প্রেম করছেন পুতিন, নতুন প্রেমিকা কে?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন—তিনি প্রেম করছেন। তবে সেই প্রেমিকার পরিচয় বা সম্পর্কের কোনো বিস্তারিত তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
বছরের শেষ প্রান্তিকে মস্কোয় আয়োজিত রুশ প্রেসিডেন্টের বার্ষিক সংবাদ সম্মেলন ও প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পুতিন, যা ঘিরে দেশ-বিদেশে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
শুক্রবারের ওই সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক সাংবাদিক জানতে চান, পুতিন কি ‘প্রথম দেখায় প্রেমে’ বিশ্বাস করেন। উত্তরে রুশ প্রেসিডেন্ট ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। এরপর সরাসরি প্রশ্ন আসে—তিনি নিজে কি প্রেম করছেন? এ প্রশ্নে সংক্ষিপ্ত কিন্তু স্পষ্টভাবে পুতিন বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তবে কার সঙ্গে প্রেম করছেন বা কাকে ঘিরে তার এই অনুভূতি—সে বিষয়ে আর কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই চরম গোপনীয়তা বজায় রেখে চলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সাবেক স্ত্রী লিউদমিলা পুতিনার সঙ্গে ২০১৪ সালে বিচ্ছেদের পর তার পারিবারিক জীবন নিয়ে প্রকাশ্যে খুব কমই কথা বলেছেন তিনি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই রুশ গণমাধ্যম ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী ছন্দময় জিমন্যাস্ট আলিনা কাবায়েভার সঙ্গে তার গোপন সম্পর্কের কথা উঠে এসেছে।
ধারণা করা হয়, কাবায়েভার সঙ্গে পুতিনের সম্পর্ক প্রায় ১৮ বছরের পুরোনো এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে, যারা ছদ্মনামে রাশিয়ার বিভিন্ন সুরক্ষিত স্থানে বসবাস করে। যদিও এসব তথ্য কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি পুতিন।
এবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রেমের বিষয়টি স্বীকার করাকে কেউ কেউ দেখছেন নিজের ভাবমূর্তি কিছুটা নরম ও মানবিক করার কৌশল হিসেবে। আবার অনেকে মনে করছেন, দীর্ঘদিনের গোপনীয়তার পর হয়তো ব্যক্তিগত জীবনের কিছু দিক ধীরে ধীরে প্রকাশের ইঙ্গিত দিচ্ছেন ৭৩ বছর বয়সি এই রুশ নেতা।
সংবাদ সম্মেলনের আরেকটি মুহূর্তও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। দর্শক সারিতে থাকা তরুণ সাংবাদিক কিরিল বাঝানোভ ‘আমি বিয়ে করতে চাই’ লেখা একটি ছোট প্ল্যাকার্ড হাতে উপস্থিত হন। বিষয়টি পুতিনের নজরে পড়লে তিনি মুচকি হেসে বলেন, এই প্ল্যাকার্ডটি এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব—সে সম্ভবত অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কিছু বলতে চায়। এরপর কিরিলের পোশাকের দিকে ইঙ্গিত করে ঠাট্টার ছলে পুতিন মন্তব্য করেন, ‘তুমি তো রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে এসেছো।’
এই সুযোগে কিরিল বাঝানোভ লাইভ সম্প্রচারে নিজের প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, জানেন যে এই মুহূর্তে তার প্রেমিকা অনুষ্ঠানটি দেখছেন এবং সরাসরি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ওলেচকা, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?’ এমনকি নিজের সম্ভাব্য বিয়েতে রুশ প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানোর কথাও বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে উপস্থাপক কিরিলকে সুখবর দেন—তার প্রেমিকা বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। পুরো ঘটনাটি সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি এক ধরনের মানবিক ও ব্যক্তিগত আবহ তৈরি করে।
ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি—এসব গুরুতর ইস্যুর পাশাপাশি প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা এবারের সংবাদ সম্মেলনকে ব্যতিক্রমী করে তোলে। তবে নিজের প্রেমের কথা স্বীকার করলেও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আগের অবস্থানেই অনড় থাকেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর আগে একাধিকবার তিনি বলেছেন, তার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ তিনি পছন্দ করেন না এবং সেটি সম্মান করা উচিত।