বার্সার বিশেষ দিনে নিজের ‘বিশেষ দিন’ কোনটি, জানালেন মেসি
ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ১২৫তম জন্মদিন আজ। বিশেষ এই দিনে ক্লাবটির আয়োজনে যে সামিল হতে পারবেন না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। তবে এই দিনে বার্সাকে নিয়ে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন তিনি।
কাতালুনিয়ার সরকারি টেলিভিশন টিভি৩-কে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে নিজের বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে আজকের ‘মেসি’ হয়ে ওঠার পেছনে ক্লাব বার্সেলোনা ও শহরটির অবদানের কথা জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন মায়েস্ত্রো।
কিশোর বয়সে ২০০০ সালে আর্জেন্টিনা ছেড়ে বার্সেলোনায় আসেন মেসি। এরপর যোগ দেন ক্লাবটির অ্যাকাডেমি লা মাসিয়ায়। তারপর মূল দলে অভিষেকের পর থেকে শুধু ক্লাবটিরই নয়, গোটা ফুটবল ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেন তিনি।
বার্সেলোনার ১২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বলতে গিয়ে শুরুতেই ক্লাবকে অভিনন্দন জানান তিনি।
বলেন ‘বার্সেলোনার অংশ হওয়া, ক্লাবটির ভক্ত হতে পারা আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের। আমি ভাগ্যবান যে ঈশ্বর আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং জীবনের বেশিরভাগটাই আমি অসাধারণ এই ক্লাবটিতে কাটাতে পেরেছি।’
বিশেষ দিনে বার্সেলোনাকে মিস করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি বিশেষ ক্লাব, বাকি সব ক্লাবের চেয়ে আলাদা।… ক্লাব, শহর, সেখানকার মানুষ, সবার ভালোবাসা- সবকিছুই আমি মিস করি।’
স্পেনে বসবাস করার সময় ১৮৯৯ সালে সুইস ব্যবসায়ী জোয়ান গাম্পার বার্সেলোনা শহরের ফুটবলে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ক্লাব গঠনের আহ্বান জানান। এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে অভাবনীয় সাড়া পান তিনি।
এরপর ওই বছরের ২৯ নভেম্বর ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা প্রতিষ্ঠা করেন গাম্পার। তারপর ফুটবল ছাপিয়ে এই ক্লাবটিই হয়ে ওঠে কাতালানদের জাতীয়তাবাদের প্রতীক। কাতালুনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা এই ক্লাবটি তাই সমর্থকদের কাছে শুধু ফুটবল ক্লাব নয়, তার চেয়ে বেশিকিছুই।
প্রতিষ্ঠার ১২৫ বছরে ২৬টি লা লিগা, সর্বোচ্চ ৩১টি কোপা দেল রে, ১৪টি স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপসহ অসংখ্য শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা। আর ২০০৪ সালের ১৬ অক্টোবর মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সার মূল দলে অভিষেকের পর থেকে এসব অর্জনের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ নায়ক বনে যান মেসি।
অভিষেকের ক্ষণটিই তাই মেসির ক্যারিয়ারের বিশেষ মুহূর্ত।
‘বিশেষ মুহূর্ত? যেদিন (বার্সার জার্সিতে) আমার অভিষেক হলো।’
‘শুধু এই স্বপ্নপূরণের জন্য আমার কম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি। নিজের দেশ ছাড়া, জীবন পুরোপুরি পাল্টে ফেলা- এসব তো ওই একটি স্বপ্ন পূরণের জন্যই করা।’
২০২১ সালে তিক্ততা নিয়ে বার্সেলোনা ছাড়ার আগে ক্লাবটির জার্সিতে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল করেন মেসি, ক্লাবের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। এছাড়া ১০টি লা লিগা, ৭টি কোপা দেল রে ও ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ মোট ৩৫টি শিরোপা জিতে নিজের বার্সেলোনা অধ্যায়কে ক্লাবের ইতিহাসেরই সফলতম অধ্যায় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন তিনি।
বার্সেলোনা ছাড়ার পর আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২২ সালে পেয়েছেন চির আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ। এই বিশ্বকাপ তাকে সব তুলনা, প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠিয়ে ইতিহাসের সেরা ফুটবলারের তকমা এনে দিলেও বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত তার জীবনের সেরা মূহূর্ত নয়।
তার ভাষ্যে, ‘যেদিন আমার মূল দলে অভিষেক হলো, সেটিই আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
জীবনের সেরা বছর তিনি কাটিয়েছেন পেপ গার্দিওলার অধীনেই। ক্লাবের সাবেক এই অধিনায়কের অধীনে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সফল অধ্যায় কাটায় বার্সেলোনা। এমনকি ওই সময়ের বার্সেলোনা দলও ফুটবলের ইতিহাসের সেরা দলগুলোর একটি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।