স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করবে না হামাস


একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এ ঘোষণার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনায় ইসরায়েলের একটি প্রধান দাবি প্রত্যাখ্যান করল সংগঠনটি।
স্থানীয় সময় শনিবার (২ আগস্ট) এ ঘোষণা দেয় হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হামাস এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এর আগে উইটকফ বলেছিলেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে তা সত্য নয় বলে দাবি হামাসের।
এদিকে, ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান ওই আলোচনায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা ছিল।
বিবিসি বলেছে, হামাস অস্ত্রত্যাগ না করলে কোনো চুক্তিতে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হামাস বলছে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন, পুরোপুরি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র প্রতিরোধের অধিকার ত্যাগ করা হবে না।
গত কয়েকদিনে বেশ কিছু আরব সরকারও হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়াল জামির সতর্ক করে বলেন, দ্রুত জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আলোচনা ব্যর্থ হলে গাজায় যুদ্ধের কোনো বিরতি থাকবে না।
এদিকে, ফ্রান্স ও কানাডাসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ইসরায়েল সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না করে, তবে তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
বর্তমানে গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ পর্যন্ত গাজায় অনাহারে অন্তত ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ৯৩টি শিশু।
এমন পরিস্থিতিতে তেল আবিব সফরে রয়েছেন উইটকফ। হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
উইটকফ বলেন, সংঘাতের অবসান ও সব জিম্মিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনাকে কেন্দ্র করেই শান্তি প্রচেষ্টা হওয়া উচিত।
সফরের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শুক্রবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এক বহুল সমালোচিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসের থেকে এ পর্যন্ত খাবার নিতে গিয়ে অন্তত ১ হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নিহতদের অধিকাংশই ইসরায়েলি ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি তাদের।
তবে ইসরায়েলে দাবি, এসব বিতরণকেন্দ্রের আশেপাশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে হামাস। ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় না।