চিটচিটে গ্যাসের চুলা ও চিমনি পরিষ্কার করবেন যেভাবে


বর্ষাকালে এমনিতেই সবকিছু কেমন স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। তার ওপর রান্নাঘরে ঢুকে তেল চিটিচিটে চুলা ও চিমনি দেখলে যেকোনো মানুষেরই বিরক্তি লাগে। শুধু বিরক্তি নয়, রান্নাঘর ঠিকমতো পরিষ্কার না থাকলে তেলাপোকা, পিঁপড়া ও অন্যান্য পোকামাকড় বাড়তে পারে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হয়।
তবে অনেকদিন পরপর পরিষ্কার করলে এসব জিনিসে এমনভাবে ময়লা জমে যায় যে, পরে ঠিকমতো পরিষ্কার হতে চায় না। তাই নিয়মিত এগুলোর পেছনে অল্প করে সময় দিলে আপনার রান্নাঘর সবসময় পরিষ্কার থাকবে এবং ডিপ ক্লিনিংয়ের সময় আপনার পরিশ্রমও কম হবে।
প্রতিদিন রান্নার সময় তেল, মসলা, খাবারের ছিটা ও ধোঁয়ার কারণে চুলা দ্রুত নোংরা হয়ে পড়ে। যদি নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয়, তবে এটি শুধু নোংরাই দেখায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে বার্নার আটকে যাওয়া বা গন্ধ ছড়ানোর মতো সমস্যাও তৈরি করে। কিন্তু কিচেন চিমনি চাইলেই প্রতিদিন পরিষ্কার করা যায় না। তাই মাসে অন্তত একবার কিচেন চিমনি পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে গ্যাসের চুলা ও কিচেন চিমনি পরিষ্কার করবেন –
গ্যাসের চুলা যেভাবে ডিপ ক্লিন করবেন
১. ম্যানুয়াল দেখে নিন
গ্যাস চুলা পরিষ্কার করার আগে প্রথম কাজ হলো এর ম্যানুয়ালটি দেখে নেওয়া। বিভিন্ন কোম্পানির চুলার কাঠামো এবং উপকরণ আলাদা হতে পারে। তাই আপনার ঘরের গ্যাস চুলার সঙ্গে মানানসই ক্লিনার ও পরিষ্কার করার পদ্ধতি বেছে নেওয়ার জন্য ম্যানুয়াল অথবা যেই কোম্পানির চুলা কিনেছেন, সেই কোম্পানির ওয়েবসাইটে নির্দেশিকা পড়ে নিন। এতে চুলার কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
চিটচিটে গ্যাসের চুলা ও চিমনি পরিষ্কার করবেন যেভাবে
২. গ্রেট, নব ও বার্নার ক্যাপ খুলে ফেলুন
গ্যাস চুলার সব অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হলে প্রথমেই এর উপরের অংশ, যেমন– গ্রেট (লোহার জালি), নব (ঘুরানোর বোতাম), ও বার্নার ক্যাপ খুলে ফেলুন। যদি কোনো অংশ শক্তভাবে আটকে থাকে, তবে একটি প্লাস্টিকের ছুরি দিয়ে সতর্কভাবে তুলে নিন এবং সব অংশ খুলে আলাদা করে রাখুন।
৩. বেকিং সোডা দিয়ে প্রাকৃতিক ক্লিনিং পেস্ট তৈরি করুন
বেকিং সোডা এবং অল্প পানি মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই পেস্ট চুলার সব অংশে, যেমন- বার্নার, গ্রেট, নব, ও চুলার উপরিভাগে ভালোভাবে লাগিয়ে দিন। ১০ মিনিট মতো রেখে একটি ভেজা কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন। পরবর্তীতে হালকা গরম পানি দিয়ে মুছে ফেলুন। সাবান পানি দিয়েও মুছে নিতে পারেন।
৪. চুলার ফাঁকফোকর ও উপরের অংশ পরিষ্কার করুন
চুলার উপরিভাগের সঙ্গে ছোট ছোট কোণাগুলোর মধ্যেও ময়লা জমে থাকে। এগুলো পরিষ্কার করতে প্রথমে একটি ভেজা কাপড় দিয়ে গোটা চুলার ওপরের অংশ মুছে নিন। যেখানে শক্ত তেল বা দাগ জমে আছে, সেখানে নরম ব্রাশ বা পুরনো টুথব্রাশ ব্যবহার করুন। হালকা সাবান ও গরম পানি ব্যবহার করলে তেল সহজে উঠে আসবে। কটন সোয়াব ব্যবহার করে ফাঁকফোকরগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
৫. যদি গ্যাস ওভেন সংযুক্ত থাকে
যদি আপনার বাসায় চুলার সঙ্গে গ্যাস ওভেন থাকে, তবে সেটিও পরিষ্কার করা জরুরি। প্রথমে গ্যাস লাইন বন্ধ করুন বা প্লাগ খুলে নিন। ওভেনের ভেতরের র্যাক ও ট্রেগুলো খুলে ফেলুন। যদি কোনো শুকিয়ে থাকা খাবারের দাগ থাকে, তা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
এরপর ওভেনের ভিতরে বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন এবং সাদা ভিনেগার স্প্রে করুন। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে একটি ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে মুছে ফেলুন। সবশেষে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভিতরের অংশ মুছে শুকিয়ে নিন এবং র্যাক ও ট্রে আবার বসিয়ে দিন।
যেভাবে কিচেন চিমনি পরিষ্কার করবেন –
১. চিমনির প্লাগ খুলে রাখুন
প্রথমেই চিমনিটি আনপ্লাগ করুন এবং নিশ্চিত করুন চিমনি চালু নেই। কোনো অবস্থাতেই বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকা অবস্থায় পরিষ্কার করতে যাবেন না। কাজের জায়গার নিচে পুরোনো তোয়ালে বা খবরের কাগজ বিছিয়ে দিন, এতে চুলা ময়লা হবেনা।
২. ফিল্টার ও গ্রিজ ট্র্যাপ খুলে ফেলুন
বেশিরভাগ ফিল্টার সহজেই স্লাইড করে খুলে নেওয়া যায়। যদি খুলতে না পারেন তাহলে যেই কোম্পানির চিমনি কিনেছেন, সেই কোম্পানির ওয়েবসাইটে নির্দেশিকা দেখে নিন। এগুলো তেলচিটচিটে হতে পারে, তাই ফিল্টার ও গ্রিজ ট্র্যাপ খোলার সময় অবশ্যই গ্লাভস্ পরে নিন।
৩. প্রাকৃতিক ডিগ্রিজার মিশ্রণে ফিল্টার ভিজিয়ে রাখুন
একটি বড় বালতিতে গরম পানি নিন। তাতে ভালো পরিমাণে হালকা ডিশওয়াশিং লিকুইড ও বেশি পরিমাণে বেকিং সোডা দিন। ফিল্টার খুব ময়লা হলে একটু ভিনেগারও দিন। তারপর ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
৪. আস্তে আস্তে স্ক্রাব করুন
ভিজিয়ে রাখার পর একটি ব্রাশ দিয়ে ফিল্টারটি আস্তে আস্তে ঘষে পরিষ্কার করুন। যেখানে বেশি ময়লা জমেছে, সেখানে একটু বেশি করে ঘষুন।
৫. চিমনির ভিতরের অংশ পরিষ্কার করুন
হালকা ডিগ্রিজার ও গরম পানি মিশিয়ে নিন। একটি মাইক্রোফাইবার কাপড় ভিজিয়ে চিমনির ভিতরের অংশ ও কিনারাগুলো মুছে নিন। যেখানে হাত পৌঁছায় না, সেখানে ব্রাশ ব্যবহার করুন।।
৬. সম্ভব হলে চিমনির পাইপ পরিষ্কার করুন
যদি পাইপ পর্যন্ত হাত পৌঁছানো যায়, তাহলে একটি নরম ব্রাশ বা হেপা ভ্যাকুয়াম দিয়ে রান্নার কালি ও গ্রিজ পরিষ্কার করুন। জোরে করে কিছু করবেন না – তা হলে যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৭. ফিল্টার শুকিয়ে পুনরায় বসান
ফিল্টারগুলো ভালোভাবে বাতাসে শুকিয়ে নিন। ভেজা অবস্থায় ফিল্টার চিমনিতে বসালে ফাঙ্গাস পড়তে পারে। তাই পরিষ্কার করা হয়ে গেলে হালকা করে মুছে ভালোভাবে বাতাসে শুকিয়ে নিন।
৮. পরিষ্কারের পরে যদি অস্বাভাবিক শব্দ হয়
পরিষ্কারের পর যদি ঝনঝন, ক্লিক ক্লিক শব্দ বা ফ্যান অস্বাভাবিক জোরে চলে, তাহলে বুঝে নিতে হবে ভিতরের কোনো অংশ ঢিলা হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে চিমনি বন্ধ রেখে পেশাদার কাওকে ডাকা সবচেয়ে নিরাপদ সিদ্ধান্ত।