ঝিনাইদহে জামায়াতে যোগ দিল ৮০টি হিন্দু পরিবার


ঝিনাইদহে ৮০টি হিন্দু পরিবারের জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জেলায় চলছে ব্যাপক আলোচনা। মন্দিরে উপজেলা জামায়াত আমিরের উপস্থিতিতে দলটিতে যোগদানের খবর ভাইরাল হলেও ঘটনাটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। শুরুতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি সমাজের মাতব্বর ৮০টি পরিবার নিয়ে যোগদানের কথা বললেও এখন বলছেন উল্টো কথা।
তার দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতে ইসলামী দলের সাথে জড়িত আছেন। তার সাথে গ্রামের অন্য পরিবারগুলো যোগদান করেননি। এদিকে ইউনিয়ন আমির বলছেন, অন্য রাজনৈতিক দলের চাপে পড়ে বক্তব্য ঘুরাতে পারেন ওই নেতা।
জানা যায়, গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের ভান্ডারীপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের তিনটি সামাজিক দলের মাতব্বরসহ ৮০টি পরিবার উপজেলা জামায়াতের আমির এ এস এম মতিউর রহমানের উপস্থিতিতে জামায়াতে যোগ দেন। সে সময় তিন সমাজের মাতব্বর ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনাটি মুহুর্তেই সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। বর্তমানে ঘটনাটি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
এ বিষয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে জানতে চাইলে কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও তাদের দাবি, ওইদিন সন্ধ্যায় গ্রামের শিবতলা দুর্গা মন্দিরটিতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মাতব্বর ভজন মুন্সি, দ্বীপচাঁদ মন্ডল ও তিন সমাজের প্রধান বিকাশ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে পূজা পরিচালনার আলোচনা চলছিল। হঠাৎ জামায়াতের নেতারা গাড়িবহর নিয়ে পূজামন্ডপ পরিদর্শনে এসেছিল। তারা জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে তিন সমাজের প্রধান বিকাশ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে ৮০টি পরিবার নিয়ে যোগদানের বিষয়টি প্রথমে স্বীকার করলেও এখন বিকাশ বিশ্বাস বলছেন উল্টো কথা। তার দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই এই দলের সাথে জড়িত আছেন। তার সঙ্গে কেউ যোগদান করেননি।
ভান্ডারীপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সামাজিক মাতব্বর বিকাশ বিশ্বাস বলেন, ‘জামায়াতের নেতারা আমাদের সঙ্গে পূজামন্ডপে ভোটের আলোচনার জন্য এসেছিল। ৮০টি পরিবার জামায়াতে যোগদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি। দলটিকে ভালোবাসি। আমি নিজেই দলটির সঙ্গে জড়িত আছি। অন্যরা কেউ বিএনপি, কেউ আওয়ামী লীগের দল করে।’
অপরদিকে বাকি দুই সামাজিক মাতব্বরদের সাথে কথা বলতে তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাদের বাড়িতে গেলেও খোঁজ মেলেনি।
এ দিকে বাংলাদেশ জামায়াতের নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আমীর মো. মহিউদ্দিন বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সামাজিক নেতা বিকাশ বিশ্বাস প্রায় ৯০ দশকের সময় থেকে জামায়াতের সাথে জড়িত। উনি আমাদের দলের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানোর পরে আমরা মন্দিরটিতে গিয়েছিলাম। সেখানে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তারা আমাদের দলে যোগদান করে। এখন বিভিন্নভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তাদের যোগদানের ভিডিও আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। অন্য রাজনৈতিক দলের চাপে পড়ে বক্তব্য পরিবর্তন করতে পারেন তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শৈলকুপা উপজেলা আমীর এ এস এম মতিউর রহমান বলেন, নির্বাচনী কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে ভান্ডারীপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের আমন্ত্রণে মন্দিরটিতে আমার যাই। সেখানে সন্ধ্যার পরে আমরা সামাজিক মাতব্বরদের প্রধান বিকাশ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে তার লোকজনের সঙ্গে আলোচনা হয়। তারা আমাদের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সেখানে কত লোক ছিল তার হিসাব নেই। তবে ঘটনাটি মিথ্যা নয়।’
এ দিকে শৈলকুপার এ ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এ বিষয়ে জামায়াতের পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত দিতে দেখা যাচ্ছে।