২৪ ঘণ্টার মধ্যে নারী-শিশু নির্যাতনের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নতুন উদ্যোগ
নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে তথ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংগ্রহ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কুইক রেসপন্স স্ট্র্যাটেজি (কিউআরএস) নামে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, আমি যে ঘোষণাগুলো করেছি, সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। এ পথে দেখেছি, মন্ত্রণালয় শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য কতটা অপ্রস্তুত, কতটা পেশাগত মানুষের অভাব এবং প্রশাসনের ভেতরের লুকানো বাধাগুলো কিভাবে মেয়েদের হকের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, আমি যে শিক্ষা নিয়ে এখান থেকে যাচ্ছি, তা হলো অবকাঠামোগত পরিবর্তন না হলে আমরা এই শক্তিশালী জায়গাগুলোকে সুদৃঢ় করতে পারবো না। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের মধ্য দিয়ে যে অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, সেটা গড়ে তোলার শক্তি এক বছরে কোনো মানুষের হয় না।
নারী বা শিশুর ওপর সহিংসতার প্রতিকারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, গত এক বছর ধরে আমি মন্ত্রণালয়কে এমনভাবে গড়ে তুলতে কাজ করছি, যাতে দেশে কোনো নারী বা শিশুর ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই তথ্য মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে যায় এবং মন্ত্রণালয়ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সক্রিয় হয়ে ভুক্তভোগীর কাছে পৌঁছাতে পারে।
‘এজন্য আমরা কুইক রেসপন্স স্ট্রাটেজির (কিউআরএস) বিষয়টি উত্থাপন করেছি। কৌশলটা হবে কুইক রেসপন্স (দ্রুত সাড়া দেওয়া)। এটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। গত ৮–৯ মাস ধরে আমরা এই কনসেপ্টটি তৈরি করেছি এবং কিউআরএস এখন কেবল প্রাথমিকভাবে প্রয়োগের স্তরে পৌঁছেছে’, যোগ করেন তিনি।
‘ইউনিয়ন পর্যায়ে বা তৃণমূলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাঠামো নেই। এতে আক্ষেপ করে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাঠামো উপজেলা পর্যন্ত। ইউনিয়ন পর্যায়ে বা তৃণমূলে এর কাঠামো নেই। আমাকে মন্ত্রণালয় সম্প্রসারণ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, এই যে চ্যানেল বা চেইন অব কমান্ড—ওপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে ওপরে—এটিকে সাবলীল করতে যে প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে, তা এই ১৬ দিনব্যাপী কার্যক্রমের মধ্যেই আমরা উদ্বোধন করছি। এটি আমাদের পরীক্ষামূলক উদ্যোগ।
উপদেষ্টা বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির একটি মেয়ে কেন একজন ছেলে শিক্ষার্থীর মতো স্কুলে টিকে থাকতে পারে না— এটা কি আমরা ভেবেছি? এই ভাবনা শুধু মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নয়, স্কুল পরিচালনাকারীদের নিয়েও আমাদের এগোতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটা স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে মেয়েদের জন্য টয়লেট থাকতে হবে। এখানে আমার দাবি হচ্ছে- যে স্কুল মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট রাখবে না— আমার মতে, সেই স্কুল রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। কারণ এই একটি অবহেলার জন্য আমার শিশু মেয়েটি শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা পায় না। এতটাই অসংবেদনশীল আমার সমাজ।
উপদেষ্টা বলেন, এই স্কুলগুলো যারা চালান তারা একটিবারও ভাবেন না, একটি সামান্য কাজ আমাদের শিশুদের কতখানি শিক্ষার পথ সুগম করে দেয়। আমরা সেটুকু কেন অর্জন করতে পারব না।
এ সময় শারমীন এস মুরশিদ আক্ষেপ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় দপ্তরে নারীদের জন্য টয়লেটের সুব্যবস্থা নেই, অথচ হাজার হাজার কোটি টাকার অফিস রয়েছে! এটা কোন ধরনের উন্নয়ন?
