পদত্যাগের দাবিতে অবরুদ্ধ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৪২ পিএম
পদত্যাগের দাবিতে অবরুদ্ধ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ

অধ্যক্ষের পদত্যাগের একদফা দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। টানা ৭ ঘণ্টা ধরে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজের ধর্মপুর ডিগ্রি ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। রাত পৌনে ১০টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঞা অবরুদ্ধ রয়েছেন।

কলেজ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে ক্যাম্পাসের হৃদয় বাংলাদেশ চত্ত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি জানিয়ে কলেজ প্রশাসনেকে দুই কার্যদিবসের আল্টিমেটাম দেন।

সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ৯ দফা বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঞার কাছে বিষয়টি জানতে চান। এ সময় তিনি দাবি বাস্তাবায়নে আরও সময় চান শিক্ষার্থীদের কাছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন। এক পর্যায়ে ছাত্ররা স্লোগান দেওয়া শুরু করলে অধ্যক্ষ বিকেল ৩টার দিকে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রবেশ করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘এক দফা এক দাবি, অধ্যক্ষের পদত্যাগ চাই’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারাও মসজিদে প্রবেশ করেন। এরপর রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঞা মসজিদেই অবরুদ্ধ রয়েছেন। খবর পেয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ক্যাম্পাসে যায়।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মফিদুল হাসান পল্লব বলেন, কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারি না। অধ্যক্ষ স্যার দরজায় তালা দেন। প্রশাসনের কাছে যাওয়ার আগে কাউকে নিয়ে যেতে হয়। এটা কেমন গণতান্ত্রিক পরিবেশ?

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ফয়জুন্নেসা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। হলের ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কোনো শিক্ষক থাকেন এটা প্রথম শুনলাম! মেয়েরা কথা বললে তাদেরকে শোকজ, অভিভাবক ডাকানো, বৈঠকের ভয় দেখানো হয়। এছাড়া বৃহস্পতিবার কলেজ প্রশাসনকে দেওয়া নয় দফার একটিও মানা হয়নি। বরং আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

আনোয়ার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে কলেজের ২০২২-২৩ শিক্ষা বর্ষের ডিগ্রি ছাত্র তামিমের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গুরুতর হামলা করেন। অথচ হামলার এক বছর পূর্ণ হলেও প্রশাসন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। এমনকি জুলাই গেজেটে তানিমকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভূমিক রাখেনি।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, হলে পানি নেই। কথা বললেও সমাধান নেই। নয় দফা দাবি জানিয়েও সমাধান নেই। তাই আমরা তাকে চাইনা। তিনি এক বছরেও তামিম নির্যাতনের বিচার করতে পারেননি। যারা নির্যাতন করেছে তাদের শাস্তি দিতে পারেনি। অথচ আমাদের বহিষ্কার করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের দেওয়া ৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, কলেজে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন, ডিগ্রি শাখার জন্য পৃথক ও আধুনিক ক্যাম্পাস স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার, বহিরাগত, মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস ও মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু, আবাসিক হল ও আশপাশের হোটেল এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানি, আধুনিক ওয়াশরুম এবং যুগোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আলাদা ফান্ড গঠন, কলেজের সব ধরনের আয়-ব্যয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।