উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ নয়, পরিবর্তন করুন অভ্যাস

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০২ জুলাই ২০২৫, ১০:২৫ এএম
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ নয়, পরিবর্তন করুন অভ্যাস
ছবি : সংগৃহীত

দিনের পর দিন ওষুধ খেয়েও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ আপনি জানেন কি, ওষুধ ছাড়াও কিছু সহজ অভ্যাসের পরিবর্তনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব? জীবনযাত্রার ধরন, খাবার, ঘুম ও মানসিক চাপ-এই চারটি বিষয়েই লুকিয়ে রয়েছে সমাধান। শুধু সচেতনতা আর নিয়ম মানলেই কমে যেতে পারে হৃদরোগ, স্ট্রোক এমনকি কিডনির ক্ষতির ঝুঁকিও। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো এমনই কিছু প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায়, যা নিয়মিত মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ আর হবে না ভয় পাওয়ার কারণ।

রক্তচাপবান্ধব খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
আপনার প্লেটেই লুকিয়ে থাকতে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমাধান। প্রতিদিনের খাবারে কিছু সাধারণ পরিবর্তন এনে আপনি অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারেন রক্তচাপের মাত্রা।

পটাসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খান: কলা, আলু, পালং শাক, টমেটো, কমলা-এসব খাবার শরীরে সোডিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

লবণ কমান: প্রতিদিনের খাবারে অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। রান্নায় স্বল্প লবণ ব্যবহার করুন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
আস্ত শস্য ও আঁশযুক্ত খাবার খান: ওটস, লাল চাল, ডাল ও নানা শাকসবজিতে থাকা আঁশ শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: ভাজা খাবার, ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার বদলে বেছে নিন বাদাম, অলিভ অয়েল বা মাছের তেলজাত চর্বি।


প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন
অতিরিক্ত কিছু করার দরকার নেই। শুধু নিয়মিত হাঁটা, সাইকেল চালানো, হালকা দৌড়, সাঁতার কাটা কিংবা যোগব্যায়াম-যেকোনো একটিতে অভ্যস্ত হলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে।

কারণ শরীর সক্রিয় রাখলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হয়, রক্ত চলাচল সহজ হয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। মানসিক চাপও কমে, যা হাইপারটেনশনের বড় কারণ। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন, দিনে ৩০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম অভ্যাস করুন।


মানসিক চাপ কমান, মন শান্ত রাখুন
অতিরিক্ত মানসিক চাপ সরাসরি প্রভাব ফেলে রক্তচাপের ওপর। তাই প্রতিদিন কিছু সময় নিজেকে দিন; একান্ত নিজের মতো করে।

ধ্যান বা মেডিটেশন করুন, মাত্র ১০ মিনিট মনঃসংযোগ করলেই অনেকটা হালকা অনুভব করবেন। লম্বা শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন, একে বলে ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, যা স্নায়ু শান্ত করে। সময় পেলে বই পড়া, গাছপালার মাঝে সময় কাটানো বা প্রিয় গান শোনা-এগুলোও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন সীমিত করুন
বাংলাদেশে অ্যালকোহল গ্রহণ তুলনামূলক কম হলেও, শহুরে লাইফস্টাইলে কফি, এনার্জি ড্রিংক কিংবা অতিরিক্ত চা পান করার প্রবণতা বাড়ছে।

প্রতিদিন এক কাপের বেশি কফি বা শক্তিশালী চা খেলে রক্তচাপ সাময়িকভাবে বাড়তে পারে। তাই পরিমিতভাবে গ্রহণ করুন। অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন।

ওজন কমানোর চেষ্টা করুন
বিশেষ করে পেটের চর্বি বাড়লে রক্তচাপও বেড়ে যায়। তাই নিজের ওজনের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। মাত্র ৪-৫ কেজি ওজন কমালেই রক্তচাপে আসতে পারে অবাক করা পরিবর্তন। ভাত, চিনি, তেল ও ফাস্টফুড কমিয়ে এবং নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনুন।

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
ঘুম কম হলে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন রাতের ঘুম ৭-৮ ঘণ্টা হওয়া উচিত। ঘুমাতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে মোবাইল বা টিভি বন্ধ করে দিন। হালকা খাবার খান এবং ঘরটি রাখুন শান্ত ও অন্ধকার।

বাড়িতে নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন
ডাক্তারের কাছে না গিয়েও আপনি নিজেই ঘরে রক্তচাপ মেপে রাখতে পারেন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন কোন অভ্যাস বা খাবার আপনার রক্তচাপে প্রভাব ফেলছে। মাপার আগে ৫ মিনিট বিশ্রাম নিন। পরিমাপের সময় কথা বলা, হাঁটা বা ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন, সকালে বা রাতে একই সময়ে মাপলে তুলনা করা সহজ হয়।


কিছু প্রাকৃতিক সম্পূরক বিবেচনায় আনতে পারেন
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণ করলে রক্তচাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: মাছ, বিশেষ করে রুই, তেলাপিয়া বা স্যামন খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ফ্ল্যাক্সসিড বা তিসির বীজেও এটি থাকে।
ম্যাগনেসিয়াম: কলা, বাদাম, শাকসবজি এবং গোটা শস্যে রয়েছে।

সর্বোপরি প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ শুধু সম্ভব নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে আরও কার্যকর হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি-এই চতুর্মুখী পদ্ধতিই হতে পারে স্বাস্থ্যকর জীবনের চাবিকাঠি। নিজের শরীরকে সময় দিন, নিয়ম মেনে চলুন, আর প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না। কারণ, স্বাস্থ্যই শেষ কথা।