চট্টগ্রামে যমুনা টিভির সাংবাদিককে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে মারধর


পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানা কম্পাউন্ডে যমুনা টিভির রিপোর্টার জোবায়েদ ইবনে শাহাদাতকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম মারধর করেছেন বলে জানা গেছে। রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত শনিবার রাতে নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’, ‘শেখ হাসিনা’ স্লোগান দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। থানায় এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক জোবায়েদ। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তার রোষানলে পড়েন তিনি।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকাল ৪টায় নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা। এতে চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকরা অংশ নেন। এ হামলার নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম টেলিভিশন রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক (সিটিআরএন)।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এ ধরনের হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং সংবিধান ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তারা বলেন, সংবাদকর্মীরা সর্বদা পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন; তাদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ বক্তারা দ্রুত দোষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান। অন্যথায় আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় চট্টগ্রামের সাংবাদিকসমাজ।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক জোবায়েদ বলেন, ‘কনসার্টে মারামারির ঘটনায় আটক ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে থানা কমপাউন্ডের মধ্যে কথা বলছিলাম। এমন সময় ডিসি এসে কথা বলার অনুমতি নিয়েছি কিনা জানতে চান। তখন একপর্যায়ে তিনি আমার দুই গালে থাপ্পড় মারেন। আমি এমন আচরণের প্রতিবাদ করায় আমাকে থানার ভেতরে নিয়ে গিয়ে ফ্লোরে ফেলে লাথি ও কিলঘুষি মারেন। এ সময় তিনি আমাকে ফ্যাসিস্ট বলে গুম করে ফেলার হুমকি দেন আর বলেন, “তুই ফ্যাসিস্ট, আমি তোরে মারি নাই। শয়তানকে মারছি।” পরে অন্য পুলিশ এসে আমাকে সেভ করেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে থানার সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ সমাবেশ করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।
এ প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘এ ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। এক বিবৃতিতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, রবিবার (১২ অক্টোবর) নগরীর খুলশী থানায় সংবাদ সংগ্রহের সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর বিভাগের ডিসি আমিরুল ইসলাম থানার একটি কক্ষে সাংবাদিক জোবায়েদকে আটকে রেখে নির্মমভাবে কিল ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করেন। হামলায় তার চোখ, মুখ ও কানে গুরুতর আঘাত লাগে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সিইউজে সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ যৌথ বিবৃতিতে আরও বলেন, উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন আচরণ ঘৃণ্য, নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। এটি সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে, যা সার্বজনীন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থি। বিবৃতিতে অবিলম্বে হামলাকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার ও ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত করে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। সাংবাদিক আসাদুজ্জামান লিমন ও জোবায়েদ ইবনে শাহাদাতের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়েছে বিবৃতিতে।
সিইউজে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনের মূলে থাকে পুলিশ। সেই পুলিশেরই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের সাংবাদিকদের উপর হামলে পড়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনায় যদি দৃষ্টান্তমূলকভাবে বিচার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ আরও সংকুচিত হবে। সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা বলতে আর কিছুই থাকবে না।’
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এই ঘটনার বিচার হতে হবে। অন্যথায় সিইউজেসহ সর্বস্তরের সাংবাদিক সমাজ কঠোর কর্মসূচি পালন করবে।