বেশি বয়সেও সুস্থ থাকার রহস্য কী


জীবনের গতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরেও আসে নানা পরিবর্তন। হাড় ও পেশির শক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, এমনকি মানসিক সতর্কতাও কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কেউ ৭০ পেরিয়েও পাহাড়ে চড়ছেন, কেউ আশিতে পৌঁছে গিয়েও সক্রিয় জীবনযাপন করছেন। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ষাটের মধ্যেই স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। এই পার্থক্যের কারণ কী?
বয়সের সঙ্গে শরীরের পরিবর্তন
পুষ্টিবিদরা বলছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমে তার প্রভাব পড়ে। ভারতীয় পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিকের মতে, ‘বয়স বাড়লে হজমশক্তি কমে যায়, দাঁত দুর্বল হয়ে পড়ে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ধীর হয়ে আসে, এমনকি খাবারের রুচিও বদলে যায়। ফলে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেওয়া স্বাভাবিক।’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে নানা অসুখ বাসা বাঁধে, পেশি শিথিল হয়ে যায়, হাড়ের ঘনত্ব কমে, বিপাক হারও হ্রাস পায়। এসবের প্রভাব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়েই পড়ে।
সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র- সঠিক পুষ্টি
বয়স বাড়লেও সুস্থ থাকার চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে। আরেক ভারতীয় পুষ্টিবিদ খুশবু জৈন টিবরেওয়ালা জানাচ্ছেন, বয়সের চাহিদা অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করা জরুরি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা রোগের কারণে খাবারে নিষেধাজ্ঞা চলে আসে, কিন্তু অনেকেই এটা ভুলে যান যে খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুষ্টির অভাবে শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
বয়সকালে যেসব পুষ্টি উপাদান বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে-
১. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য
আয়রন, ফোলেট ও ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- কলার মোচা, থোড়, অঙ্কুরিত ছোলা, পালংশাক, সয়াবিন, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। সেই সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ভিটামিন-এ, সি ও ই, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। তাই মস্তিষ্ককে দীর্ঘদিন সজাগ রাখতে এই উপাদানগুলো প্রতিদিনের খাবারে থাকা জরুরি। তবে বয়স বাড়লে যেহেতু অনেকের ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি জটিলতা থাকে তাই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শে পরিমাণ নির্ধারণ করা ভালো।
২. হৃদযন্ত্রের যত্ন
পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- কলা, খেজুর, বাদাম, রক্তচাপ ও হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তৈলাক্ত মাছ ও আখরোটে ওমেগা-৩ আছে।
৩. হাড়ের শক্তি
ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি ও ভিটামিন-কে২ হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। দুধ, ঘি, সবুজ শাকসবজি ও তৈলাক্ত মাছে এই উপাদানগুলো পাবেন।
৪. অন্ত্রের স্বাস্থ্য
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- দই ও ফার্মেন্টেড ফুড, হজমশক্তি বাড়ায় ও পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। এছাড়া পেশি শক্ত রাখতে ডাল, ডিম, মাছ, পনির খাদ্যতালিকায় রাখা দরকার। সেই সঙ্গে আঁশযুক্ত খাবার ও ভালো ফ্যাট হজমে সহায়ক।
অর্থাৎ, বয়স বাড়লেও সঠিক পুষ্টি আপনাকে রাখতে পারে সক্রিয় ও প্রাণবন্ত। তাই খাবারের প্ল্যানে রাখুন বয়সের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর উপাদান।
সূত্র: আনন্দবাজার