নারীর প্রতি সহিংসতা মানবাধিকারের লঙ্ঘন: উপদেষ্টা শারমীন

Bangla Post Desk
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২৪ পিএম
নারীর প্রতি সহিংসতা মানবাধিকারের লঙ্ঘন: উপদেষ্টা শারমীন
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ছবি- সংগৃহীত

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তিনি বলেন, নারী ও কন্যা শিশুর উপর সহিংসতা প্রতিরোধে নারী বিদ্বেষী প্রচারণাকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকায় গুলশানস্থ লেকশোর গ্রান্ডে বিশ্বব্যাপী জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা বিরোধী ১৬ দিনের ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, নারীদের শিক্ষা অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সত্ত্বেও দেশে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা এখনো ক্রমবর্ধমান। তিনি বলেন , মানুষের মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব থাকায় সমাজে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিসংখ্যান লক্ষণীয়।

উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরাচারী মনোভাব দূর করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন মুক্ত বাংলাদেশ  পরিবর্তন তখনই সম্ভব যখন সমাজের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা ও সম্মানের পরিবেশ নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের পাশাপাশি সামাজিক সম্মিলিত প্রায়শেই সহিংসতার অবসানের ভূমিকা রাখতে পারে।

উপদেষ্টা বলেন, নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা ঘটলে মন্ত্রণালয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিকটিমের কাছে  পৌঁছে যাবে। আমর মন্ত্রণালয় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত সেবা দানের লক্ষ্যে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।

তিনি এনজিওগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এনজিওগুলোর নেটওয়ার্ক তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করা গেলে আমরা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সহায়তা পৌঁছাতে পারবো। 

সাইবার সহিংসতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ডিজিটাল স্পেসেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। কারণ সেখানেও সহিংসতা ব্যাপক। তরুণ-তরুণী উভয়ের মধ্যেই একটি পশ্চাৎপদতার ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে- এটি ভেঙে নতুন সচেতনতা, সমতা ও সম্মানের ন্যারেটিভ গড়ে তুলতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নির্বাচনের আগে জানতে হবে নারী অধিকার, নিরাপত্তা ও সমতা বিষয়ে তাদের অবস্থান কী ভাবছে। কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া বড় কোনো রূপান্তর সম্ভব নয়। আমি মনে করি তাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে । এদেশের পরিবর্তনে তরুণদের যে জাগরণ সৃষ্টি করেছে তাদের কাজে লাগাতে হবে ।  বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তিবিদ্যা তরুণদের কাজে লাগাতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ এর (সিপিডি) ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আয়বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের নারীরা কোথাও আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক নিরাপদ অনুভব করছেন না। পরিবারের মধ্যেও অনেক সময় নারীরা অনিরাপদ বোধ করছেন। নারী ওর শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি বলেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সমষ্টিগত পদক্ষেপ ও শক্তিশালী অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। আমরা বাংলাদেশ সরকার, সিভিল সোসাইটি ও যুবসমাজের সঙ্গে মিলিতভাব মর্যাদা, সমতা এবং সবার জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে কাজ করে যাবো।

ইউএন উইমেন, বাংলাদেশ- এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, আমাদের অবশ্যই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে বিনিয়োগ করতে হবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলতে থাকা সামাজিকীকরণের ধরণ ও নিয়ম পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যেসব উদাহরণ নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করি, সেগুলোই তাদের জেন্ডার, সম্মান এবং মানবাধিকার সম্পর্কে চিন্তাভাবনাকে গঠন করে।

কানাডিয়ান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (ডেভেলপমেন্ট–জেন্ডার ইকুয়ালিটি) স্টেফানি সেন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড বলেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা শুধু নারী বা কন্যাশিশুর সমস্যা নয়; পুরুষ ও ছেলেদেরও সমাধানের অংশ হতে হবে। আমাদের প্রতিশ্রুতি ১৬ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, বরং সারা বছর, প্রতিদিন এই ইস্যুকে মোকাবিলা করতে হবে।সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন এবং ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন প্রধান ইভা স্মেডবার্গ বলেন, আজ আমরা দেখছি প্রযুক্তিনির্ভর নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটি দ্রুত বর্ধনশীল নির্যাতনের এক রূপে পরিণত হয়েছে। আমাদের দৃঢ়ভাবে একসাথে দাঁড়াতে হবে, কারণ নারীর প্রতি কোনো ধরনের সহিংসতাই কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।

ব্রিটিশ হাইকমিশন ঢাকার ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মি. মার্টিন ডসন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনকে নারীর সহিংসতা রোধে গৃহীত কার্যক্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান।নারী-পুরুষ সমতায় অগ্রগতির পরও বাংলাদেশে অনলাইন ও অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন বক্তারা।

উল্লেখ্য ২০০০ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৫ নভেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনের প্রচারাভিযান চালানোর কথা বলে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে এবার সাইবার সহিংসতাসহ নারী ও কন্যার প্রতি সকল প্রকার নির্যাতনকে না বলুন, নারী ও কন্যার অগ্রসরমানতা নিশ্চিত করুন স্লোগান নিয়ে ১৬ দিনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে।