গণভোট অধ্যাদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ
উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর ‘গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে আদ্দা দেশের গেজেট জারি করা হয়েছে।
এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে- গণভোটে নিম্নরূপ একটি প্রশ্ন উপস্থাপন করা হবে- ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?'; (হ্যাঁ/না):
(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হইবে।
(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হইবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হইবে এবং সংবিধান সংশোধন করিতে হইলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হইবে।
(গ) সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হইতে ডেপুটি স্পীকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হইয়াছে- সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকিবে।
(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হইবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সব ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হবে সেসব ভোটকেন্দ্রে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন যে সকল রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা হবে সেই সকল রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবে বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সকল প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারগণ নিযুক্ত হবেন, সেই সকল প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবেন।
প্রিজাইডিং অফিসার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে গণভোট গ্রহণ কার্য পরিচালনা করবেন এবং ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দায়ি থাকবেন। তার মতে ভোট গ্রহণে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে এইরূপ ঘটনা সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসারকে বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করবেন।
এছাড়া সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার সেই সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন যে সকল ক্ষমতা ও দায়িত্ব কমিশন নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। যদি অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না থাকেন বা তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, তাহলে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্য থেকে একজনকে প্রিজাইডিং অফিসারের স্থলে কাজ করার ক্ষমতা অর্পণ করবেন।
ভোট গ্রহণ চলাকালীন যে কোনো সময় সহকারী রিটার্নিং অফিসার কারণ লিপিবদ্ধ করে যে কোনো প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবেন এবং এ সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত অফিসারের দায়িত্ব পালনের জন্য তার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিবেন বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা ভোটার তালিকা হবে গণভোটের ভোটার তালিকা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সহকারী রিটার্নিং অফিসারের প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে সরবরাহ করা প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটদানের অধিকারী ভোটারদের নাম সংবলিত ভোটার তালিকা গণভোটের ভোটার তালিকা হিসাবে ব্যবহৃত হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বৈধ ভোটাররা গণভোট প্রদানের অধিকারী হবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় হবে গণভোটের ভোট গ্রহণের সময়। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং ৩ ধারায় উল্লিখিত প্রশ্নটিতে জনমত যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে কমিশনের নির্ধারিত একক ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যেক ভোটার ভোটদান করবেন।গণভোটের ব্যালট ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট থেকে পৃথক ও ভিন্ন রঙের হবে।
যে প্রশ্নটিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেই প্রশ্নে হ্যাঁ-সূচক ভোটদান করতে চাইলে একজন ভোটার ব্যালট পেপারে মুদ্রিত হ্যাঁ-সূচক ঘরে এবং না-সূচক ভোটদান করতে চাইলে না-সূচক ঘরে কমিশনের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সিলমোহর নির্ধারণ ও সরবরাহ করা হইবে সেই একই সিলমোহর দিয়ে নিজ ভোট দিবেন বলে অধ্যাদেশে জানানো হয়েছে।
গণভোট পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমেও গ্রহণ করা যাবে এবং এক্ষেত্রে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পোস্টাল ব্যালট সম্পর্কিত বিধিবিধান ও কমিশনের নির্ধারিত পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ ও সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান মোতাবেক যেসব কার্য অপরাধ ও নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসাবে গণ্য, একই ধরনের কার্য গণভোটের ক্ষেত্রেও যতদূর প্রযোজ্য, অপরাধ ও আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে, এবং এক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ ও সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান প্রয়োগ করে এখতিয়ারসম্পন্ন কর্তৃপক্ষ এ অপরাধের বিচার এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
