হঠাৎ করে বিশ্বের শত শত ওয়েবসাইট অচল, জানা গেল কারণ
বিশ্বের জনপ্রিয় শত শত ওয়েবসাইট হঠাৎ করেই অচল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ওয়েবসাইটগুলোতেও একই সমস্যা দেখা গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স, চলচ্চিত্র পর্যালোচনাবিষয়ক সাইট লেটারবক্সডসহ অসংখ্য ওয়েবসাইটে প্রবেশের চেষ্টা করলে ব্যবহারকারীরা একটি ত্রুটি বার্তা দেখতে পান, যেখানে বলা হয়, ‘ক্লাউডফ্লেয়ারের সমস্যার কারণে পেজটি লোড করা সম্ভব হয়নি’।
সমস্য সমাধানে কাজ করছে জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে ক্লাউডফ্লেয়ার।
সংস্থাটি জানায়, আমরা এমন একটি সমস্যার বিষয়ে অবগত হয়েছি, যা বহু গ্রাহকের সেবা ব্যাহত করতে পারে। তদন্ত চলছে এবং তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপডেট দেওয়া হবে।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ওয়েবসাইট সুরক্ষা ও ব্যান্ডউইথ ব্যবস্থাপনায় থাকা মার্কিন প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ারে হঠাৎ বড় ধরনের বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থায় দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, সরকারি সেবা ও মোবাইল অ্যাপ স্থবির হয়ে পড়ে।
ব্যবহারকারীরা ৫০০ অভ্যন্তরীণ সার্ভার ত্রুটি, ডিএনএস রেজোলিউশন ত্রুটি এবং টিএলএস হ্যান্ডশেক ত্রুটি রিপোর্ট করেছেন।
ইওয়াই হোস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, “ক্লাউডফ্লেয়ার ডাউন মানেই আমাদের সিস্টেম ডাউন। আজকের বিভ্রাটে ব্যবসায়িক ক্ষতি লাখ লাখ টাকার।”
নজরদারি সাইট ডাউন ডিটেক্টরও একই সমস্যায় আক্রান্ত হয়। ব্যবহারকারীরা “ক্লাউডফ্লেয়ার নেটওয়ার্কে অভ্যন্তরীণ সার্ভার ত্রুটি” বার্তা পান, যেখানে লেখা দেখা যায়, “দয়া করে কয়েক মিনিট পরে আবার চেষ্টা করুন।”
সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্স ও এআই চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীরাও বিভ্রাটের কারণে সমস্যা অনুভব করেন। পাশাপাশি বেট৩৬৫, লিগ অফ লিজেন্ডস ও বিভিন্ন পেমেন্ট কোম্পানির সাইটে অচলাবস্থা দেখা দেয়।
ওয়েব প্রযুক্তি প্লাটফর্ম বিল্টউইথের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১৫,৬০১টি ওয়েবসাইট ক্লাউডফ্লেয়ার ব্যবহার করছে। বিশেষভাবে, প্রায় ১৩,৮৬৬টি বাংলাদেশি ওয়েবসাইট তাদের সিডিএন সেবায় তালিকাভুক্ত। বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় ১,৯৮০টির বেশি সাইট বিল্টউইথের সেবা ব্যবহার করছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভির জোহা জানান, “বাংলাদেশ অঞ্চলের ক্লাউডফ্লেয়ার এজ নোডে অভ্যন্তরীণ রাউটিং ত্রুটি দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম পপ হয়ে ট্রাফিক গেলে ৫০০ অভ্যন্তরীণ সার্ভার ত্রুটি রিটার্ন হচ্ছে। এটি ডিএনএস রেজোলিউশন, রিভার্স প্রক্সি হ্যান্ডশেক ও টিএলএস আলোচনায় প্রভাব ফেলছে। ক্লাউডফ্লেয়ার অরিজিন সার্ভার বা হোস্টিংয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু আঞ্চলিক এজ অবকাঠামোয়, যার কারণে বাংলা ট্রিবিউন, দ্যা ডেইলি স্টার, জাগো নিউজসহ ক্লাউডফ্লেয়ার-সুরক্ষিত সাইটের রিকোয়েস্ট ড্রপ হচ্ছে।”
ক্লাউডফ্লেয়ার হলো বিশ্বের একটি বৃহৎ ইন্টারনেট নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এটি ওয়েবসাইটে আসা দর্শক পরীক্ষা করে নিশ্চিত করে যে তারা মানুষ নাকি স্বয়ংক্রিয় বট। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ২০% ওয়েবসাইট কোনো না কোনোভাবে তাদের সেবা ব্যবহার করে।
নেটব্লকসের পরিচালক রেডিটে বলেন, “এই বিভ্রাট ক্লাউডফ্লেয়ারের অবকাঠামোয় মারাত্মক ব্যাঘাত নির্দেশ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেটের বহু অংশ ক্লাউডফ্লেয়ারের প্রান্তিক সার্ভারের পেছনে ‘লুকানো’ হয়েছে, ডিনায়াল অফ সার্ভিস আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি প্রমাণ করে, ক্লাউডফ্লেয়ার শুধু সুরক্ষা দেয় না, বরং এটি ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় একক ব্যর্থতার পয়েন্টগুলোর একটি।”
গত মাসে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের বিভ্রাটে ১,০০০-এর বেশি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ অচল হয়েছিল। এরপর মাইক্রোসফট অ্যাজিওরের ক্লাউডেও প্রভাব পড়েছিল।
গ্লোবাল সাইবারসিকিউরিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইসেটের সিইও জ্যাক মুর বলেন, “গত কয়েক মাসে আমরা যে বিভ্রাটগুলো দেখেছি, তা নাজুক নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীলতার ভয়াবহতা প্রকাশ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শই ক্লাউডফ্লেয়ার, মাইক্রোসফ্ট ও অ্যামাজনের মতো সেবার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য, কারণ বিকল্প খুব কম।”
