ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪ স্থানে ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:১৮ পিএম
ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪ স্থানে ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীতে টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫টি স্থান ভেঙে গেছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করেছে ফেনী শহরের।

ফেনী বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, প্লাবিত এলাকার অনেক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার ও সাব-স্টেশন ডুবে যাওয়ায় নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হতে পারে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১২টায় নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ১৩.৯২ মিটার, যা বিপদসীমার চেয়ে ১.৫৭ মিটার বেশি। মাত্র ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে নদীর পানি বেড়েছে ৬.৯২ মিটার (২২ ফুট ১০ ইঞ্চি)।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ফেনীতে ৪৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, বুধবার ও বৃহস্পতিবারও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুহুরী নদীর বাঁধের পরশুরামের জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় তিনটি, শালধরে একটি এবং ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুরে একটি স্থানের বাঁধ ভেঙেছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগরে একটি ও ফুলগাজীর দেড়পড়ায় দুটি স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কহুয়া নদীর পরশুরামের সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি এবং ফুলগাজীর দৌলতপুরে একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার।

পরশুরামের চিথলিয়া এলাকার জাকিয়া আক্তার বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে পানি ঘরে ঢুকতে শুরু করে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। গত বছরও বন্যায় সব হারিয়েছি, এবার আবারও একই পরিস্থিতি।’

মির্জানগরের রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, পাউবো কর্মকর্তাদের অবহেলায় বল্লামুখা বাঁধের প্রবেশপথ বন্ধ করা হয়নি। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এ বিপদ এড়ানো যেত।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হলেও এখনও অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না।’

ফুলগাজীর ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম জানান, তিনটি নদীর বাঁধে চারটি ভাঙন নিশ্চিত হওয়া গেছে। শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ বুধবার (৯ জুলাই) উপজেলার সব উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, উজানে ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানির স্তর আরও বাড়তে পারে। এতে করে নতুন নতুন স্থানে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরামে ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রায় ১৫০ মানুষ ইতোমধ্যে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গতদের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকার খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ফেনী সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় নগদ ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য ১২০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলায় যথাক্রমে ৯৯, ৩২ ও ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৭জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

এ ছাড়াও জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র; কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং দরকারি নথি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।