১১ ডিসেম্বরের স্মৃতি: কালিয়াকৈরের সাকাশ্বরে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের ইতিহাস আজও অম্লান

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
১১ ডিসেম্বরের স্মৃতি: কালিয়াকৈরের সাকাশ্বরে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের ইতিহাস আজও অম্লান
সাকাশ্বর বাজারসংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর।
আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর বাজার এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালের এক ঐতিহাসিক ঘটনা। তুরাগ নদের পাড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সেই ঘটনা আজও ওই এলাকার মানুষের স্মৃতিতে জীবন্ত হয়ে আছে।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে হঠাৎ করেই সাকাশ্বর বাজারসংলগ্ন তুরাগ নদের তীরে একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্থানীয় সূত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগেই এর পাইলট প্যারাসুট নিয়ে পাশের বেগমপুর এলাকায় অবতরণ করে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামছুল হক গ্রুপের সদস্যরা দ্রুত সেখানে পৌঁছে ওই পাইলটকে আটক করে নিজেদের ক্যাম্পে হস্তান্তর করেন।

পাইলট নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টার নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে তল্লাশি শুরু করে। দীর্ঘ সময় অনুসন্ধানের পর পাইলটের কোনো সন্ধান না পেয়ে তারা হেলিকপ্টার নিয়ে ফিরে যায়। কিন্তু এর পরপরই জল ও স্থল পথে বিপুল সংখ্যক পাক সেনা সাকাশ্বরসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে হামলা চালায়।

হঠাৎ গুলির শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ জীবন বাঁচাতে দিকবিদিক ছুটতে থাকে। এ সময় পাক বাহিনীর গুলিতে স্থানীয় জানেস আলী, আব্দুল গফুর মুন্সীসহ নাম না জানা আরও কয়েকজন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এলাকাবাসীর মতে, সে দিনের ভয়াবহতা এখনো তাদের চোখে ভাসে।

এই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখতে ঘটনাস্থলের পাশে, সাকাশ্বর বাজারসংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর। ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

স্থানীয়দের ভাষ্য, তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এবং কালিয়াকৈর উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এই জাদুঘরটি নির্মাণ করে।

স্থানীয় আসিফ নামে শিক্ষার্থী বলেন, আমি দাদার কাছ থেকে শুনেছি এই ঘটনার কথা। ১১ ডিসেম্বর নাকি এখানে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয় যা পাকিস্তান বাহিনীদের ছিলো। তাই সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধো স্মৃতি জাদুকর স্থাপন করা হয়।

এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী জানান, ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে আমাদের এখানে একটি যুদ্ধের ঘটনা ঘটে যায়। সেই সময় অনেক মানুষ শহীদ হয়েছিল অনেক আতঙ্কিত হয়েছিল এই এলাকাটি। আমি শুনেছি এই কথাগুলো তাই সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে এখানেই জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয় তবে কিছু সংখ্যক বই ছাড়া আর কিছুই মিলে না এই জাদুঘরে।

এই জাদুঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সুরুজ আলী জানান, সেদিনের সেই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি। আমি তখন খাবার খেতে বসেছিলাম হঠাৎ করে বিকট শব্দ এবং সবাই চিল্লায় বলছে নদীর ওখানে কি জানি হয়েছে। দৌড়ে এসে দেখি দূর থেকে অনেক ধোয়া এবং আগুন। পরে কাছে এসে দেখি একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনীরা তাদের পাইলটকে না পেয়ে বিচারের গুলি নিক্ষেপ করে এই এলাকা জুড়ে। সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে এখানেই জাদু-ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পর থেকেই আমি এটা দেখাশোনা করি।
 
বিপি/আইএইচ