জাতিসংঘের প্রতিবেদন মানুষ পড়ে না, জলে যাচ্ছে বিপুল খরচ


প্রচুর বৈঠক, অধিবেশন ও গবেষণা করে জাতিসংঘ। এই রাষ্ট্র সংঘের অধীন প্রায় আড়াইশ সংস্থা প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে। সারা বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষ এসব প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব প্রতিবেদনকে কেউ গুরুত্ব দেয় না বললেই চলে! প্রতিবেদনগুলো পড়ে খুব নগণ্য সংখ্যক মানুষ।
জাতিসংঘের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং খরচ কমানোর উপায় অনুসন্ধান সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, সংস্থাটির প্রকাশিত বেশির ভাগ প্রতিবেদনই সেভাবে পঠিত হয় না। এই অংশীজন ও সাধারণ মানুষের এই অনাগ্রহ সংস্থার অভ্যন্তরীণ দক্ষতা এবং সম্পদের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত শুক্রবার সদস্য দেশগুলোকে ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে অবহিত করেন। তাঁর ‘ইউএন ৮০’ সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জাতিসংঘ কর্মীরা কীভাবে সাধারণ পরিষদ বা নিরাপত্তা পরিষদের মতো সংস্থাগুলোর দেওয়া হাজার হাজার ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করে, তার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
মহাসচিব গুতেরেস গত বছর বলেছিলেন, জাতিসংঘ ব্যবস্থা ২৪০টি সংস্থার ২৭ হাজার সভায় সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে এবং জাতিসংঘ সচিবালয় বছরে ১ হাজার ১০০টি প্রতিবেদন তৈরি করে। সে হিসাবে এই সংখ্যা ১৯৯০ সালের পর ২০ শতাংশ বেড়েছে। এই বিপুলসংখ্যক সভা ও প্রতিবেদন প্রসঙ্গে গুতেরেস বলেন, ‘সভা ও প্রতিবেদনের এই বিপুল সংখ্যা আমাদের ব্যবস্থাকে–এবং আমাদের সবাইকে–সহনসীমার প্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।’
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘এই প্রতিবেদনগুলোর বেশির ভাগই সেভাবে পড়া হয় না।’ গুতেরেস বলেন, ‘৫ শতাংশ প্রতিবেদন ৫ হাজার ৫০০ বারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। এটিই সর্বোচ্চ। আবার প্রতি পাঁচটি প্রতিবেদনের মধ্যে একটি ১ হাজার বারের কম ডাউনলোড হয়েছে। আর ডাউনলোড মানেই যে পড়া হয়, এমনটা কিন্তু নয়।’
চলতি বছর ৮০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি টানা সপ্তম বছরের মতো তারল্য সংকটে ভুগছে। এর প্রধান কারণ হলো, ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সবাই তাদের বাধ্যতামূলক নিয়মিত চাঁদা পুরোপুরি বা সময়মতো পরিশোধ করছে না। এই আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটেই গত মার্চে গুতেরেস ‘ইউএন ৮০’ টাস্কফোর্স চালু করেন, যার উদ্দেশ্য সংস্থার কার্যপদ্ধতিতে মৌলিক সংস্কার আনা। টাস্কফোর্স কর্তৃক গত বৃহস্পতিবার বিলম্বে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি চলমান কয়েকটি সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে একটি।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মহাসচিব গুতেরেস যেসব প্রস্তাব তুলে ধরেন তার মধ্যে অন্যতম হলো: কম সভা, কম প্রতিবেদন। তবে এমন প্রতিবেদন করা যাবে যা সমস্ত ম্যান্ডেটের প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করতে সক্ষম। এই পদক্ষেপগুলো জাতিসংঘের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে বলে আশা করছেন তিনি।