আমার দুর্নীতি থাকলে প্রকাশ করুন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নিজের এবং পরিবারের কারো দুর্নীতি থাকলে তা প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা সভা শেষে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান। একই সঙ্গে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বেও রয়েছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার নিয়োগ চলছে জানিয়ে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, এর ভিতরে কোনো ধরনের যদি দুর্নীতির কোনো গন্ধ পান আমাদের জানাবেন। দুর্নীতির ক্ষেত্রে আপনার সত্যি কথাটা বলবেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'এখানে আমার আত্মীয়স্বজন বা আমার বন্ধুবান্ধব যদি কোথাও জড়িত থাকে, অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আমার ক্ষেত্রে যদি কোন দুর্নীতি থাকতো অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন। যে এটার ক্ষেত্রে স্যার এই এখানে দুর্নীতি হইছে। এখানে আপনার মামাতো ভাই ছিল, এখানে আপনার ভাইছিল। এখানে আপনার ছেলে ছিল। অবশ্যই প্রকাশ করবেন। তা না হলে এই দেশে কিন্তু দুর্নীতি কমবে না। আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। আমরা সমাজ থেকে কিন্তু দুর্নীতি কমাতে পারিনি। সত্যি কথা যেটা।'
উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সার মজুদ আছে। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ বিভিন্ন জায়গায় সারের দাম বাড়ায়। এজন্য আমি অলরেডি ইন্সট্রাকশন দিয়েছি। আমাদের অফিসাররা এটার ক্ষেত্রে পুরো নজরদারি করবে। যে অফিসার নজরদারি করতে ব্যর্থ হবে তার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশন (ব্যবস্থা) নিব। কৃষক যেন ন্যায্যমূল্যে সার পায়, এটার আমরা ব্যবস্থা করব। কোনো অবস্থায় আমাদের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এক পয়সাও যেন বেশি নিতে না পারে।'
তিনি বলেন, 'আর আপনারা অনেকে জানেন যে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের দামের সঙ্গে সারের দামের কোন সম্পর্ক নাই। সারের দাম আগে যা ছিল এখনো তা আছে এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে। আমরা অন্তত যতদিন আছি। সারের দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।'
সারের ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সারের ডিলারদের ক্ষেত্রে যেসব জায়গায় খালি আছে, ওইসব জায়গাগুলো আপাতত নিয়োগ দিব। পুরানো যারা আছে তারা করতে থাকবে যদি তারা ওরকম কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত বা অবৈধভাবে কোন কিছু না করে থাকে। তবে তা না হলে কারো সারের ডিলারশিপ আমরা বাতিল করতেছি না বাট যেসব জায়গায় খালি আছে ওইগুলি আমরা দিয়ে দিব।'
উপদেষ্টা বলেন, 'পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ওরকম কোনো সংকট নেই। আপনারা দেখছেন বাজারে কিন্তু পেঁয়াজের দাম ১২০/১৩০ টাকা হয়ে গিয়েছিল, এটা এখন কমে কিন্তু ৯৫-১০০ টাকার ভিতরে চলে আসছে। আমাদের কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী তারা পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমাদের ওপরে অনেক চাপ দিয়েছে এবং তারা বিভিন্ন কোর্টেও গেছে যে, যেন আমরা পেঁয়াজ আমদানি করি। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষকদের কথা চিন্তা করে আমরা কিন্তু পেঁয়াজ আমদানি করতে দেইনি। যেহেতু আমাদের এয়ারফ্লো একটা মেশিন আমরা দিছি। এজন্য কৃষকরা তাদের পিঁয়াজ রাখতে পারছে।'
'গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজটা কিন্তু বাজারে আসা শুরু হয়েছে। আবার মুড়ি কাটা পিঁয়াজও বাজারে আসা শুরু হয়ে গেছে। এজন্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা নাই।'
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'আপনারা জানেন কৃষকরা কিন্তু এবার আলুতে মাইর খেয়েছে। তারা কিন্তু ওরকম দাম পায়নি। এখন কিছুটা দাম বেড়েছে, তাও আমি বলব যে আরও একটু বাড়া দরকার কৃষকের জন্য। আমরা ভাবছিলাম যে কিছু আলু আবার নষ্ট হয়ে যায় কিনা। কোল্ড স্টোরগুলো ১৫ নভেম্বরের ভেতরে সাধারণত খালি করে ফেলে। এবার আমরা বলছি- না, ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের আলু রাখতে দিতে হবে।'
তিনি বলেন, আরেকটা জিনিস হল যে আমাদের যে আগাম যে আলুটা আসতো বৃষ্টির জন্য আগাম আলুটা আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এজন্য হয়তো পুরানো আলু পুরো ব্যবহার হয়ে যাবে। যদিও এইবার আলুতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য যারা এটার সাথে জড়িত, তারা সবাই লাভবান হয়েছে। খালি ক্ষতিগ্রস্তের ভিতরে হইছে কৃষকরা।
আমনের ফলন খুবই ভালো হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, প্রায় ৫০ শতাংশ আমন ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। প্রতিদিনই ধান কাটা হচ্ছে, এ হার বাড়ছে। তো যদি কোনো রকমের বড় ধরনের সমস্যা না হয় এবার আল্লাহ দিলে আমাদের আমনও বাম্পার হবে।
এখন সবজির দাম কমটির দিকে দাবি করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবার সবজি ভালো হয়েছে, কোনো রকম কোন সাইক্লোন-টাইক্লোন, কোনো সমস্যা না হলে সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
