শীতে প্রিয় বাইকের যত্ন নিবেন যেভাবে

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২১ পিএম
 শীতে প্রিয় বাইকের যত্ন নিবেন যেভাবে
ছবি : সংগৃহীত

শীতের ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া সকলের উপভোগ্য বিষয় হলেও বাইকারদের জন্য এই ঋতু যেন চ্যালেঞ্জের আরেক নাম। কুয়াশায় পিচ্ছিল সড়কে যেমন বাইক চালানো কষ্টকর, তেমনি শীতের সময় বিশেষ নজর দিতে হয় বাইকের যত্নেও। শীতের সময় সামান্য একটি ভুলে হয়তো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে প্রিয় মোটরসাইকেলটির।

চলুন তাহলে জেনে নেই শীতের সময় নিজের পছন্দের বাহনটির সুরক্ষায় কি কি পদক্ষেপ নেয়া অতীব জরুরি।

ব্যাটারি পরীক্ষা করা: শীতের ঠান্ডা আবহাওয়াতে বাইকের ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমে যায়। বিশেষ করে সারা রাত বাইক বন্ধ থাকার পর সকালের দিকে স্টার্ট দিতে গেলেই দেখা যায় বিড়ম্বনা। অনেক সময় সকালে সেলফ স্টার্ট দিলে ব্যাটারি সাথে সাথে ডাউনও হয়ে যায়।

তাই শীতের শুরুতেই শখের বাইকটির ব্যাটারি লেভেলটি পরীক্ষা করে নিন। লিড অ্যাসিড ব্যাটারি হলে ওয়াটার লেভেল পরীক্ষা করুন। কমে গেলে টপ আপ করুন। চার্জ কমে গেলে চার্জ দিন। অনেক সময় ব্যাটারির অ্যাসিড ব্যাটারি কানেক্টরে জমা হয়। ফলে ব্যাটারি থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পায় না বাইকের ইঞ্জিন। এই সমস্যা এড়াতে নিয়মিত ব্যাটারির কানেক্টর পরষ্কার রাখুন।

স্টার্ট দেয়ার সময় কিকার ব্যবহার করা: বর্তমানে নতুন যেসব বাইক আসছে সেগুলোর বেশিরভাগেরই রাখা হয়নি কোনো কিকার। যে কারণে শীতের সময়টা সেসব বাইকারদের জন্য আলাদা করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘক্ষণ বাইক অফ থাকলে সেটি প্রথমবার স্টার্ট দেয়ার সময় অবশ্যই কিকার ব্যবহার করবেন যাদের বাইকে কিকার রয়েছে। আর যাদের বাইকে নেই তাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি শীতের আগেই ব্যাটারির বাড়তি যত্ন নিশ্চিত করা। আর বাইক স্টার্ট দিয়েই সাথে সাথে পথচলা শুরু করবেন না। বাইক স্টার্ট দিয়ে দুই তিন মিনিট আইডল অবস্থায় রেখে ইঞ্জিন গরম করে এরপর চালানো শুরু করা উত্তম।

এয়ার ফিল্টার ও স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার রাখুন: শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে বিধায় ধুলাবালি বেড়ে যায়। আর এই ধুলাবালি বাইকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ক্ষতি এড়াতে সপ্তাহে অন্তত একবার করে স্পার্ক প্লাগ ও মাসে একবার এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে বদলে ফেলুন।

টায়ার গ্রিপ ও প্রেশার চেক করুন: শীতকালে রাস্তা কুয়াশার কারণে পিচ্ছিল থাকে সকালের দিকে ও রাতে। যে কারণে আপনার বাইকের চাকায় যথাযথ গ্রিপ আছে কি না আর টায়ার প্রেশার পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে কি না সেটি নিয়মিত নজরে রাখুন।

ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন: শীতের সময় ইঞ্জিন ওয়েল ঘন হয়ে যেতে পারে। আর এটি প্রভাব ফেলতে পারে ইঞ্জিনে। যে কারণে শীতের সময় সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করা অত্যাবশ্যকীয়। এই সময় সেমি সিনথেটিক কিংবা ফুল সিনথেটিক ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করা উত্তম। কেননা এই দুই ধরণের ইঞ্জিন ওয়েল কম তাপমাত্রাতেও তরল থাকে। মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল ঘন হয়ে যেতে পারে শীতের সময়। তাই শীতের সময় বিড়ম্বনা এড়াতে সঠিক গ্রেডের সেমি বা ফুল সিনিথেটিক ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

চেইন লুবিং: শীতকালে বাইকের চেইন অন্য সময়ের চেয়ে একটু ঘন ঘন লুবিং করে নিবেন। সম্ভব হলে ২০০ কিলো পর পর চেইনে লুব্রিকেন্ট দিবেন। কেননা শীতকালে ধুলাবালি বেড়ে যাওয়ায় সেটি চেইনেও আটকে যায়। ফলে চেইন জ্যাম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জন্ম নেয়। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নিয়ম করে বাইকের চেইন পরিষ্কার করে লুবিং করতে হবে।

গ্রিজের পরিবর্তে ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার: ক্লাচ ক্যাবল, চেইন, ব্রেক ও গিয়ার লিভার এসব পার্টসে সাধারণত গ্রিজ দিয়ে লুবিং করা হয়ে থাকে। শীতকালে এই গ্রিজের পরিবর্তে পুরাতন ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করাটা সর্বোত্তম। কেননা শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় গ্রিজ জমে যেতে পারে। আর এমনটা হলে সেই পার্টসের কার্যক্ষমতা কমে যাবে স্বাভাবিকভাবেই। আর সে কারণেই গ্রিজের পরিবর্তে ইঞ্জিন ওয়েল দিয়ে লুবিং করলে আউটপুট ভাল পাওয়া যাবে।

কার্বুরেটর বা ফুয়েল ইনজেকশন পরিষ্কার রাখা: শীতে কার্বুরেটর বা ফুয়েল ইনজেকশনে জমে থাকা ময়লা এবং অবশিষ্টাংশ মাইলেজ কমাতে পারে। নিয়মিত এগুলো পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে একজন মেকানিকের সাহায্য নিন।

সার্ভিসিং ও টিউনিং করানো: বাইকের নিয়মিত সার্ভিসিং এবং টিউনিং মাইলেজ বাড়াতে সহায়ক। শীত শুরু হওয়ার আগে একটি সম্পূর্ণ সার্ভিস করিয়ে নিন এবং ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সঠিক অবস্থায় আছে কিনা নিশ্চিত করুন।

এসব বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখলেই শীতকালে আপনার প্রিয় বাহনটি থাকবে অনেকটাই নিরাপদ।