জামায়াত, চরমোনাই পীর ও এনসিপির কঠোর সমালোচনা করলেন মির্জা আব্বাস

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম
জামায়াত, চরমোনাই পীর ও এনসিপির কঠোর সমালোচনা করলেন মির্জা আব্বাস

পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেছেন, ‘এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মাহিনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ছবি রয়েছে, বিএনপির সঙ্গে নয়।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে মির্জা আব্বাস এ কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচার ও অপপ্রচার এবং মিটফোর্ডে পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে দলটির নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন, যা কাকরাইল, মৎস্য ভবন হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।

মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে বাস্তবে ও সত্যিকার অর্থে বিএনপির কোনো সম্পর্কই নেই। আমার কাছে একটা ছবি আছে, আমি দেখাতে পারব না এ মুহূর্তে। এই ঘটনায় মাহিন নামের যে ছেলেটি ধরা পড়েছে, ওই ছেলের সঙ্গে এনসিপির নেতৃবৃন্দের ছবি রয়েছে। আমি দেখাতে পারি, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। এই ছেলের সঙ্গে ওদের (এনসিপি) ছবি রয়েছে। কিন্তু বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ভিডিও পরিকল্পিতভাবে বানানো বলে মনে হচ্ছে। তা সামনে এনে বিএনপিকে ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে গিয়ে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা ধরা পড়ে গেছে। এনসিপির নেতাদের সঙ্গে মাহিনের ছবি স্পষ্ট প্রমাণ করে হত্যাকাণ্ডের দায় বিএনপির ঘাড়ে চাপানোর ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগের দিকে। যত ষড়যন্ত্রই করা হোক, বিএনপিকে জনগণের মন থেকে সরানো যাবে না।’

বাংলাদেশই বিএনপির স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটি দল স্লোগান দিচ্ছে—আওয়ামী লীগ গেছে যেই পথে, বিএনপি যাবে সেই পথে। অত সহজ নয়। আমাদের কোথাও যাওয়ার রাস্তা নাই। এই বাংলাদেশ আমাদের স্থায়ী ঠিকানা।’

দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশবাসীকে অনুরোধ জানাব, আপনারা যারা মিটফোর্ডের ছবি দেখেছেন, চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। বিএনপিকে অযথা কেউ কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করবেন না। বিএনপিই দেশকে স্বাধীন করেছে, বিএনপিই দেশকে স্বাধীন রাখবে।’

চরমোনাই পীরের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখলাম মানুষ বলছে, চরমোনাই পীর সাহেবের নাকি কোনো ইলম নেই। কোরআন, হাদিস পড়ে নাই। অকাট মূর্খ একটা লোক। কলিজায় জোর থাকলে এই প্রশ্নের জবাব দেবেন। আমরাও জানতে চাই, আপনি ধর্মীয়ভাবে কোথা থেকে পাস করেছেন? এই লোকটি ও তাঁর দলবল এখন বিএনপিকে সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠিকই সহ্য করেছেন।’

জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আরেকটি দল যারা লম্বা লম্বা কথা বলা ছাড়া আর সুকৌশলে হাদিয়া নেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নাই। টাকা নিয়েছেন বসুন্ধরা ও সিটি গ্রুপের কাছ থেকে। সমস্ত কিছুর হিসাব হবে। নিজের পায়ে জোর নেই। এরশাদের সময় এরশাদের কাঁধে ভর করেন, আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করেন। আর এখন লম্বা লম্বা কথা বলেন। এখন বিএনপি ওনাদের একমাত্র মাথাব্যথা। বিএনপিকে যদি শেষ করে দেওয়া যায়, তাহলে ওনারা একক রাজত্ব করতে পারবেন।’

তারেক রহমানকে নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন এক–এগারোর সময় তারেক রহমানের কোমর কেন ভেঙে দেওয়া হয়েছিল? আমরা বলতে চাই, তারেক রহমানের কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছিল দেশের পক্ষে থাকার জন্য। অনেকে বলছেন, তারেক রহমান দেশে আসেন না কেন? উনি সময়মতো দেশে আসবেন। কেউ আটকে রাখতে পারবে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তারেক রহমানের জীবন এখন সত্যিই হুমকির মুখে। তবে তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। তারেক রহমান সম্পর্কে যদি কেউ অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন, আমরাও তাকে ছাড়ব না।’

বিএনপি ছাড়া দেশ কারও হাতে নিরাপদ নয় দাবি করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশ কারও হাতে নিরাপদ নয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। তখন কোথায় ছিল চরমোনাই, জামায়াতে ইসলামী। এখন লম্বা লম্বা কথা বলছেন। জিয়াউর রহমান দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন। আর খালেদা জিয়া দিয়েছেন সংসদীয় গণতন্ত্র।’

নেতা–কর্মীদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনাদের আশপাশে কোনো চোর–ডাকাত থাকলে চিহ্নিত করুন। বিভিন্ন সময়ে আমাদের দলের নেতাদের কাঁধে ভর করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দলে ভেড়ার চেষ্টা করছে। তারা যেকোনো সময় অপকর্ম করবে। এটি থেকে সাবধান থাকতে হবে।’