তব্যের কারণে ধানমন্ডি ৩২ ভাঙাও ঠিক ছিল, কারণ এইটা দিনের শেষে আওয়ামী ফ্যাসিবাদেরই আইকন। কিন্তু, এই ভাঙার লিস্ট আর বড় হওয়া উচিত না। সমাজ এবং রাষ্ট্রকে নিয়মতান্ত্রিকতায় ফিরতে হবে। প্রতিদিন ভাঙচুর করতে গেলে সমাজে বিপ্লবের পরিবর্তে কেওয়াজই বাড়বে।

দুই, হাসিনার ফ্যাসিবাদের পেছনে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’দের বিশাল ভূমিকা ছিল। এদের অনেকেই হাসিনাকে পেলে পুষে বড় করছে। কিন্তু আমরা যদি একটা লম্বা তালিকা নিয়ে তাদের সবাইকে সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে নির্মূল করতে চাই, তাইলে সমাজে অ্যানার্কি হবে। কেউ কেউ অপরাধ না করে শাস্তি পাবে, কেউ কেউ অল্প অপরাধে বেশি শাস্তি পাবে। এই দুইটার একটাও ইনসাফ না। এদেরকে আমাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। কাউকে কাউকে সামাজিকভাবে শেইম কালচারের মধ্যে ফেলতে হবে। যারা অপরাধের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল শুধুমাত্র তাদেরকে আইনি কাঠামোর মধ্যে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই বিচারের পরিবর্তে ফাঁসি চাওয়া যাবে না। নিজে নিজেই আরেকজনের ফাঁসি কার্যকর করার জন্য এগিয়ে যাওয়া যাবে না। কোনো অবস্থাতেই না।

তিন, আওয়ামী জুলুমের কালে এই দেশে ইনস্টিটিউশনালি ইসলামোফোবিয়াকে প্যাট্রোনাইজ করা হয়েছিল। মাদ্রাসায় পড়া লোকজন, হিজাব-নিকাব পরা নারীরা, দাড়ি-টুপি পরা পুরুষেরা ডিসক্রিমিনেশনের শিকার হয়েছিল। এই ইসলামোফোবিয়া সমাজে এখনো আছে। এখনো সমাজে কিছু কিছু ইতর আছে, যারা আমাদের ধর্ম বিশ্বাসকে, আমাদের নবী-রাসুলকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে। কিন্তু এদের বিচারের প্রশ্নে কোনো অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। বরং আইন-আদালত যেন ঠিকঠাক কাজ করে, সেইটা নিশ্চিত করতে হবে। আইনের প্রয়োগের অভাবের কারণেই অ্যানার্কি তৈরি হয়।

চার, গণঅভ্যুত্থানের পরে একটা বিপ্লবী সরকার আমরা করতে পারি নাই। করতে পারলে ভালো হতো। রাষ্ট্রের সকল অর্গান থেকে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের আমরা পুরোপুরি সরাতে পারি নাই। সরাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এখন আর এই অসমাপ্ত বিপ্লব বিপ্লবী রাস্তায় করার সুযোগ নাই। বিপ্লব কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে হয় এবং বিপ্লবের জন্য একটা বিপ্লবী দল ও লিডার লাগে। আমাদের আপাতত এইটা নাই। এই অবস্থায় বরং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে ফেরা আমাদের জন্য সবচাইতে ভালো পথ। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে আমাদের রাজনীতির একটা অনেক বড় পরিবর্তন হবে। কাজেই, নির্বাচনের রোডম্যাপ আমাদের ঠিক রাখতে হবে।

পাঁচ, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং তার দোসররা থাকবে না। তাদেরকে বাদ দিয়েই আমাদের গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে হবে। তাদেরকে স্পেস দিলেই তারা এসে আমাদের গণতন্ত্রকে ফ্যাসিবাদে কনভার্ট করবে। আগে তাদের বিচার হবে, তিনটা নির্বাচন পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে, তারপর তাদের সাথে আমরা আলাপ আলোচনা শুরু করব রিকনসিলিয়েশনের। এই জায়গায় কোনো ছাড় নাই।

পরিশেষে মধ্যপ্রাচ্যের উদাহরণ টেনে ড. গালিব বলেন, মিডল ইস্টের বেশ কয়েকটা দেশ তারুণ্যের বিপ্লবের পরে পথ হারিয়েছে। পুরোনো সামরিক শাসন আবার ফিরে এসেছে। আমাদের আবেগের বশে কোনো রকম ভুল করা যাবে না। নীতির প্রশ্নে কোনো আপোষ করা যাবে না। কঠিনের জায়গায় আমাদের কঠিন হতে হবে। কিন্তু জুলুম করা যাবে না। আমাদের শত্রুদের জন্যও আমাদের ইনসাফ নিশ্চিত করতে হবে।