‘ভাগ্যের ছোঁয়ায়’ এগিয়ে যাওয়ার রাতে বার্সেলোনা শিবিরে দুঃসংবাদ


বলের দখলে আধিপত্য বিস্তার করলেও ধারহীন আক্রমণেরে কারণে ম্যাচজুড়ে ভুগতে হলো বার্সেলোনাকে। তবে ভাগ্যের ছোঁয়ায় প্রতিপক্ষের দেওয়া আত্মঘাতী গোল ও তাদের বেশ কয়েকটি আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়ায় তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে কাতালানরা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে মাদ্রিদের বুতার্কে স্টেডিয়ামে লা লিগার ৩১তম রাউন্ডের ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। এতে করে ২২ জয় ও চার ড্রয়ে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে সাত পয়েন্টে এগিয়ে গেছে হান্সি ফ্লিকের দল।
এক ম্যাচ কম খেলে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে রয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ।
লিগে প্রথম দেখায় ঘরের মাঠে লেগানেসের বিপক্ষে একই ব্যবধানে হারে বার্সেলোনা। ফিরতি লেগে এসে তার প্রতিশোধ নিল তারা।
অবশ্য ঠিক প্রতিশোধ বলা চলে না। কারণ মাঠে প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘোরালেও তেমনভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারেনি দলটি। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি দারুণ আক্রমণ শানিয়েছিল লেগানেস, তা থেকে গোলও আদায় করতে পারত দলটি। মাঝে একবার বল জালেও জড়িয়েছিল তারা, কিন্তু অফসাইডে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। শেষের দিকে সময়ক্ষেপণ করে ওই এক গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ার জন্য শিষ্যদের ইঙ্গিত করতে দেখা যায় ফ্লিককে। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই।
হারলেও ম্যাচ শেষে তাই কিছুটা তৃপ্তি ঝরেছে লেগানেস কোচ বোর্হা হিমেনেসের কণ্ঠেও, “আজ আমরা বার্সেলোনার মতো একটি দলকে সময় নষ্ট করতে এবং শেষের বাঁশি চাইতে বাধ্য করেছি।”
এই জয়ে শীর্ষস্থান মজবুত করে লিগ শিরোপা জয়ের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল কাতালান জায়ান্টরা। তবে পূর্ণ তিন পয়েন্ট অর্জনের রাতের স্বস্তিতে নেই দলটি। চোট পেয়ে প্রথমার্ধে বিরতির আগে মাঠ ছাড়তে হয় বার্সার তরুণ ফুলব্যাক আলেহান্দ্রো বালদেকে।
ম্যাচ শেষে কাতালুনিয়া রেডিওর ক্রীড়া সাংবাদিক হাভি মিগেল জানিয়েছেন, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়েছেন বালদে। ফলে অন্তত তিন সপ্তাহের জন্য ছিটকে যেতে পারেন তিনি।
তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরই তার কত দিনের জন্য মাঠের বাইরে থাকা লাগবে, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ বিষয়ে মিগেল জানান, রবিবার বালদের শারীরিক পরীক্ষা হবে। তারপর ক্লাবের পক্ষ থেকে তার চোটের হালনাগাদ তথ্য জানানো হবে।
এছাড়া, স্পোর্তের কাতালুনিয়াভিত্তিক সাংবাদিক টনি হুয়ানমার্তিও বালদের হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এই ধরনের চোট থেকে সেরে উঠতে অন্তত দুই সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হয়।
এদিকে এই ম্যাচে অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বার্সার অপর দুই ডিফেন্ডার রোনালদ আরাউহো ও এরিক গার্সিয়াকেও। তবে তাদের বিষয়গুলো গুরুতর নয় বলে জানান মিগেল।
আগামী মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ফিরতি লেগের ম্যাচে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবে বার্সেলোনা। প্রথম লেগে ৪-০ গোলে জিতে এগিয়ে রয়েছে দলটি। এরপর আগামী ১৯ ও ২২ এপ্রিল লা লিগায় যথাক্রমে সেল্তা ভিগো ও মায়োর্কার বিপক্ষে মাঠে নামবেন ফ্লিকের শিষ্যরা। তারপর ২৬ এপ্রিল কোপা দেল রের ফাইনাল খেলতে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবেন তারা।
ডর্টমুন্ড ম্যাচ থেকেই আরাউহো ও গার্সিয়াকে পেলেও উল্লিখিত ম্যাচগুলোতে বালদেকে হারানোর জোর সম্ভাবনা রয়েছে বার্সেলোনার। দুর্দান্ত গতি, ড্রিবলিং ও দারুণ সব ক্রস দিয়ে বার্সেলোনার একাদশে ইতোমধ্যে নিজের অবস্থান পাকা করে নিয়েছেন ২১ বছর বয়সী এই লেফট উইংব্যাক। সতীর্থদের সঙ্গে অসাধারণ বোঝাপড়াও তৈরি হয়েছে তার।
এদিকে মৌসুমের শেষভাগে এসে একটু একটু করে কোয়াড্রাপল (সম্ভাব্য চারটি শিরোপার সবগুলো) জয়ের দিকে এগোচ্ছে কাতালান দলটি। ইতোমধ্যে স্প্যানিশ সুপার কাপ পকেটে পুরেছে তারা। উঠেছে কোপা দেল রের ফাইনালে। লা লিগায়ও পাচ্ছে শিরোপা জয়ের সুবাস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠা তাদের জন্য কেবল সময়ের ব্যাপার। এমন সময়ে বালদের এই চোট নিঃসন্দেহে কোচ ফ্লিকের কপালে ফেলেছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
তেমন বিশ্রাম ছাড়াই টানা ম্যাচ খেলে যাওয়া বার্সেলোনা শিবিরে বালদের না থাকা সত্যিকার অর্থেই দুশ্চিন্তার বিষয়। বিকল্প খেলোয়াড় জেরার্দ মার্তিন মাঝেমধ্যে খেলে থাকলেও সতীর্থের মতো অতটা পটু নন তিনি। ফলে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিয়ে লক্ষ্য পূরণ করেন হান্সি ফ্লিক, তা-ই এখন দেখার বিষয়।