সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, তদন্ত কমিটি গঠন

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৩ মার্চ ২০২৫, ০২:১৪ পিএম
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, তদন্ত কমিটি গঠন

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ৩ কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানো হচ্ছে। বনে আগুনের ওই এলাকায় মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। আগুনে এরই মধ্যে প্রায় ৪ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। রবিবার সকালে সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিশ্চিত করেছে।

এদিকে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় বন বিভাগ রবিবার ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ওই কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, শনিবার(২২ মার্চ) রাতভর বন বিভাগ এবং গ্রামবাসী মিলে আগুন নেভানোর কাজ করে। ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে তারা জ্বলতে থাকা আগুনেব ছিটিয়েছে। রবিবার সকাল ৮টার দিকে তাদের সঙ্গে ফায়ার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়। ৩ কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদীতে পাইপ লাইন বসিয়ে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম আরও জানান, রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝে মধ্যে কোনো কোনো স্থানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পাইপ দিয়ে সেখানে পানি ছিটানো হচ্ছে।  আগুনে প্রায় ৪ একর বলা ও নলবনের ক্ষতি হয়েছে।

ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের ৪ মে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী সুন্দরবনের ২৪, ২৫ এবং ২৭ নম্বর কম্পারমেন্টাল এলাকায় মৌয়ালদের পাশ (অনুমতি) দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এবছর ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হবে।

ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের ধারণা, মৌসুম শুরুর আগেই অবৈধ কোন মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারে। মৌয়ালের মশাল অথবা বিড়ি সিগারেটের অংশ থেকে সুন্দরবনে আগুন ধরতে পারে। এছাড়া আইনভঙ্গ করে কোনো কোনো রাখাল ভোলা নদী পারি দিয়ে তাদের গবাদী পশু নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওই রাখালদের ফেলে রাখা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে।

ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম তথ্য মতে, সুন্দরবনে আগুনের সূত্রপাত এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাসকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর চন্দ্র দাস এবং কলমতেজি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম। কমিটির সদস্যদেরকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএফও।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, সুন্দরবনে যে স্থানে আগুন লেগেছে ওই এলাকার দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়েছে। আগুন ফায়ার লেন অতিক্রম করতে পারেনি। শনিবার সকালের পর থেকে বন বিভাগের সদস্যরা একটানা আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগুনে কিছু বলা এবং নলবন পুড়ে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাটের শরণখোলা ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই আলম জানান,সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রে রয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন প্রায় ৯০ শতাংশ নিভে গেছে। এই মুহূর্তে কোথাও আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে না। তবে মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া দেখলেই সঙে সঙ্গে পানি ছিটানো হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যে আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই আলম আরও জানান, বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলা ফায়ার স্টেশনের ৩টি ইউনিট, বন বিভাগ এবং গ্রামবাসী মিলে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলে তিনি জানান।

ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই আলমের তথ্য মতে, রবিবার সকালে সুন্দরবনের গুলিসাখালী এলাকায় আগুনের খবর শুনে ফায়ার ব্রিগেডের কিছু কর্মী সেখানে রওনা হয়েছে।

শনিবার সকাল ৭টার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকায় আগুন জ্বলতে দেখে বন বিভাগের সদস্যরা। এর পর আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হয়। আগুন যাতে বনের মধ্যে ছড়াতে না পারে সে জন্য দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়। সুন্দরবনে কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়।

এ নিয়ে ১৯ বছরে সুন্দরবনে ২৯ বার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ৪ মে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে আগুনে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।