গাজার জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ইসরায়েলের ৫০০ পাউন্ডের বোমা হামলা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
গাজার জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ইসরায়েলের ৫০০ পাউন্ডের বোমা হামলা

গাজা উপত্যকায় সাগরতীরের একটি জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ৫০০ পাউন্ড ওজনের একটি বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।

এ ধরনের শক্তিশালী ও নির্বিচার ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের ব্যবহারে একদিকে ব্যাপক বিস্ফোরণ তৈরি করতে পারে, অন্যদিকে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ধাতব টুকরা (শ্র্যাপনেল) ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইনের বরাতে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, নারী-শিশু ও বয়স্কহ বহু অরক্ষিত বেসামরিক মানুষের উপস্থিতি জেনেও এ ধরনের গোলাবারুদের ব্যবহার নিশ্চিতভাবেই বেআইনি ও এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

আল-বাকা নামের ওই ক্যাফের ধ্বংসস্তূপ থেকে বোমাটির খণ্ডাংশের ছবি তুলেছে গার্ডিয়ান। গোলাবারুদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকে-৮২ বোমা। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিভিন্ন সামরিক অভিযানে ৫০০ পাউন্ড ওজনের এই বোমাটি ব্যবহার করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিস্ফোরণে যে বড় ধরনের গর্ত তৈরি হয়েছে, সেটিই বলে দিচ্ছে এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকে-৮২ এর মতো শক্তিশালী বোমা।

কাফেতে হামলার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলিক সশস্ত্র বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘হামলার আগে বিমানের নজরদারির মাধ্যমে বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।’

চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেন, ‘ওই হামলায় ২৪ থেকে ৩৬ জনের মতো ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন। নিহতদের মধ্যে একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, একজন শিল্পী, ৩৫ বছর বয়সী এক গৃহিনী ও চার বছরের একটি শিশু রয়েছে।’

জেনেভা কনভেনশনভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, ‘বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি ঘটতে পারে বা সামরিক লক্ষ্যের চেয়েও অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো সামরিক হামলা করা নিষিদ্ধ।’

চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পারিবারিকভাবে পরিচালিত আল-বাকা ক্যাফে। বিনোদনের জন্য তরুণ ও গাজার পরিবারগুলোর মধ্যে এটির বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। কোমল পানীয়, চা ও বিস্কুটের জন্য লোকজন এই ক্যাফেতে ভিড় করতেন।

দোতলা ক্যাফের উপরের ডেক ছিল খোলা। নিচের তলায় সৈকত কিংবা সাগরের দিকে বড় জানালা ছিল। যে কারণে এটির ভেতরের চলাচল উপর থেকেই সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গ্যারি সিম্পসন বলেন, ‘কাদের নিশানা করা করা হামলা করা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী তা সুস্পষ্ট করে বলেনি। কিন্তু তারা বলছে যে বেসামরিক হতাহত কমিয়ে আনতে আকাশ থেকে নজরদারি করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, তারা জানত যে ওই ক্যাফেটিতে প্রচুর গ্রাহক ছিল।’

‘আইডিএফ অবশ্য জানত যে, আকাশ থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে এ ধরনের বড় বোমা হামলা চালালে বহু বেসামরিক লোকজন হতাহত হবেন। কাজেই এমন একটি ভিড়ে ঠাসা ক্যাফেতে এই হামলা ছিল অতিরিক্ত মাত্রায় ও নির্বিচার। যুদ্ধাপরাধ হিসেবে এই ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।’